নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ ডিসেম্বর৷৷ বনধের ভয়াবহতা কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে ত্রিপুরা৷ বিভিন্ন মহকুমায় শান্তি বৈঠকের দৌলতে পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷ আগরতলায় শুক্রবার সকাল থেকেই রাস্তাঘাটে ভীড় লক্ষ্য করা গেছে৷ যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে৷ সুকল-কলেজ, অফিস-আদালত পুরোদমে চলছে৷ টানা চারদিন বনধে ত্রিপুরার পরিচিত চেহারা ফিকে হয়ে গিয়েছিল৷ আজ আবারও সেই পুরোনো উদ্যম লক্ষ্য করা গেছে৷ অবশ্য, রেল পরিষেবা এখনো পুরোদমে স্বাভাবিক হয়নি৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধীতায় টানা চারদিন ত্রিপুরা প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল৷ বনধকে ঘিরে সংঘর্ষে ত্রিপুরায় অশান্তির পরিবেশ কায়েম হয়েছিল৷ বনধে বহু মানুষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে৷ তবে, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷ গতকাল থেকেই শান্তি বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ তাতে, জাতি-উপজাতি, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে দারুন সাড়া মিলেছে৷
আজ সকাল থেকেই সকলের মধ্যে কর্ম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে৷ বাজার এখনও স্বাভাবিক হয়নি৷ কারণ, বনধের জেরে পণ্যবাহী গাড়িগুলি রাস্তায় রয়েছে৷ কিন্তু, নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানোর উদ্দেশ্যে গাড়িগুলি রওয়ানা দিয়েছে বলে খাদ্য দফতরের জনৈক আধিকারিক জানিয়েছেন৷ ত্রিপুরা পুলিশের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে৷ ত্রিপুরাবাসীর নিরাপত্তার প্রশ্ণে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷
কমলপুর মহকুমা শাসক সুশান্ত সরকার জানিয়েছেন, শান্তিরবাজারে আজ শান্তি বৈঠক করা হয়েছে৷ আগামীকাল হালহালি সহ আরও তিনটি স্থানে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকায় গুজব মোকাবিলা করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তবে, শক্ত হাতে তা মোকাবিলা করা হবে৷ এদিকে, কাঞ্চনপুরেও শান্তি বৈঠক চলছে৷ এছাড়া সিপাহীজলা জেলায় তিনটি স্থানে শান্তি বৈঠক হচ্ছে৷
এদিকে, আগামীকাল থেকে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অবশ্য, সাব্রুম লাইনে কোন ট্রেন চলেনি৷ তবে, আজ আগরতলা-শিলচর এবং শিলচর-আগরতলা উভয়দিকের ট্রেন নিজ গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছে৷ আগরতলা স্টেশন ম্যানেজার মুন্না যাদব বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেস রাস্তায় আটকে ছিল৷ আজ আগরতলায় এসে পৌছেছে৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় নতুন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে কাল থেকে যথারীতি ট্রেন চলবে৷
এদিকে, রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা ও শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে কৈলাসহর মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ কৈলাসহর মহকুমা শাসক ডক্টর বিশাল কুমারের পৌরহিত্যে এই শান্তি বৈঠকে কৈলাসহর মহকুমার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ও আইপিএফটি দলের প্রতিনিধি সহ কৈলাসহর দুটি থানার ওসি ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন৷ রাজ্যে ক্যাব এর বিরোধিতা করে বন্ধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও কৈলাসহরে তার কোন আচ লাগেনি৷ তথাপি গুজবে কান দিয়ে গতকাল নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে বেশকিছু উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী কৈলাসহর থানার শরণাপন্ন হয়েছিল, যদিও পরবর্তী সময়ে মহকুমা পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদেরে হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে কৈলসহর তার পুরানো ছন্দে ফিরে আসে৷ আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন ও বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলায় সবার সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে কিভাবে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় সে ব্যাপারে প্রত্যেকের মতামত নেওয়া হয়৷ সিপিআইএম বিজেপি কংগ্রেস থেকে আইএন আইপিএফটি দলের নেতৃত্ব কৈলাসহর মহকুমা এলাকায় শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রত্যেক বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে বলেও অঙ্গীকার বন্ধ হন৷ বৈঠক শেষে কৈলাসহর মহকুমা শাসক বিশাল কুমার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানান— বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকায় কৈলসহরে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ অক্ষুন্ন রয়েছে৷ এ ধরনের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন মহল৷
অন্যদিকে, খোয়াই জেলা প্রশাষনের উদ্যোগে আজ খোয়াই ব্লকের পূর্ব চেবরী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদ্যামোহন চৌধুরী পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে শান্তি ও ষম্পীতি ষভার আয়োজন করা হয়৷ ষভায় ষভাপতিত্ব করেন জেলাশাষক পঙ্কজ চক্রবর্তী৷ উপস্থিত ছিলেন খোয়াই পঞ্চায়েত ষমিতির ভাইষ চেয়ারম্যান তাপষ কান্তি দাষ, খোয়াইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ ষুুপার রাজীব ষেনগুপ্ত, খোয়াই মহকুমা শাষক চাঁদনি চন্দ্রন, খোয়াই ও তুলাশিখর ব্লকের বি ডি ও-গণ৷ ষভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ, বাজার কমিটি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাষেবী ষংগঠনের প্রতিনিধিগণ, পূর্ব চেবরী গ্রাম পঞ্চায়েত এবং শান্তিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, ষদষ্য ষদ্যাগণ ষহ এলাকাবাষীও উপস্থিত ছিলেন৷ ষভায় জেলাশাষক গুজবে কান না দিয়ে ষকল অংশের মানুষকে ষৌভ্রাতত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান৷ ষভায় বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিগণও ষকল অংশের মানুষকে ষৌভ্রাতত্ব ষুুদৃঢ় করতে এগিয়ে আষার আহ্বান রাখেন৷