BRAKING NEWS

হাসপাতাল থেকে তুলে এনে লকআপে রাখতেই অসুস্থ বাদল চৌধুরী, পাঠানো হল আইসিইউতে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ অক্টোবর৷৷ পূর্ত ঘোটালায় অভিযুক্ত প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী তথা বিধায়ক বাদল চৌধুরীকে আজ ত্রিপুরা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ হাসপাতাল থেকে পশ্চিম আগরতলা থানায় নিয়ে আসে৷ কিন্তু, থানায় লকআপে ঢোকানোর সাথে সাথেই তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জি বি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ৷ এখন তিনি জি বি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ ডাঃ রাজেশ দেববর্মার নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি৷ এদিকে, থানার লকআপে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেন বাদল চৌধুরী৷


প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার পূর্ত দপ্তরের কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়ম নীতি উলঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাতে, আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে দাবি করেছে বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার৷ ওই কেলেঙ্কারি মামলায় প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী সহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভিজিলেন্স৷ ওই মামলায় প্রথমে ক্রাইম ব্রাঞ্চ প্রাক্তন পূর্ত কর্তা সুনীল ভৌমিককে গ্রেপ্তার করেছে৷ তিনি এখন জেল হেপাজতে রয়েছেন৷ এরপর পুলিশ প্রাক্তন পূর্ত মন্ত্রী বাদল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অবশ্য তাঁকে পুলিশ জালে তুলতে পারেনি৷ কারণ দায়রা আদালতে বাদল চৌধুরীর জামিনের আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তিনি আত্মগোপন করেছিলেন৷ ফলে পুলিশ তাঁকে কোথাও খুঁজে পায়নি৷ এরই মধ্যে তিনি ত্রিপুরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান৷ কিন্তু, ওই আবেদনের শুনানি নিস্পত্তি হওয়ার আগেই তিনি আগরতলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তখন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে৷ তাঁকে পুলিশের নজরদারিতেই হাসপাতালে চিকিৎসা করেন চিকিৎসকরা৷


প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর ত্রিপুরা হাইকোর্টে বাদল চৌধুরীর জামিনের আবেদনের শুনানি হয়৷ কিন্তু, ওইদিন আদালত কোন রায় দেননি৷ বরং, হাইকোর্ট পুলিশের কাছে কেইস ডায়েরি চেয়েছিল৷ আজ আদালতে বিচারপতি অরিন্দম লোধের বেঞ্চে বাদল চৌধুরীর জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হয়৷ এদিন শুরুতেই বাদল চৌধুরীর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যী জামিনের পক্ষে জোর সওয়াল করেন৷ তেমনি, অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুন কান্তি ভৌমিক বাদল চৌধুরীর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন৷ তাঁর বক্তব্য, বাদলবাবু যথেষ্ট প্রভাবশালী লোক৷ তাই, তাঁকে জামিন দেওয়া হলে মামলা প্রভাবিত হতে পারে৷


এদিকে, আজ দুপুর নাগাদ তদন্তকারী অফিসার ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিএসপি অজয় কুমার দাস বাদল চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে আসেন৷ পুলিশের দাবি, বাদল চৌধুরীকে হাসপাতাল ছুটি দিয়েছে৷ তাই তাকে পুলিশ হেপাজতে নিয়েছে৷ এদিন বাদল চৌধুরীকে পশ্চিম আগরতলা থানায় নিয়ে আসার সাথে সাথে থানা চত্ত্বরে বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের৷


অন্যদিকে, বাদল চৌধুরীকে থানার লকআপে ঢুকানোর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ বুকে ব্যথা অনুভব করছেন বলে তিনি পুলিশকে জানান৷ সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের থানায় ডেকে আনে পুলিশ এবং চিকিৎসকরা তাঁকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন৷ সে মোতাবেক তাঁকে জি বি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ৷ হাসপাতালে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে তাঁকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বাদল চৌধুরীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন৷ এখন তিনি ডাঃ রাজেশ দেববর্মার নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন৷ তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে৷


এদিকে, বাদল চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাঁকে বলপূর্বক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে পুলিশ এবং লকআপে তাঁকে মারধর করেছেন পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি সুব্রত চক্রবর্তী৷ অবশ্য, এই সমস্ত বিষয়ে পুলিশ এখন কোন মন্তব্য করেনি৷ বাদল চৌধুরীর আইনজীবী জানিয়েছেন, হাসপাতালে তাঁর মক্কেলকে নিগৃহীত করা, সাথে বাদল চৌধুরীর স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার এবং থানার লকআপে মারধরের ঘটনা ত্রিপুরা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছে৷ আদালত এ-বিষয়ে বিচার করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷


বাদল চৌধুরীর এই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন এডভোকেট জেনারেল অরুণ কান্তি ভৌমিক৷ তিনি বলেন, পুলিশ আইন মেনেই পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ বাদল চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পর পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গিয়েছে৷ তাতে, অমানবিকতা এবং বেআইনী কোন কাজ করেনি পুলিশ, দাবি করেন তিনি৷ বরং পুলিশের কাজে বাদল চৌধুরী অসহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ এডভোকেট জেনারেলের৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *