গুয়াহাটি, ২৬ অক্টোবর (হি.স.) : অন্য বছরের মতো বাঁধভাঙা উচ্ছ্বলতা নেই। করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিত বিধি বেঁধে দিয়েছিল সাধারণ প্রশাসন। সে অনুযায়ী সোমবার গুয়াহাটি এবং কোথাও কোথাও সকাল ১১টা এবং অন্যান্য জেলা বা মহকুমায় বেলা ১২টা থেকে শুরু হয়েছে দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব।
গত চারদিন অত্যন্ত সাদামাটাভাবে অসমের মণ্ডপে মণ্ডপে অনাড়ম্বরহীন শক্তিদায়িনী, মাতৃস্বরূপিনী, দুর্গতিনাশিনী মহাগৌরী দেবী দুর্গার পুজো সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তেই বৃষ্টির ভ্রুকূটি দেখেছেন ভক্তপ্রাণ, উৎসবপ্রেমী জনতা। এর মধ্যে কোভিডের মোকাবিলায় সরকারি বিধি তো রয়েছেই। আজ সকালে গুয়াহাটি-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মেঘ কেটে রৌদ্রের আলোকচ্ছটায় ভক্তকুল আনন্দে বিহ্বল হয়ে উঠেন। সকাল থেকে শুরু হয় মাকে বিদায়ের আয়োজন। কোভিড বিধি মেনে পূজামণ্ডপগুলিতে সিঁদুর খেলায় উদ্বেল হন গৃহিণীরা। বিভিন্ন মণ্ডপে সিঁদর খেলা শেষে পুজো উদ্যোক্তারা দেবীর প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন ঘাটের দিকে যাত্রা করেন।
গুয়াহাটি কামরূপ মহানগর প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী আজ সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছে দেবীর প্রতিমা বিসর্জন। চলবে তিনদিন। মহানগরের সর্বজনীন মণ্ডপের ৪৮২টি প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য গুয়াহাটির বুক চিরে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের কাসমারি, পাণ্ডুঘাট নুনমাটি ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। গতবার সাতটি ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা ছিল। এবার কোভিডের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এই সংখ্যা কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে।
কোভিডের হামলা অব্যাহত থাকলেও রাজ্য সরকার শারদোৎসব পালনে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি রাজ্য। তবে দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে অসমে যাতে করোনা ছড়াতে না পারে সে জন্য রাজ্য সরকার পুরোহিত, পূজার আয়োজক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের পঞ্চমীর আগেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিল। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের নির্দেশে উৎসবের সময় কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সর্বসাধারণের জন্য একটি নির্দেশিকা বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজিওর (এসওপি) জারি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী পূজার আয়োজকদের সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বা মহকুমাশাসকের আগাম অনুমতি নিতে হয়েছে। এছাড়া কন্টেইনমেন্ট জোনে কোনও পুজোর আয়োজনও করা হয়নি৷ তবে কন্টেইনমেন্ট জোনে বসবাসকারীরা ব্যক্তিগতভাবে যার যার বাড়িতে অনাড়ম্বরহীন দুর্গাপুজো করেছেন৷ মণ্ডপে মূর্তি নিয়ে আসা এবং বিসর্জনের সময় কোনও ধরনের শোভাযাত্রা বা নাচগানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, অসমের মানুষ সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। সর্বোপরি বিগত দিনগুলির মতো বিশাল আকারের মূর্তিও গড়া হষ়নি এবার। সর্বোচ্চ পাঁচ ফুট উঁচু মূর্তিতেই মাতৃস্বরূপিনী, দুর্গতিনাশিনী মহাগৌরী দেবী দুর্গার পুজো করেছেন ভক্তরা।
এছাড়া মণ্ডপের চতুর্পার্শ্ব খোলা রাখার পাশাপাশি উপরের ছাদ উন্মুক্ত রাখার কথাও বলা হয়েছিল, নির্দেশ পালন করেছে পুজো কমিটিগুলো৷ এসওপি অনুযায়ী, পুজোর মণ্ডপ এবং তার চারপাশে এক সঙ্গে ৫০ জনের বেশি মানুষ সমবেত হননি ভক্তরা। বজায় রাখা হয়েছিল শারীরিক দূরত্ব এবং অধিকাংশই মাস্কও পরিধান করেছেন৷
ভিড় এড়াতে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ ভক্ত বাড়ি থেকে ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন। ১০ থেকে ১৫ জনের বেশি ভক্তকে একত্রে অঞ্জলি দেওয়া হয়নি। পূজা আয়োজকরা ১০ থেকে ১৫ জনের দল করে সুসংগঠিতভাবে সিঁদুর খেলারও আয়োজন করেছেন৷ সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ক্লাব কিংবা পূজা কমিটিগুলি পূজা মণ্ডপের কাছে কোনও মেলার আয়োজন করেনি। পূজার সঙ্গে সংগতি রেখে কোনও ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও আরতি-অনুষ্ঠান উদযাপনে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
একইভাবে পরিপূর্ণ প্রস্তুতির মাধ্যমে দেবি দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন প্রক্রিয়া চলছে উজানের শদিয়া, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া থেকে নিম্ন অসমের ধুবড়ি, অভয়াপুরি, লখিমপুর, বঙাইগাঁও, বরাক উপত্যকার শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি এবং মেঘালয়ের শিলং প্রভৃতি অঞ্চলে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গুয়াহাটিতে প্রায় ঘরোয়া ও সর্বজনীন মিলিয়ে প্রায় ৫৯০টি-সহ গোটা রাজ্যে পাঁচ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গাপুজো সম্পন্ন হয়েছে।
রাজ্যবাসী প্রশাসনকে যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন তাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের মানুষ সরকারের বেঁধে দেওয়া প্রটোকল মেনে চলায় পুজোর পর কোভিড সংক্রমণ খুব বেশি বাড়বে না বলে আশা করছেন তিনি।