করোনা : রাজ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা প্রশংসনীয়, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুলাই৷৷ করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার সমস্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যে দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷ আগামী দিনগুলিতেও তাঁদের এরূপ ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ শনিবার সচিবালয়ের ২ নম্বর সভাকক্ষে তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের উদ্যোগে রাজ্যের সাংবাদিকদের মধ্যে প্রেস জ্যাকেট এবং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷


তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই প্রেস জ্যাকেট সাংবাদিকদের সহায়ক হবে৷ পাশাপাশি বেশি সংখ্যায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রদানের জন্য সাংবাদিকদের বহুদিনের দাবিও আজ পূরণ হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান, সরকারি চাকরি, পরিষেবা ক্ষেত্র সহ জনগণের জীবন মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ তেমনি সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভেল্যু অ্যাডিশনের উপরও গুরুত্ব দিয়েছে৷ তাঁর দাবি, তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের বিজ্ঞাপন বাবদ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে যেখানে ৩.৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল৷ সেখানে বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সংবাদপত্র বিভিন্ন জেলায় পৌছানোর জন্য ২ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জেলায় সংবাদপত্র পৌছানো বাবদ রাজ্য সরকারের প্রায় ১০ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৪০৪ জন রাজ্যের সংবাদপত্র হকারকে ১,০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে৷ একই সঙ্গে তাঁদের বিনামূল্যে রেশনিঙের ব্যবস্থাও করেছে সরকার, বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরাকে হীরা বানাতে চেয়েছেন৷ হীরা মানে হাইওয়েজ, আইওয়েজ, রেলওয়েজ এবং এয়ারওয়েজ৷ বর্তমান ত্রিপুরা সরকারের সময়কালে রাজ্যে হাইওয়েজ, ইন্টারনেট পরিষেবা, রেল পরিষেবা এবং এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, বৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় সড়কের জন্য অর্থ বরাদ্দও৷ সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চালু হয়েছে ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থা৷ দুটি দফতরে ই-ফাইল ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ ইপিডিএস সিস্টেম চালুর ফলে আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে সরকারের৷ এটি সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নয়নের জন্যই৷ পাশাপাশি রেলওয়েজের উন্নয়নের ফলে রাজ্যে বর্তমানে রাজধানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দূরপাল্লা রেল চলাচল করছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বিমান পরিষেবায় ত্রিপুরায় উন্নয়ন হয়েছে৷ ১৮টি বিমান রাজ্যে ওঠানামা করেছে৷ এগুলি হীরা মডেলের প্রতিফলন বলে মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলেন৷

তাঁর কথায়, কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার পাশাপাশি বেশি সংখ্যক কৃষকদের ফসল বিমার আওতায় আনতে মুখ্যমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাও রাজ্য সরকার গ্রহণ করেছে৷ খারিফ মরশুমে যাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যও কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্ব-নির্ভর মানসিকতাই স্ব-নির্ভর ত্রিপুরা গড়তে সক্ষম৷ রাজ্য সরকারও সবার মধ্যে স্ব-নির্ভর হওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে৷ পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে আগামীদিনে মানুষ আরও স্ব-নির্ভরতার দিকে অগ্রসর হবেন৷ পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমও আগামীদিনে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনাগুলি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরবে এবং নিজ নিজ সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন৷


তিনি বলেন, নতুন ত্রিপুরা গড়ার পথে রাজ্য চলা শুরু করেছে এবং গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে৷ মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের অসম্পূর্ণ কাজগুলি সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যেই কাজ করছে রাজ্য সরকার৷ স্বাগত বক্তব্যে দফতরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস বলেন, ত্রিপুরা প্রেস রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাক্রিডিটেশন রুলস-২০০১ সংশোধন করে ত্রিপুরা মিডিয়া রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাক্রিডিটেশন গাইড লাইন করা হয়েছে৷ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাওয়ার জন্য ৩৬টি আবেদনের মধ্যে ৩১টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ এই ৩১ জনের মধ্যে ১১ জন সাংবাদিক জেলা ও মহকুমাস্তরে কাজ করেন৷ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মুদ্রণ এবং সংবাদ মাধ্যমের এডিটর এবং প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং প্রেস জ্যাকেট তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *