ইচাবিল (করিমগঞ্জ / অসম), ৩১ অক্টোবর (হি.স.) : করিমগঞ্জের অসম-মিজোরাম সীমান্ত সমস্যার মীমাংসার উদ্দেশ্যে উভয় রাজ্যের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার পাথারকান্দির ইচাবিলে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কার্যত নিষ্ফল হয়েছে।
সীমান্ত সমস্যার সমাধান তথা সংশ্লিষ্ট এলাকায় শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে সামগ্রিক পরিবেশ স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে মিজোরামের মামিত জেলা ও দক্ষিণ অসমের করিমগঞ্জ জেলার দুই জেলাশাসক, দুই পুলিশ সুপার এবং অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের মধ্যে শনিবার দুপুরে পাথারকান্দির বাজারিছড়া থানার অধীনস্থ ইচাবিল এটিসি চা বাগানের কনফারেন্স হল-এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান মুথুস্বামী পালানিস্বামী, পুলিশ সুপার মায়াঙ্ক কুমার, অতিরিক্ত জেলাশাসক ধ্রুবজ্যোতি দেব, ডিএফও জালনুর আলি, করিমগঞ্জের জেলা তথ্য ও জনসংযোগ আধিকারিক সাজ্জাদুল হুসেন চৌধুরী, পাথারকান্দির সার্কল অফিসার জেনাথন ভাইপেই এবং মিজোরামের পক্ষে মামিত জেলার জেলাশাসক ড. লালরোজামা, পুলিশ সুপার শশাঙ্ক জয়সোয়াল, সদর এসডিও ভিক্টর লালিমপুইয়া, ডিএফও লালবিয়াক সহ অন্যরা।
উভয় জেলার আধিকারিকদের মধ্যে সীমান্তে স্বাভাবিক পরিবেশ ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। সভায় করিমগঞ্জের জেলাশাসক আনবামুথান মুথুস্বামী পালানিস্বামী বলেন, সীমান্ত এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত অসমের জমি মিজো পুলিশ ও সেখানকার মানুষজন জবরদখল করেছেন। তাই অসমের জমি ছেড়ে করোনা অতিমারর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে সীমানার সংশ্লিষ্ট স্থানে স্টেটাসকো রক্ষা করে ফিরিয়ে যাওয়ার জন্য মিজোরামের জেলাশাসক তথা প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে আহ্বান জানান। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
উল্টো মামিতের (মিজেরাম) জেলাশাসক ড. লালরোজামা এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে বর্তমানে মিজোরামের পুলিশ যতটা জায়গা দখল করে আছে তা তাঁদের বলে দাবি করেন। তিনি বিনাশর্তে সীমান্তে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে রাস্তা খুলে দিতে করিমগঞ্জের জেলাশাসককে চাপ দেন। এর জবাবে করিমগঞ্জের জেলাশাসক সীমান্তে শান্তি ফেরানোর উদ্দেশ্যে বিনয়ের সঙ্গে তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, করোনার আগে যে যেখানে ছিলেন সেখানে ফিরে গেলে দায়িত্ব সহকারে প্রয়োজনে এসকর্ট দিয়ে পণ্যবাহী লরি প্রভৃতি মিজোরামে পাঠানো হবে। কিন্তু জেলাশাসক আনবামুথানের কথায় কান দেননি মামিতের জেলাশাসক ড. লালরোজামা। তিনি বারবার বলেন, বর্তমানে মিজোরাম পুলিশ অবস্থানরত সম্পূর্ণ জায়গা মিজোরাম রাজ্যের। তাই তাঁরা কোনও অবস্থায় পিছু হঠবেন না বলে স্পষ্ট জানান লালরোজামা। যার ফলস্বরূপ আজকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কার্যত নিষ্ফল হয়েছে বলা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার তিন জেলা যথাক্ৰমে করিমগঞ্জ, কাছাড় এবং হাইলাকান্দির অসম- মিজোরাম সীমান্তবৰ্তী এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে মিজো আগ্রাসনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আন্তঃরাজ্যের সীমান্তবর্তী অসম ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগণ তীব্র আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছেন। অসমের গৃহ দফতরের কমিশনার-সচিব, পুলিশের এডিজিপি স্তরের আধিকারিকরা বারকয়েক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন সভায় মিলিত হয়েছেন। তবুও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।
কাছাড় জেলার লায়লাপুর, খুলিছড়া, বাঘেওয়ালা, তুলারথল, হাইলাকান্দির ভাইছড়া, কচুরতল এবং করিমগঞ্জের রাতাবাড়ি থানার চেরাগি ভুবিরবন্দ, পাথারকান্দির মেদলিছড়া এলাকার বিস্তীর্ণ সীমান্তবর্তী অঞ্চল মিজো আগ্রাসনের ফলে বর্তমানে মিজোরাম পুলিশ ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের দখলে রয়েছে। একই যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হয়েও মিজোরামের এমন উদ্ধত আচরণে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সীমান্তবর্তী সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি অঞ্চলে।
আন্তঃরাজ্য সীমানা বিবাদের স্থায়ী সুরাহা না হওয়ার জন্য জনগণ প্রতি মুহূর্তে অজানা আতঙ্ক নিয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন করছেন। শনিবার ইচাবিলে আয়োজিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের নিটফল হতাশাপূর্ণ হওয়ায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।