কলকাতা, ১৫,জুলাই (হি. স.) : এবারে মাধ্যমিকের ফলাফলে রেকর্ড সংখ্যক পাশের হার। প্রথম দশের মেধা তালিকায় রয়েছে ৮৪ জনের নাম। তবে এর মধ্যে নেই কলকাতার কারোর নাম। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে পরীক্ষার মেধাতালিকা ঘোষণা করবেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। পাশের নিরিখে এবার এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর (৯৬.৫৯ শতাংশ)। দ্বিতীয় স্থানে পশ্চিম মেদিনীপুর (৯২.১৬ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে কলকাতা (৯১.০৭ শতাংশ)। তারপর আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনা।
এবারে পরীক্ষা দিয়েছিল মোট ১০ লক্ষ ১৫ হাজার ৮৮৮ জন। আগেরবারের তুলনায় এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার কমলেও, ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। এ বছর ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৭৯ জন ছাত্র পরীক্ষায় বসে। মেয়েদের সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯ জন।সফল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮,৪৩,৩০৫। কোনও রেজাল্ট বাকি নেই। ৫৮ জনের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এই বছর পাশের হার ৮৬.৩৪ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৮৬.০৪ শতাংশ। এই বছর ছাত্রদের পাশের হার ৮৯.৮৭ শতাংশ। ছাত্রীদের পাশের হার ৮৩.৪৭ শতাংশ। যেহেতু মাধ্যমিকের সবকটি পরীক্ষায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল নবান্নে জানিয়েছিলেন এবছর মাধ্যমিকের মেধাতালিকা অন্যান্যবারের মত প্রকাশ করা হবে। সেই মতই প্রথম দশের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ৮৪জন। একনজরে দেখে নিন এবারের মেধাতালিকা :
প্রথম: ৬৯৪ নম্বর পেয়েছে মেমারি বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল হাইস্কুলের ছাত্র অরিত্র পাল।
দ্বিতীয়: মোট ২জন দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। বাঁকুড়ার ওন্দা হাইস্কুলের ছাত্র সায়ন্তন গড়াই, কাটোয়ার কাশীরাম দাস ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়া অভীক দাস। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩।
তৃতীয়: কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্য পাঠক। দেবস্মিতা মহাপাত্র এবং রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন হোমের ছাত্র অরিত্র মাইতি। তাঁরা পেয়েছে ৬৯০।
চতুর্থ: বীরভূম জেলা স্কুলের পড়ুয়া অগ্নিভ সাহা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯।
পঞ্চম: পঞ্চম হয়েছে ৪ জন। বংশীহারি হাইস্কুলের ছাত্র অঙ্কিত সরকার, স্বস্তিক সরকার, রশ্মিতা সিনহা মহাপাত্র, বিভা বসু মণ্ডল।
ষষ্ঠ: ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে ১২ জন।শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের রিঙ্কিনি ঘটক। রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের অর্চিস্মান সাহা, রাজিবুল ইসলাম, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুলের সৃজন সাহা, দক্ষিণচক হাইস্কুলের অরিজিৎ গুহ রায়, সপ্তর্ষি জানা, অশোকনগর বাণীপীঠ গার্লস হাইস্কুলের অস্মি চৌধুরি। হাওড়ার সৌহার্দ পাত্র। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭।
সপ্তম: সপ্তম হয়েছে ১৭ জন। কোচবিহারের পরম দত্ত ও রীতম বর্মন, বীরভূম রামপুরহাটের শুভদ্বীপ চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়ার অরিত্র মাইতি, বাঁকুড়ার সাগ্নিক মিশ্র, বর্ধমানের সৌমিক সরকার, চন্দননগরের কৃষ্ণা ভবানি, আরামবাগের দিব্য কান্তি ঘড়াই, হুগলির সম্প্রীতি কুণ্ড, কোলাঘাটের তিয়াস প্রামাণিক, হাওড়ার মহম্মদ শহিদ। এদের সকলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬।
অষ্টম: অষ্টম হয়েছেন ১১ জন। জলপাইগুড়ির অরুণতীর্থ সাহা, মালদার নাজীন আজহার, হুগলির সুপ্রতী ভৌমিক, বাঁকুড়ার অঙ্কিতা ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুরের শুভঙ্কর মাইতি, কোলাঘাটের সময় প্রভা দে, মুর্শিদাবাদের মহাজন দেবনাথ, মঞ্জুষ হালদার, দমদমের অয়ন ঘোষ, দক্ষিণ বারসতের সৌম্যদ্বীপ সরকার, শ্রেয়স সরকার, জলপাইগুড়ির সুনিতাবালা। এদের সকলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৫।
নবম: মালদার অঙ্কিতা মণ্ডল, জলপাইগুড়ির শ্রেয়স সরকার, মালদার অঙ্কিতা মণ্ডল, বাঁকুড়ার অরিত্রিক সানিগ্রাহি, বাঁকুড়ার সাবর্ণ হাতি, পশ্চিম বর্ধমানের অনুশ্রী ঘোষ, পূর্ব বর্ধমানের উচ্চশির মণ্ডল, পুরলিয়ায় শুভ্রদ্বীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ব মেদিনীপুরের তন্ময় বর। এদের সকলের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪।
দশম: ৬৮৩ নম্বর পেয়ে জেলা থেকে দশম স্থান অধিকার করেছে একাধিক পড়ুয়া। এদের মধ্যে রয়েছে মালদার দেবাঞ্জন দে, মালদার সায়ন কর্মকার, বালুরঘাটের রূপসা সাহা, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে দেবাত্রিয়া দাস, বাঁকুড়ার অঙ্কন পাত্র, বাঁকুড়ার সোনামুখীর প্রহ্লাদ দত্ত, পূর্ব বর্ধমানের দেবদূত ঘোষ ও অন্বেষা ভট্টাচার্য, সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের সায়ন বিশ্বাস, পূর্ব মেদিনীপুরের সোহম মাইতি, হুগলি উত্তর পাড়ায় সাগ্নিক মাইতি।
এবারে করোনা পরিস্থিতির জেরে মার্কশিট দেওয়ার ক্ষত্রেও কিছু রদবদল আনছে পর্ষদ। গতকালই পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছিলেন ফল প্রকাশের পরেই ,বিভিন্ন স্কুল গুলিকে নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হবে কিভাবে মূল্যায়ন পত্র ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হবে এবং কিভাবে একাদশ শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারবে সেই বিষয়ে। একই সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি উল্লেখ করেন, এই বছর ফল প্রকাশের দিনই মূল্যায়ন পত্র দেওয়া হবে না। বরং আগামী ২২ জুলাই মার্কশিট দেওয়া হবে স্কুলগুলি থেকে। এর আগে স্কুল গুলিকে ভালোভাবে জীবাণুমুক্তকরণ করা হবে।
কল্যাণময় বাবু আরো জানান, এবছর মার্কশিট দেওয়া হবে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে। পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে স্কুলে এসে মার্কশীট সংগ্রহ করতে হবে অভিভাবকদের। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাকি তথ্য ও নির্দেশিকা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুল গুলিকে আজকেই পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান পর্ষদ সভাপতি।