BRAKING NEWS

বিধানসভায় প্রাক্তন সাংসদ বাজুবন রিয়াং, প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ কর এবং চিকিৎসক ডা. রথীন দত্তের প্রয়াণে স্মৃতিচারণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ মার্চ৷৷ আজ বিধানসভার প্রথম দিনে প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ বাজুবন রিয়াং, প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণকুমার কর এবং কিংবদন্তী শল্য চিকিৎসক পদ্মশ্রী ডা. রথীন দত্তের স্মৃতিচারণা করে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে৷


শুক্রবার বিধানসভায় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অধ্যক্ষ রেবতীমোহন দাস বলেন, প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত বাজুবন রিয়াং ১৯৪১ সালের ১৩ মার্চ অবিভক্ত দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পূর্ব বকাফা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ছাত্রজীবনের পরবর্তী পর্যায়ে প্রথমে একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন৷ শিক্ষকতা ছেড়ে প্রথমে কংগ্রেস দলে এবং পরবর্তীতে জীবনাবসান পর্যন্ত তিনি নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রেখেছিলেন৷ প্রয়াত বাজুবন রিয়াং ১৯৬৭ সালে বীরগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস দলের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হন৷ পরবর্তী পর্যায়ে তিনি সিপিআই (এম) দলের প্রার্থী হিসাবে ১৯৭২, ১৯৭৭ এবং ১৯৯৩ সালে যথাক্রমে চেলাগাঙ, রাইমাভ্যালি এবং শান্তিরবাজার বিধানসভা নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন৷


তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় কৃষি-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হিসাবে জনকল্যাণে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ১৯৮০ সালে তিনি লোকসভার পূর্ব ত্রিপুরা উপজাতি সংরক্ষিত আসন থেকে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন৷ পুনরায় ১৯৮৫ এবং এর পর একনাগাড়ে ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ এবং সর্বশেষে ২০০৯ সালে লোকসভার পূর্ব ত্রিপুরা উপজাতি সংরক্ষিত আসন থেকে বিজয়ী হয়ে আসেন৷ সংসদীয় রাজনীতিতে প্রয়াত বাজুবন রিয়াং একটানা ৪৭ বছর যুক্ত থেকে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করে গিয়েছেন৷ গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আগরতলা আইএলএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর৷


অধ্যক্ষ বলেন, প্রয়াত অরুণকুমার কর ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ প্রয়াত অরুণকুমার কর একজন বিশিষ্ট দক্ষ শিক্ষাবিদের পাশাপাশি একজন দক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবেও জনমানসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন৷ প্রয়াত অরুণকুমার কর ১৯৮৮ সালে খোয়াই বিধানসভা নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বিধানসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৮ সালে গঠিত কংগ্রেস-টিইউজেএস মন্ত্রিসভায় শিক্ষা ও শ্রম দফতরের মন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা নাগাদ কলকাতার আরএন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর৷


অধ্যক্ষ আরও বলেন, পদ্মশ্রী ডা. রথীন দত্ত ১৯৩১ সালে অসমের মঙ্গলদৈয়ে জন্মগ্রহণ করেন৷ ষাটের দশকে তিনি আগরতলার জিবি পন্থ হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক হিসাবে কাজে যোগ দেন৷ শল্য চিকিৎসায় অসাধারণ দক্ষতা ও মানবিক কর্তব্যবোধের ফলশ্রতিতে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই রাজ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসক হয়ে ওঠেন৷ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় সেনা এবং যুদ্ধে আহত বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের চিকিৎসায় দিবারাত্র একাগ্রতার সঙ্গে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাতে আজও ত্রিপুরাবাসী সহ বাংলাদেশের মানুষ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করে আসছেন৷ মুক্তিযুদ্ধে এই অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে পদ্মশ্রী ডা. রথীন দত্তকে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বরূপ ’’মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’’ প্রদান করে৷ পাশাপাশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৯৯২ সালে ডা. রথীন দত্তকে ’’পদ্মশ্রী’’ সম্মানে ভূষিত করেন৷ পদ্মশ্রী ডা. রথীন দত্ত গত ২৭ জানুয়ারি (২০২০) সকালে কলকাতার গলফগ্রিনে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *