নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ অক্টোবর৷৷ যাত্রী পরিবহন ও যাত্রী ভাড়া নিয়ে ঝামেলার জেরে বাস চালক ও মালিকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করা নিয়ে এইবার মুখ খুললেন পরিবহন মন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহ রায়৷ তিনি সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে স্পষ্ট জানান ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে কিন্তু বাস মালিক বা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট কোন দাবি জানানো হয়নি৷
এই ভাবে চলতে দেওয়া যায় না৷ সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা শেষ করতে হবে৷ তাই তিনি বাস মালিক ও শ্রমিকদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান৷ যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া নিয়েও স্পষ্ট জানান তিনি৷ তিনি বলেন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে স্বাভাবিক ভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য৷ তবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলে ক্ষতিগ্রস্ত৷ সকলের রোজগার কমেছে৷ তাই এই পরিস্থিতিতে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়৷ তবে কোন যাত্রী চাইলে দুইটি সিটের ভাড়া দিয়ে নিজের ইচ্ছায় একটি সিটে বসতে পারবে৷ সবর্োপরি তিনি সমস্যার সমাধানের জন্য বাস মালিক ও শ্রমিকদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান৷
সমস্যার সুত্রপাত করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর সাথে সাথে৷ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কেউই প্রস্তুত ছিল না৷ কিন্তু তথাপি সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা গ্রহণ করেছে৷ তবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় বর্তমানে পরিবহন ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে চরম জটিলতা৷ করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি৷ তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পরিবহন দপ্তর থেকে বাস গুলিকে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের জন্য বলা হয়৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে দপ্তর বাস্তব সম্মত চিন্তা ভাবনা করেনি৷ আর তার জেরেই বর্তমান সমস্যা৷
দেখা যায় একটি বাস গাড়িতে যদি ৪০ টি সিট থেকে থাকে, তাহলে ঐ বাস আগে আগরতলা থেকে সাব্রুম যাওয়ার-আসার ক্ষেত্রে ৮ হাজার টাকা আমদানি হতো, যদি যাত্রী পিছু ভাড়া ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়৷ কিন্তু ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের ফলে বর্তমানে সেই বাস গাড়ির আমদানি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা৷ কিন্তু আগরতলা থেকে সাব্রুম পর্যন্ত গাড়িটি আসা যাওয়ার খরচ আগের তুলনায় হ্রাস পায়নি৷ বরং তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ দপ্তর এই বিষয়টি চিন্তা ভাবনা করে বাস পরিষেবার ক্ষেত্রে আগের ভাড়া ঠিক রেখে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে নির্দেশ দেয়৷ এই ক্ষেত্রে বাস মালিকরা লাভের পরিবর্তে লোকসানের শিকার হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এতে করে বাস মালিকরা পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে অতি কষ্টে গাড়ি চালাচ্ছে৷ বাস চালক কিংবা মালিক কেউই এতে লাভবান নয়৷ তাই বাস মালিকরা সরকারি নির্দেশ মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রশ্ণে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করছে ঠিক, ভাড়া দ্বিগুণ করে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়৷ যদিও দপ্তর ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি৷ এতে করে ক্রমশ সমস্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে৷
