নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জুন৷৷ কৃষির সার্বিক বিকাশের উপরই নির্ভর করছে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি৷ সেই লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকারও কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ আজ সচিবালয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ কথা বলেন৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় কৃষকদের আয় বাড়ানাের জন্য কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি উৎপাদিত সামগ্রীর বাজারজাতকরণের জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এদিন পর্যালোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে লক্ষমাত্রা নিয়েছেন সেই লক্ষ্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর কি কি কর্মসূচি নিয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে৷
পর্যালোচনা সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দপ্তর কোন কোন শস্য চাষে প্রাধান্য দিচ্ছে, এগুলি চাষ করে কৃষকরা কেমন লাভবান হবেন, উৎপাদন কেমন হবে, উৎপাদিত সামগ্রীর বাজারমূল্য কিরকম রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কৃষকদের আগে থেকেই অবহিত করতে হবে৷ তাঁর দাবি, তাতে কৃষকরা উৎসাহিত হবেন৷ চাষেও তাদের আগ্রহ বাড়বে৷ দানা শষ্য, ডাল, ইত্যাদি চাষের পাশাপাশি মাশরুম, গোলমরিচ, আদা চাষের ক্ষেত্রেও কৃষকদের উৎসাহিত করা প্রয়ােজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সাথে মৌমাছি পালনেও গুরুত্ব আরােপ করেন তিনি৷
তাঁর মতে, কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুযােগ রয়েছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে দপ্তরকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে৷ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কতজন কৃষক যুক্ত হবেন, কোন কোন জায়গা চাষের জন্য উপযুক্ত, কিরকম উৎপাদন হতে পারে, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে যথাযথ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করা প্রয়ােজন বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
এদিন সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের বিস্তারিত কর্মসুচি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেন দপ্তরের অধিকর্তা ড় ডি পি সরকার৷ দপ্তরের মূল কর্মসূচিগুলি নিয়ে আলােচনা করতে গিয়ে তিনি জানান, কৃষকদের আয় বাড়ানাের লক্ষমাত্রা নিয়ে দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়িত করছে৷ এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, চাযে বৈচিত্র আনা, জৈব পদ্ধতিতে চাষ, কৃষি ঋণ, শষ্য বীমা ইত্যাদি৷ তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে ধানের পরেই ভূট্টা চাষে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷
তথ্য উল্লেখ করে অধিকর্তা জানান, চলতি বছরে ২ লক্ষ ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান, ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ডাল, ২ হাজার হেক্টর কাউন চাষ করার লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সজী, ৫৪ হাজার ৮২০ হেক্টরে ফল, ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টরে বাদাম, ৭ হাজার ৪০০ হেক্টরে মশলা, ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করার লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে অধিকর্তা জানান৷ তিনি বলেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় আয় যে সকল ক্ষেত্রে বেশি হয় তার নিরিখেই চাষে প্রাধান্য দিয়ে থাকে দপ্তর৷
কৃষি অধিকর্তা ড় সরকার বলেন, ন্যাশন্যাল ফুড সিকিউরিটি মিশন এবং রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা চলতি বছরে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টরে মাসকালাই, ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৫ হাজার হেক্টরে সরিষা, ২২০০ হেক্টরে বাদাম চাষ করা হবে৷ এর জন্য মােট ব্যয় হবে ২৪ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা৷ মাসকালাই চাষের ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে কৃষকদের ৯০০০ টাকা করে চাষের খরচ দেওয়া হবে বলে জানান অধিকর্তা৷ তাঁর দাবি, চলতি বছরে ১৫০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে চাষের খরচ বাবদ কৃষকদের দেওয়া হবে ২০ হাজার টাকা৷
কৃষি অধিকর্তা জানান, উদ্যান চাষের ক্ষেত্রে চলতি বছরে লক্ষমাত্রা ৩০৭৭ হেক্টর৷ এর মধ্যে ড্রাগন ফুট, লিচি, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সজী, মশলা, ফুল, আনারস ইত্যাদি চাষের লক্ষমাত্রা রয়েছে৷ কৃষি অধিকর্তা ড় সরকার জানান, চলতি বছরে ৬৬ হাজার ৪২৫ জন কৃষক কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ২১৬ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ঋণ পেয়েছেন৷ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ফসলবীমা যােজনায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কৃষক আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন৷ আউস সিজনের জন্য ১৬৪০ জন কৃষক নাম নথিভুক্ত করেছেন৷ আমনের ক্ষেত্রে ১৫ জুলাই ২০২০ এরমধ্যে নাম নথিভুক্ত করণের সময় ধার্য করা হয়েছে বলে অধিকর্তা জানিয়েছেন৷ কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছরে ৩ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের উন্নতমানের বীজ কৃষকদের সরবরাহ করা হবে৷ ৭৩৭১টি কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হবে৷ ১০ জুন ২০২০ পর্যন্ত ১৪ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের থেকে সহায়কমুল্যে ক্রয় করা হয়েছে৷ ২৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকা কৃষকরা পেয়েছেন বলে অধিকর্তা জানিয়েছেন৷ এছাড়াও কৃষকদের ৮০টি মুড়ি তৈরি করার মেশিন, ৮০টি মিনি অয়েল মিল এবং ১০০ টি আখ ক্রাশ করার মেশিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা৷
এদিন সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের এই পর্যালোচনা সভায় কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, মুখ্যসচিব মনােজ কুমার, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত) এস কে রাকেশ, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের সচিব অপুর্ব রায়, বিশেষ সচিব প্রশান্ত কুমার গােয়েল, উদ্যান পালন ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড় ডি পি সরকার এবং দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷

