পশ্চিমবঙ্গে যান দূর্ঘটনায় নিহত বিএড পড়ুয়া ত্রিপুরার দুই ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ ডিসেম্বর৷৷ বেপরোয়া গতি কেড়ে নিয়েছে দুইটি তরতাজা প্রাণ৷ পশ্চিমবঙ্গের নিউ কোচবিহারে ত্রিপুরার দুই বিএড পড়ুয়া ছাত্রীর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছেন আরো দুইজন৷ বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গেছে ৫ বছরের এক শিশু কন্যা৷ কিন্তু, মা-কে হারিয়ে ওই অবুঝ শিশু এখন দিশেহারা৷ ঘাতক বোলেরো গাড়ির চালক পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ এদিকে, ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে দুইটি মৃতদেহ রাজ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এছাড়া, আহতদের কোচবিহার হাসপাতালেই চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতাস্থিত ত্রিপুরা ভবনের এডিশনাল রেসিডেন্ট কমিশনার দশরথ দেববর্মা৷


বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের নিউ কোচবিহার বাইশগুড়ি নির্মীয়মান উড়াল পুলের কাছে বোলেরো পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কায় টোটো গাড়ি উল্টে গিয়ে ত্রিপুরার বিলোনিয়া নিবাসী বন্দনা দেববর্মা(৩২) এবং অমরপুর নিবাসী মাম্পি দাস(২৩)৷ এছাড়া, বিলোনিয়ার সোমা বণিক(২৩) এবং অমরপুরের বিকাশ মজুমদার(২৩) দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন৷ কোচবিহার থেকে টেলিফোনে মৃত বন্দনা দেববর্মার স্বামী প্রতাপ দেববর্মা বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে স্ত্রীর বিএড পরীক্ষার জন্য আমরা ১১ ডিসেম্বর ত্রিপুরা থেকে রওয়ানা দেই৷ যথারীতি পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী৷ কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন স্থানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে অশান্ত পরিবেশে তাঁদের বাড়ি ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল৷


প্রতাপবাবু বলেন, গতকাল রামপুর হাট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রেনে উঠি ত্রিপুরায় ফিরব ভেবে৷ কিন্তু, মালদা আসার পর ট্রেন যাবে না, তাই আমাদের নেমে যেতে হয়৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরার আরও অনেক যাত্রী সহ তাঁরাও মালদা স্টেশনে আটকা পরে যান৷ প্রায় ৩৫ জন ত্রিপুরার বাসিন্দা তখন বাসে কোচবিহার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে ট্রেন ধরবেন ঠিক করেন৷ তিনি বলেন, বিএড পরিক্ষার্থী সহ আমরা ১৫ জন বাসে রওয়ানা দেই এবং ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ কোচবিহার পৌছে যাই৷ প্রতাপবাবু জানান, আমরা বাস স্ট্যান্ড থেকে রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ৩টি টোটো গাড়ি ভাড়া নেই এবং মা ও মেয়েকে একটি টোটো-তে বসিয়ে আমি অন্য টোটো-তে গিয়ে বসি৷


কথাগুলি বলার সময় গলার স্বর ভার হয়ে আসছিল প্রতাপবাবুর৷ কারণ, চোখের সামনে স্ত্রী যন্ত্রনায় ছটপট করে মারা গেছেন৷ তিনি বলেন, রেল স্টেশনে যাওয়ার পথে বাইশগুড়ি এলাকায় নির্মীয়মান উড়াল পুলের সামনে একটি বোলেরো পিক-আপ ভ্যান সজোরে ধাক্কা মারে তার স্ত্রীর টোটো গাড়িতে৷ তাতে, দুইটি গাড়ি উল্টে যায়৷ প্রতাপবাবু বলেন, স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল বোলেরো পিক-আপ ভ্যানটি প্রচন্ড গতিতে প্রথমে উড়াল পুলে যাওয়ার মুখে রাখা ব্যারিক্যাডটিতে ধাক্কা মারে৷ তারপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টোটো-তে গিয়ে ধাক্কা মেরেই উল্টে যায়৷ সাথে টোটো গাড়িটিও উল্টে যায়৷ তিনি জানান, সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে ছুটে গিয়ে দেখি তাঁর স্ত্রী ইটের স্তুপের উপর পরে রয়েছে এবং মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে৷ তাঁদের পাঁচ বছরের শিশু কন্যাটি ছিটকে বালির স্তুপে পড়েছিল, তাই প্রাণে বেঁচে গেছে৷ তিনি আরও জানান, টোটো গাড়ির ভেতরেই চাপা পরে মাম্পি দাসের মৃত্যু হয় এবং তাঁর স্ত্রী যন্ত্রনায় ছটপট করতে করতে ঘটনাস্থলেই মারা যান৷


প্রতাপবাবু বলেন, সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি৷ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর সাথের মানুষদের সহায়তায় আহতদের কোচবিহার হাসপাতালে নিয়ে যাই৷ সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁর স্ত্রী ও সম্পা দাসকে মৃত বলে ঘোষণা দেন৷ এদিকে, সোমা বণিকের পায়ে মারাত্মক আঘাত লেগেছে৷ তাদের কোচবিহার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে৷ প্রতাপবাবু জানান, ঘটনার পর ঘাতক গাড়িটির চালক পালিয়ে যান৷
এদিকে, মৃতদেহ আগরতলায় আনার জন্য ত্রিপুরা সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর সমস্ত বন্দোবস্ত করেছে৷ কলকাতাস্থিত ত্রিপুরা ভবনের এডিশনাল রেসিডেন্ট কমিশনের দশরথ দেববর্মা সমস্ত বন্দোবস্ত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ সে মোতাবেক বিলোনিয়া পর্যন্ত মৃতদেহ পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দশরথ দেববর্মা৷