কড়া পুলিশি প্রহরায় সমাধিস্থ করা হল উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে

উন্নাও, ৮ ডিসেম্বর (হি.স.) : কড়া পুলিশি প্রহরায় গ্রামেই সমাধিস্থ করা হল উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে । দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চল্লিশ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে। রবিবার, চোখের জলেই তাঁকে চিরবিদায় জানালেন আত্মীয়, পরিজন ও প্রতিবেশীরা | কোনওরকম অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে এ দিন কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় গোটা গ্রাম। তরুণীর দেহাবশেষ নিয়ে শোকমিছিলও কার্যত ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।

প্রাথমিক ভাবে অবশ্য নির্যাতিতার অন্ত্যেষ্টিতে রাজি হননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তাঁরা। এ দিন ওই তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন লখনউ-এর ডিভিশনাল কমিশনার মুকেশ মেশরাম। তরুণীর বাবা এবং অন্যান্যদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক কথাবার্তা চালান তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্যাতিতার দেহের সৎকার করতে রাজি হয় পরিবার। এ দিন নিজেদের জমিতেই সমাধিস্থ করা হয় তাঁর দেহ। ২৩ বছরের যুবতীর শেষকৃত্যে হাজির ছিল গোটা গ্রাম। উপস্থিত ছিলেন সমাজবাদী পার্টির নেতারা, উত্তরপ্রদেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য্য ও কমল রানি বরুণ।

মন্ত্রী কমল রানি বরুণ বলেন, ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাওয়ের স্লোগান খুবই অর্থপূর্ণ। আমরা পরিবারের পাশে আছি। অপরধীদের কঠিন শাস্তি হবে বলে নিশ্চিত করছি।’ আইন শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা উন্নাওয়ের প্রাক্তন সাংসদ অন্নু ট্যান্ডন বলেন, এই মৃত্যু যেন ব্যর্থ না-হয়। নিগৃহীতার পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, উন্নাওয়ের ধর্ষিতার পরিবারকে সুরক্ষা ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটি বাড়ি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন লখনউ-এর ডিভিশনাল কমিশনার মুকেশ মেশরাম। এ ছাড়াও পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পরিবারের কেউ যদি আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রের লাইলেন্স করাতে চান, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তাও করতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেশরাম।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে উন্নাওয়ের ২৩ বছরের তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ বছর মার্চ মাসে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনায় গ্রেফতার হন পাঁচ জন। গত ২৫ নভেম্বর জামিন পান অন্যতম অভিযুক্ত শিবম ত্রিবেদী। কিন্তু, জামিন পাওয়ার ১০ দিনের মাথায় ৫ ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য মা, বাবার সঙ্গে ট্রেনে রায়বরেলিতে যাওয়ার আগে স্টেশনে গিয়ে ধর্ষিতাকে জোর করে টেনে গ্রামের বাইরে ধানখেতে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা | তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে | ৯০ শতাংশ পোড়া দেহে নিয়ে চল্লিশ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর শুক্রবার রাতে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়েছে উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে। হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও খুনে চার অভিযুক্তের এনকাউন্টারে মৃত্যুর পর ক্ষোভের আঁচ কিছুটা স্তিমিত হলেও উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে গোটা দেশ। এই পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার রাতে দিল্লির হাসপাতাল থেকে উত্তরপ্রদেশের গ্রামের বাড়িতে ফেরে নির্যাতিতার দেহ। তার পর থেকে কার্যত ভিড় লেগে গিয়েছে গ্রামে। এর মাঝেই উন্নাও-নির্যাতিতার বোন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যতক্ষণ না গ্রামে এসে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস দিচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত দিদির শেষকৃত্য হবে না। পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে দোষীদের বিচার চেয়ে কোনও রকম সরকারি সাহায্য নিতেও অস্বীকার করে নির্যাতিতার পরিবার |এই অবস্থায় লখনউ-এর ডিভিশনাল কমিশনার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনেন এবং আজই চোখের জলে চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন উন্নাওয়ের নিগৃহীতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *