BRAKING NEWS

কাছাড়ের হাওয়াইথাঙে আরেকটি এলপি স্কুলে বোমা হামলা, বিদেশি মদতে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা মিজোরামের, বলেছে ‘আমরা বাঙ্গালী’

শিলচর (অসম), ৭ নভেম্বর (হি.স.) : দক্ষিণ অসমের কাছাড় জেলার ৯৯০ নম্বর ধলাখাল এলপি স্কুলের পর এবার হাওয়াইথাং আপার পাইনম এলপি স্কুল বোমা বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিজো দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পর এসএসবি জওয়ান অকুস্থলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আধাসেনা এসএসবি নিয়োজিত হওয়ার পরও মিজো দুর্বৃত্তদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকার পিছনে বিদেশি মদত রয়েছে বলে মনে করছে ‘আমরা বাঙ্গালী’। দলের অসম প্রদেশ সচিব সাধন পুরকায়স্থ বলেছেন, ‘কার্যত ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জানান দিচ্ছে মিজোরাম।’ এদিকে গতকাল রাতে সংগঠিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন রাজ্য পুলিশের দক্ষিণ অসম রেঞ্জের ডিআইজি দিলীপকুমার দে।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (৬ নভেম্বর) রাত প্রায় ১১টায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হাওয়াইথাঙের আপার পাইনম গ্রামে অবস্থিত অসম সরকার পরিচালিত আপগ্রেডেড এলপি স্কুল (ডাইস কোড ১৮২১০২৮৩০১) চুরমার করে দিয়েছে মিজো দুর্বৃত্তরা। নিস্তব্ধ রাতে সংগঠিত বোমা বিস্ফোরণের জেরে স্কুলের চতুর্পার্শের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ভূমি কেঁপে ওঠার পাশাপাশি বিকট শব্দে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। জীবনাশঙ্কায় বহু পরিবারের সদস্য বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি দাস জানান, বোমা বিস্ফোরণের পর আজ সকালে তিনি পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। রাস্তায় তাঁকে মিজোরামে নিয়োজিত আইআর ব্যাটালিয়ন আটকে দিয়েছে। তিনি জানান, সর্বশিক্ষার বিকল্প স্কুল কম্পোনেন্টের অধীনে প্রতিষ্ঠিত এডুকেশন গ্যারান্টি স্কিমের (ইজিএস) স্কুলটি ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অসম সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আপগ্রেড করেছিল। ওই তারিখ জারিকৃত নোটিফিকেশন অনুযায়ী রাজ্যের মোট ১,৫২১টি ইজিএস স্কুলের মধ্যে হাওয়াইথাঙের আপার পাইনম আপগ্রেডেড এলপি স্কুল সহ কাছাড়ের মোট ১১১টি বিদ্যালয় ছিল। কাছাড় জেলার নরসিংপুর এডুকেশন ব্লকের অধীন আপার পাইনম আপগ্রেডেড এলপি স্কুলের ডাইস কোড ১৮২১০২৮৩০১। অতএব, স্কুলবাড়িটি যে অসম ভূখণ্ডে অবস্থিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বলেন প্রধানশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি দাস।

উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর গভীর রাতে একইভাবে লায়লাপুরের পার্শ্ববর্তী শেওড়াথল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৯০ নম্বর ধলাখাল এলপি স্কুলও গুঁড়িয়ে দিয়েছিল মিজো দুর্বত্তরা। পরবর্তীতে দুই গরিব কৃষি শ্রমিককে ধানখেত থেকে অপহরণ করে। তার পর গত ১ নভেম্বর রবিবার ফ্রেঞ্চনগরের বাসিন্দা ইন্তাজ আলিকে স্থানীয় পাগলাছড়া জঙ্গল থেকে মিজোরাম পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে অপহরণ করে নিয়ে তাঁকে বেধড়কভাবে শারীরিক নির্যাতন করে মিজো দুর্বত্তরা খুন করেছে। এভাবে একের পর এক বেপরোয়া ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে অসম-মিজোরাম সীমান্তে। অসমের কাছাড় জেলার প্রায় তিন কিলোমিটার, করিমগঞ্জের প্রায় আড়াই ও পাঁচ কিলোমিটার জমি জবরদখল করে বিভিন্নভাবে সীমান্তবর্তী নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে লাগাতার হিংসাত্মক কার্যকলাপ জারি রেখেছে মিজোরামের দু্র্বত্তরা। প্রসঙ্গত, গত দুদিন আগে কাছাড়ের লায়লাপুর, করিমগঞ্জের মেদলিছড়া এবং ভুবিরবন্দে মিজোরাম সীমান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসএসবি জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে। তবু মিজো দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া কার্যকলাপ বন্ধ হয়নি।

অসম পুলিশের দক্ষিণ অসম রেঞ্জের ডিআইজি দীলিপকুমার দে গতকাল রাতে সংগঠিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘মিজোরাম সীমান্ত অসমের কাছাড় জেলার অন্তর্গত খুলিছড়ায় এসএসবি জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ক্যাম্প তৈরির কাজ চলছে। শীঘ্রই এসএসবি বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভবপর হবে।’ আশা ব্যক্ত করেছেন ডিআইজি।

এদিকে মিজোরাম সরকার ও মিজো দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসবাদী বেপরোয়া আচরণে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন ‘আমরা বাঙ্গালী’র অসম প্রদেশ সচিব সাধন পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, ‘বিদেশি মদতে মিজোরাম কার্যত ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা সংগঠিত করছে। ভারত সরকার ও অসম সরকার মিজোরামের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কোনও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বস্তুত মিজোরামের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।’ মিজো দুর্বৃত্তদের শিগগির দমন করতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে তিনি অসম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *