নয়াদিল্লি, ১১ মে(হি.স.): আগামী ১৭ মে তৃতীয় দফার লকডাউন শেষ হতে চলেছে। এর পরে লকডাউন আরও বাড়ানো হবে নাকি, কনটেনমেন্ট জোনগুলিকে বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। তার মধ্যেই সোমবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান-সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিনের বৈঠক করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীরা যেমন নিজেদের দাবিগুলি তুলে ধরেন তেমন পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রীকে ।
এদিনের বৈঠকে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী হিসেবে ট্রেন চলাচলে বারণ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার । তিনি বলেন, চলতি মাসে লকডাউন জারি থাক। যাতে যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁরা কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী হিসেবে ট্রেন চলাচলে অনুমতি দিতে বারণ করছি।
লকডাউন চলিয়ে যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত রাজ্যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও। তিনি বলেন, তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন হলে রাজ্যকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে। কারণ পুলিশ প্রচণ্ড চাপে রয়েছে এবং পুলিশকর্মীরও সংক্রামিত হচ্ছেন।’ উদ্ধব ঠাকরে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবায়ও নিয়ে আপত্তি জানান ।
রেল পরিষেবা বন্ধের দাবি তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর । এদিনের বৈঠকে তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আমরা পুরোপুরি তৈরি। রেল পরিষেবার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। কেন্দ্র উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ করুক এবং রেল পরিষেবা স্থগিত রাখুক।
এদিকে, লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ । তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। ১০ লাখ শ্রমিক ইতিমধ্যে রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছেন। ন’লাখ মানুষ বাড়িতে একান্তবাসে আছেন। কমপক্ষে সাত লাখ মানুষের বাড়িতে একান্তবাসে মেয়াদ শেষ হয়েছে। গরীবদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে আগামী ১০ দিনে শ্রমিকদের আমরা ২০ লাখ চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছি। নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য লকডাউন বাড়ানো উচিত।
সংকটের সময়ে কেন্দ্র-রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল । তিনি বলেন, ‘সংকটের সময় কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ পাশাপাশি রাজ্য যাতে রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন নির্ধারণ করতে পারে, সেজন্য অনুমতি চাইলেন বাঘেল। কেন্দ্রের থেকে আর্থিক সাহায্য চাইলেন তিনি। তিনি যাত্রীবাহী রেল পরিষেবায় নিয়েও আপত্তি জানান ।
এদিনে বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বাড়ানোর দাবি জানান অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল । তিনি বলেন, বিধিনিষেধ শিথিল মানেই মানুষ পুরো বিষয়টি হালকাভাবে নেবেন। সেজন্য আমাদের আন্তঃরাজ্য চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তা যৎসামান্য রাখতে হবে। অসমে ট্রেন আসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক সপ্তাহের ব্যবধান রাখতে হবে।
আজকের বৈঠকে আংশিক লকডাউনের কথা বলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানী। তিনি বলেন, লকডাউন শুধুমাত্র ‘কনটেনমেন্ট জোন’-এ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করতে হবে। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর স্কুল-কলেজ খোলা উচিত। ধীরে ধীরে গণ পরিবহন শুরু করা উচিত। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকদের বাইরে বেরনো উচিত নয় বলেও নিজের বক্তব্যে উল্লেখ্য করেন বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ।
এদিকে, এদিনের বৈঠকে বিমানে ওঠার আগেই বিদেশ ফেরতদের অ্যান্টিবডি টেস্টের পরামর্শ দিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। একইসঙ্গে রেড জোন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় মেট্রো পরিষেবা চালুর দাবি জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে ঘরোয়া উড়ান পরিষেবা চালু করা উচিত। যাঁদের করোনার উপসর্গ আছে, তাঁদের উড়ানে ওঠার অনুমতি দেওয়া হবে না। নয়াদিল্লি থেকে কেরালার ট্রেনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের কাছে যেরকম নাম নথিভুক্ত থাকবে, তার ভিত্তিতে টিকিট থাকবে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে ট্রেন চালালে গোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি রাখতে হবে।’
এদিনের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের জেরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, কেন্দ্রের নেতৃত্ব মেনে কাজ করতে রাজ্য প্রস্তুতও, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান জানানোর কথা ভুললে চলবে না। তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনাকে এবং এখানে উপস্থিত অন্য সব অঙ্গরাজ্যকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলার মানুষ সত্যিকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনা থেকে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে মানবতার ভাবনা থেকে আপনাদের পাশে রয়েছে।’’
এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরাও ।