নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ জুলাই৷৷ ত্রিপুরায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে৷ আজ চার জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ফলে, ত্রিপুরায় সম্পূর্ণ লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে৷ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় এ-বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ তাতে লকডাউন বৃদ্ধির পক্ষেই বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন৷ সচিবালয় সূত্রে এমনটাই জানা গেছে৷
এদিকে, মঙ্গলবার নতুন করে ২২২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এদিন রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যুইট করে জানিয়েছেন এই তথ্য৷ তিনি জানিয়েছেন, এদিন ৬১৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে ২২২ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আক্রান্ত ২২২ জনের মধ্যে পশ্চিম জেলায় ৭৬ জন, সিপাহীজলা জেলায় ২৬ জন, গোমতী জেলায় ৩৯ জন, খোয়াই জেলায় ২১ জন, উত্তর জেলায় ২২ জন, ঊনকোটি জেলায় ৫ জন, ধলাই জেলায় ১২ জন এবং দক্ষিণ জেলায় ২১ জন৷
তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাজ্যে করোনা সমীক্ষার জন্য টিম ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৯৩৩ টি বাড়ি ভিজিট করেছে৷ সমীক্ষা করেছেন৷ এর মধ্যে ৩৬১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে ১০৬ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷
এদিকে, করোনা সংক্রমিতের খুঁজে সারা ত্রিপুরায় সমীক্ষা শুরু হয়েছে৷ তাতে গতকাল ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮৫৪ জনের সমীক্ষা করা হয়েছে৷ সমীক্ষায় ৪,৭২৮ চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ২,২৭১ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৯০ জনের দেহে করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে৷ তেমনি আজ ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৯৩৩ জনের সমীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে ৫,১২৭ জন চিহ্ণিত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৩,৪১৬ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ১০৬ জনের দেহে করোনা-র সংক্রমণ মিলেছে৷
স্বাভাবিকভাবে, পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট৷ তাই, লকডাউন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে ত্রিপুরা সরকার৷ বর্তমানে তিনদিনের সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, আজ সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহুর্তে করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নেই৷ সেক্ষেত্রে আগামীকাল ত্রিপুরা সরকার লকডাউন নিয়ে সরকার নতুন ঘোষণা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এদিকে, জিবি হাসপাতালের কোভিড সেন্টারে ৮০ বছরের বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে৷ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া মহকুমায় বরক চৌমুহনি দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুধীর দাসের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর বুকে জল জমে গিয়েছিল৷ এই সমস্যা নিয়ে গতকাল তিনি জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন৷ ভরতির আগে অ্যান্টিজেন টেস্টে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল৷ ওই বৃদ্ধের দেখাশুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁর নাতির কোভিড টেস্ট হয়েছে৷ রিপোর্ট এখনও আসেনি৷ ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে৷
বৃদ্ধের মেজো ছেলে বন্ধন দাস জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ১০ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তার পর চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন৷ চার মাস আগে তাঁর প্রচণ্ড কাশি হয়েছিল৷ পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে তার বুকে জল জমে গেছে৷ তাই, জিবি হাসপাতালের টিবি ওয়ার্ডে ভরতি করে চিকিৎসা হয়েছে তাঁর৷ তাতে তিনি সুস্থও হন৷ কিন্তু কিছুদিন ধরে একই সমস্যা আবার দেখা দেওয়ায় গতকাল তাকে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন৷
বন্ধনবাবুর কথায়, গোমতি জেলা হাসপাতালে বাবার ইতিপূর্বে কোভিড টেস্ট হয়েছে৷ তাতে রিপোর্ট নেগেটিভ এসিলছে৷ কিন্তু গতকাল রাতে জিবি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে৷ তিনি বলেন, বাবাকে রাতেই কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷ আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি মারা গেছেন৷ বন্ধন দাস বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন চারটে নাগাদ বাবার মৃতদেহ শেষকৃত্যের জন্য পাঠানো হবে৷ তিনি জানান, বাবার দেখাশুনা করার জন্য তাঁর সাথে এক নাতি থাকত৷ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ কিন্তু, রিপোর্ট এখনও আসেনি৷

