BRAKING NEWS

প্রেসিডেন্ট যেই হোক, কাছাকাছিই থাকবে ভারত-আমেরিকা : আর কে সিনহা

এখন তো এটা একপ্রকার নিশ্চিত, ডোলান্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের দিন শেষ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া প্রায় অসম্ভব। নিজের শাসনকালে কমবেশি ভারতের বন্ধু হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। যদিও, মাঝেমধ্যেই ভারত সম্পর্কে আলটপকা মন্তব্য করতেন। করোনা-সঙ্কটকে তিনি ঠিকভাবে সামলাতে পারেননি। ট্রাম্পের জন্যই করোনা নিয়ে আমেরিকার ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মুখে মাস্ক দেখাই যেত না, এজন্য তিনি নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ট্রাম্পের কার্যকাল অত্যন্ত খারাপ ছিল, বিশ্লেষকদের তো এমনই অভিমত। আব্রাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, কেনেডি, বারাক ওবামার মতো ব্যক্তিত্ব যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ অলঙ্কৃত করেছেন, তেমনই ট্রাম্পের মতো একজন মানুষের প্রেসিডেন্ট হওয়া সাধারণ ব্যাপার মোটেও নয়।


একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, প্রেসিডেন্ট যেই হোক না কেন ভবিষ্যতেও ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক অটুট থাকবে। বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে দুই দেশ সর্বদা একে-অপরকে বিশ্বাস করেছে। কিছু কিছু বিষয়ে অবশ্য দুই দেশ ভিন্ন মত পোষণ করেছে। তবে, সত্যিকারের বন্ধুর মতো উভয়ই একে অপরের প্রতি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল।
এই পারস্পরিক বিশ্বাসের একটি প্রধান ভিত্তি হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের কার্যকলাপ এবং আচরণ।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কাছাকাছি এসেছে
ভারত ও আমেরিকা সম্প্রতি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেশি কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রমাণ করে দিয়েছে, দুই দেশের সম্পর্ক পাথরের মতো মজবুত। এই চুক্তি তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। ট্রাম্পের শাসনকালেই সামরিক সরঞ্জামের বিনিময় এবং সুরক্ষিত যোগাযোগের জন্য জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (২০০২), লজিস্টিক্স এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম এগ্রিমেট (২০১৬), কমিউনিকেশন কম্পেটিবিলিটি এন্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (২০১৮) স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। নয়া চুক্তি-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সামরিক উপগ্রহের মাধ্যমে সংবেদনশীল ভৌগলিক অঞ্চলগুলির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ডেটা দ্রুত ভারতকে দিতে সক্ষম হবে। এর ফলে ভারত মহাসাগরে চীনা যুদ্ধজাহাজের গতিবিধিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবে ভারত। যদি, আবার কখনও বালাকোটের মতো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয় তাহলে ভারত লক্ষ্য ঠিক করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য উপলব্ধ সামরিক ডেটা ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ এটাই স্পষ্ট ভবিষ্যতেও ভারতকে সহায়তা করতে আমেরিকা।

প্রবাসী ভারতীয়দের যোগদান
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্রে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকায় থাকলেও, ভারতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের। ভারতীয় প্রবাসীরা আমেরিকায় অনেক সফল স্টার্টআপ স্থাপন করেছেন। সেখানকার সমস্ত স্টার্টআপের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভারতীয়দেরই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যা বেশি। আমেরিকায় ভারতীয়রা নিজেদের শক্তিশালী, সম্মানিত বোধ করেন। আয়ের নিরিখে আমেরিকান মহিলাদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন ভারতীয় মহিলারা। তাঁদের গড় বার্ষিক আয় মার্কিন-বংশোদ্ভূত মায়েদের তুলনায় দ্বিগুণ। বার্ষিক গড়ে ৫১ হাজার ২০০ ডলার উপার্জন করেন তাঁরা। যদিও মা হয়েছেন এমন ভারতীয় মহিলাদের বার্ষিক গড় আয় ৪ হাজার ৫০০ ডলার। ভারতীয়দের জ্ঞান ও পরিশ্রমকে সম্মান করে আমেরিকা। এরইমধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয়লাভের খবরও অত্যন্ত খুশির। ৫০-এর দশকের শেষ দিকে দিল্লির লেডি ইরউইন কলেজ থেকে গ্রেজুয়েশন করেছিলেন কমলা হ্যারিসের মা শ্রীমতি শ্যামলা গোপালন। কমলা হ্যারিসের বংশধর তামিলনাড়ু থেকে। কমলা হ্যারিস ভারতীয়-আফ্রিকান বংশোদ্ভূত প্রথম, যিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ভারতীয়-আমেরিকান ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই ভারতীদের নিজেদের দিকে আনার চেষ্টা করেছে। যদিও, পরম্পরাগত দিক থেকে ভারতীয়-আমেরিকানরা ডেমোক্র্যাটদেরই সমর্থন করেন। এটাই নয়, আমেরিকার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির পক্ষ থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত চারজন নেতা আবারও নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের নাম-ডক্টর অ্যামি বেরা, রো খান্না, প্রমিলা জয়পাল এবং রাজা কৃষ্ণমূর্তি। এর আগে এই চারজন ছাড়াও কমলা হ্যারিস সিনেটের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, বাকি চারজন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভ সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন।

এটা মেনে চলুন ওয়াশিংটনে ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরবে না। ভারত ও আমেরিকা প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগত অংশীদার। কারণ একে ওপরের সম্পর্কের পরিপূরক। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো। সামুদ্রিক সুরক্ষা থেকে সন্ত্রাসবাদ সমস্ত ক্ষেত্রে একসঙ্গে এগিয়ে চলেছে ভারত ও আমেরিকা। ভারত এখন আমেরিকার সঙ্গে সমান-সমান সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। আমেরিকায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে ও স্বীকারও করেছে। নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য আমেরিকার যে কোনও মূল্যে ভারতের মতো একটি বৃহত এবং সমৃদ্ধ বাজারের প্রয়োজন। এজন্য ভারতকে কোনও ভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না আমেরিকা। আরও একটি বিষয় হল চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর আমেরিকার বিকল্প স্থান চাই, যেখানে আমেরিকার কোম্পানি সস্তা পণ্য তৈরি করতে পারে। বাইডেনের জয়ে পাকিস্তান খুশিতে রয়েছে। তবে, বাইডেনকে ইমরানের মতো বোকা বোঝার ভুল যেন না করে পাকিস্তান। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক তো দৃঢ় থাকবেই।

(লেখক প্রবীণ সম্পাদক, কলামিস্ট এবং প্রাক্তন সাংসদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *