নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ অক্টোবর৷৷ সুস্থ হয়ে ওপার বাংলায় নিজের দেশে ফিরে গেলেন বীথি আখতার৷ বাংলাদেশের নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার বাসিন্দা বীথি নিজের অজান্তেই ত্রিপুরায় চলে এসেছিলেন৷ মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, তাই চিনতেই পারছিলেন না কোথায় এসেছেন৷ ২০১০ সালে নিখোঁজ হওয়ার পর আজ তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন৷ তাঁর মা সাফিয়া আখাউড়া সীমান্তে এসে তাঁকে নিয়ে গেছেন৷ দীর্ঘ নয় বছর বাদে হারানো মেয়েকে ফিরে পেয়ে ত্রিপুরা সরকার, ভারত সরকার এবং তাঁর মেয়েকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসককে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সাফিয়া৷ শুধু তাই নয়, মেয়েকে খোঁজে পেতে সাহায্যের জন্য নড়াইল জেলা সভাপতি সৈয়দ খাইরুল আলমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার কিরীটি চাকমা বলেন, ত্রিপুরা সরকারের জন্যই বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন৷ এমন আরো ১৮ জন রয়েছেন৷ সুস্থ হয়ে উঠলে তাদেরও দেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হবে৷
২০১০ সালে বাংলাদেশে নিখোঁজ হয়েছিলেন বীথি আখতার৷ ভারতে তাকে ধলাই জেলার সালেমা পুলিশ উদ্ধার করে৷ কিন্তু, মানসিক ভারসাম্যহীন হাওয়ায় পুলিশকে বাড়ির ঠিকানা জানাতে পারেননি বীথি আখতার৷ ফলে, তাকে ২০১২ সালের ১৭ মার্চ সালেমা থানার পুলিশ আগরতলায় নরসিংগড়স্থিত মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়৷ ওই হাসপাতালে চিকিৎসায় বীথি সুস্থ হয়ে উঠেন৷ আজ তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
এ-বিষয়ে বাংলাদেশের নড়াইল জেলা সভাপতি সৈয়দ খাইরুল আলম বলেন, ৩ মাস আগে জানতে পেরেছি বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়া বীথি আখতার আগরতলায় একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে৷ সে-মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার, ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রক এবং বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী ও হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ শুরু করি৷ তাতেই সাফল্য মিলেছে৷ আজ হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে মায়ের কোলে তোলে দিতে পেরেছি, আবেগতাড়িত হয়ে বলেন তিনি৷
বীথি আখতারের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে স্টেট প্রোগ্রাম অফিসার অফ মেন্টাল হেলথ ডাঃ জ্যোতির্ময় ঘোষ বলেন, ২০১২ সাল থেকে নরসিংগড়স্থিত মানসিক হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়েছে৷ চিকিৎসায় তিনি সাড়া দিয়েছেন৷ তাই, আজ সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন৷ তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ত্রিপুরা থেকে বীথি আখতার সহ ৬ জনকে সুস্থ করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে৷ তাঁর কথায়, এখন ১৮ জন ছেলেমেয়ে রয়েছেন যারা মানসিকভাবে অসুস্থ৷ তারাও বাংলাদেশ থেকে ভুল করে এপারে এসে পড়েছেন৷ ডাঃ ঘোষ দাবি করেন, তাদের মধ্যে ৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তারা বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে প্রস্তুত আছেন৷ এদিন তিনি জানান, বীথি আখতারকে ফেরত পাঠানোর জন্য আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ ভারত সরকারের সাথে মিলে বীথিকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে তিনি যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছেন৷
এদিন বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার কিরীটি চাকমা বলেন, ত্রিপুরা সরকারের জন্যই আজ দীর্ঘ নয় বছর বাদে সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে ফিরে যাচ্ছে বীথি৷ ২০১০ সালে তার নিখোঁজ হওয়ার তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে৷ ত্রিপুরায় চিকিৎসার ফলে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি৷ কিরীটি চাকমার কথায়, ত্রিপুরায় এমন আরো ১৮ জন রয়েছেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ তিনি আজ ত্রিপুরা সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন৷ এভাবেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে তিনি দাবি করেছেন৷
এদিন আখাউড়া সীমান্তে মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন সাফিয়া৷ মেয়েকে সামনে পেয়েও নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না৷ বিথীকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেন৷ মেয়েকে ফিরে পেয়ে ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি৷ ত্রিপুরা সরকার ও ভারত সরকারের প্রতি আজ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন সাফিয়া৷ পাশাপাশি, সৈয়দ খাইরুল আলমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ এদিকে, বীথি আখতারও আজ দেশে ফিরে যেতে পারছেন বলে ভীষণ খুশি হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ওপার থেকে এদেশে কিভাবে এসেছি বুঝতে পারিনি৷ তবে, এখন ঘরে ফিরে যাচ্ছি, তাই ভীষণ খুশি হয়েছি৷