জনতার মাঝে গিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ ডিসেম্বর৷৷ সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির নানা গুজবের মধ্যে আসল চিত্র জানতে সরাসরি জনতার মাঝে যাচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সরাসরি মানুষের ঘরে পৌছে যাচ্ছেন তিনি৷ জাতি-জনজাতি সকলের সাথেই কথা বলছেন৷ এছাড়াও শুনছেন মানুষের অভাব অভিযোগও৷ তাঁর কথায়, মানুষ যেভাবে আমাকে চাইছিল, সেইভাবেই আমি কাজ করতে চাইছি৷ মানুষ কি চাইছেন, তাদের চিন্তাধারা কি, তা তাঁদের কাছে গিয়ে জানতে পারছি৷ আসল চিত্র উঠে আসছে৷


তিনি বলেন, ত্রিপুরা মডেল রাজ্য তখনই হবে, যখন জনতা খুশি থাকবেন৷ তাই জনতাকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি৷ সে জন্যই আমি জনতার মাঝে এসেছি৷ তাঁর বিশ্বাস, ত্রিপুরা মডেল রাজ্য হবেই, জনগনও খুশি থাকবেন৷


ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে জনমনে আলাদা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে৷ কেউ বলেছেন, আমাদের এই এলাকায় এর আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রী আসেন নি৷ অনেকে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের গ্রামে আসতে পারে, তা কখনো স্বপ্ণেও ভাবি নি৷’’ এরকম আরও অনেক কথায় অনেকটা ঘরের ছেলের মতই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে আজ বরণ করে নিয়েছেন জিরানিয়া ও মান্দাই এলাকার মানুষ৷
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে বিপ্লব কুমার দেব বলে থাকেন যে, রাজ্যকে জানতে হলে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে হবে৷ কথাগুলি বলেই যে তিনি থেমে থাকেননি, তার প্রমাণ রাখলেন আজও৷ সোনামুড়ার পর আজ জিরানিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে জনগণের মুখে বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনলেন তিনি৷


জিরানিয়া সফরকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ কাজগুলো করার জন্যই তো মানুষ আমাকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছেন৷ তা ভুলে গেলে ওই পদে থাকার যোগ্যতা হারাব৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় স্থানীয় কলাবাগান এলাকায় পৌঁছতেই, সেখানে জড়ো হন গ্রামবাসীরা এবং প্রথমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তাঁরা তুলে ধরেন বিভিন্ন সমস্যার কথা৷ পাশাপাশি, ওই এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ত্রিপুরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা৷


সাংবাদিকদের প্রশ্ণের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেগায় কালকেও ত্রিপুরা ৭টি পুরস্কার পেয়েছে৷ কিন্তু এর জন্য আমরা প্রচার করবো না৷ বদলে শিক্ষা, মেডিকেল হাব, পরিকাঠামো ইত্যাদির বিকাশের জন্য যখন স্বীকৃতি পাবো তখনই গর্বিত হব৷ তাঁর দাবি, যদিও এর মধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় সন্মান পেতে শুরু করেছে ত্রিপুরা৷ এদিন তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ৩ বছরের মধ্যেই ত্রিপুরা নিজের পায়ে চলা শুরু করবে৷ ইতিমধ্যেই এমন বহু উদাহরণ রয়েছে, যেখানে ত্রিপুরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে৷
এদিন প্রথমেই কলাবাগানের অভিজিৎ দেববর্মা’’র বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন৷ সবার কথা শোনেন৷ সেখানেই মধ্যান্নভোজন করার পর তাদের অনুরোধে এলাকার প্রাচীন মন্দিরে গিয়ে প্রনাম করেন৷ এলাকাবাসীর দাবিতে আশ্বাস দেন, এখানে একটি মন্দির তৈরিতে তিনি সাহায্য করবেন৷


এর পরে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান রবীচরণ ঠাকুর পাড়ায়৷ সেখানে তিনি কৃষ্ণ চন্দ্র দেববর্মার বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেন৷ অনেকেই তাঁর কাছে বিভিন্ন দাবি তোলে ধরেন৷ এর বেশীরভাগই তিনি পূরণ করেন৷ ফের কলাবাগানে পায়ে হেঁটে আসার সময় তাদের অনুরোধে শিপ্রা ভারত মজুমদার, বীরেন্দ্র দত্তের বাড়িতে যান৷ শ্রী দত্তের বাড়ির বৃদ্ধরা যোগ্য হওয়া সত্বেও এতদিন ভাতা পেতেন না৷ এরও সমাধান করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরে স্থানীয় ক্যান্সার রোগী কাজল দে’’র বাড়িতে গেলে, তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কথা জানতে পারেন তিনি৷ সেগুলোর সমাধান করার পর মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে তাকে আর্থিক সাহায্য দেবার কথাও ঘোষণা করেন৷


এভাবে তিনি আজ অনেকের সমস্যাই শুনেছেন এবং তার সমাধান করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর শেষ করে ফেরার পথে তাঁকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড় এক প্রকার রোডশো’’র রূপ নেয়৷ বলা যেতে পারে এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে রীতিমতো উৎসবের আবহ তৈরি হয় জিরানিয়া ও মান্দাই এলাকায়৷ আজকের এই সফর শেষ করার আগে, মান্দাইয়ে দলীয় কার্যালয়ে যান বিপ্লব কুমার দেব৷ সেখানেও দলীয় কর্মী ও মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