সম্প্রতি সাব্রুম-আগরতলা সড়কে এই সমস্যা প্রকট হয়ে দাড়ায়৷ বাস মালিকরা যখন যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়, তখন মনুবাজারে এক বাস চালককে হেন্সথা করা হয়৷ এতে করে অপমানে ঐ বাস চালক আত্মহত্যা করে৷ তার পরই সমস্যা আরও বেড়ে যায়৷ একদিকে ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহনের দায়ে প্রশাসন থেকে বাস চালকদের জরিমানা করা হচ্ছে, অন্যদিকে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের পর দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার জন্য বাস চালক ও সহ চালক জায়গায় জায়গায় হেনস্থার শিকার হচ্ছে৷ তারই প্রতিবাদে রবিবার থেকে নাগেরজলা স্ট্যান্ডে বাস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য৷ রবিবারের পর সোমবার রাধানগর ও চন্দ্রপুর আইএসবিটি স্ট্যান্ডেও বাস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস চালক ও মালিকরা৷ এইদিন নাগেরজলা, চন্দ্রপুর আইএসবিটি ও রাধানগর স্ট্যান্ডে ঠাই দাড়িয়ে থাকে বাস গুলি৷ বাস মালিক ও চালকদের দাবি সমস্যার সমাধান না হলে তারা বাস পরিষেবা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখবে৷এইদিকে বাস পরিষেবা বন্ধ থাকার ফলে সাধারন যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌছায়৷ প্রায় প্রতিটি স্ট্যান্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের৷ সঠিক সময়ে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে ব্যর্থ হয়৷ সরকারি কর্মচারীরা সঠিক সময়ে অফিস পৌছাতে পারছে না৷ আর এই সুযোগে ছোট যান বাহন গুলি যাত্রীদের পকেট কাটছে৷ দেখা যাচ্ছে ১০০ টাকার পরিবর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা, ৪০ টাকার জায়গায় ৮০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে৷
অথচ এই ক্ষেত্রেও নেই কোন সরকারি নির্দেশ৷ একাংশ ছোট গাড়ি সামাজিক দূরত্ব মানছে না৷ সিটের অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে৷ যাত্রীরাই জানায় তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে৷ ছোট যান বাহন চালকরা স্বীকার করে তারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে৷ তবে কেন অতিরিক্ত ভাড়া এই নিয়ে স্পষ্ট কোন উত্তর দিতে পারেনি ছোট যান চালকরা৷তবে সময়োপযোগী সাময়িক একটা সিদ্ধান্ত সকল সমস্যার সমাধান সুত্র বের করে দিতে পারে৷ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি৷ তাই বাস গুলি ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করবে৷ এই ক্ষেত্রে সরকার ও বাস মালিক পক্ষ আলোচনায় বসে সমাধান সুত্র বের করতে পারে৷ প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত করোনার প্রকোপ থাকবে৷ কিন্তু মানুষের জীবনের কাছে টাকা কিছু নয়৷ সেই বিবেচনা করে, যাত্রী ভাড়া সাময়িক সময়ের জন্য বৃদ্ধি করা আবশ্যক৷ এই ক্ষেত্রে সরকার কিংবা পরিবহন দপ্তর কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে৷ সাধারণত দেখা যায় যে কোন বাস গাড়ির সিট কেপাসিটি থাকে ৪০ থাকলে, সেখানে আরও ৫ থেকে ৬ টি সিট বৃদ্ধি করা হয়৷
বিশেষ করে চালকের পাশে অর্থাৎ কেভিনে ৪ থেকে ৫ জনের সিট তৈরি করা হয়৷ দপ্তর নির্দেশ দিতে পারে এই ধরনের সিটে কোন যাত্রী পরিবহন করা যাবে না৷ ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করলে তবেই দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া যাবে, তাও সাময়িক কালের জন্য৷ কাগজপত্র অনুযায়ী একটি গাড়িতে ৪০ টি সিট থাকলে ২০ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে৷ এই ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া যাবে, তবে এক জন যাত্রীও যদি বেশি নেওয়া হয় , আইনত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ বাস গাড়ির মালিক পক্ষের সাথে আলোচনাক্রমে সাময়িক কালের জন্য এই সিদ্ধান্ত গুলি গ্রহণ করা যেতে পারে৷ এতে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি যেমন সুদৃঢ় হবে, তেমনি মালিক পক্ষেরও লোকসান হবে না৷ তবে মালিক পক্ষের তেমন একটা লাভও হবে না৷ পরিস্থিতি আর রাজ্যবাসীর কথা চিন্তা করে বাস মালিকদেরও এই ক্ষেত্রে কিছুতা সহযোগিতা করতে হবে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে সাময়িক কালের জন্য গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে পারে দপ্তর৷ এখন দেখার পরিবহন দপ্তর কিংবা রাজ্য সরকার কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, পুজোর প্রাক মুহূর্তে পরিবহন সমস্যার সমাধানে৷