নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যে-সব সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলি দ্রত রূপায়ণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ স্টেকহোল্ডার মিট-এ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান ৷ তিনি বলেন, এতে দু’দেশের মানুষই লাভবান হবেন৷ কম সময়ের মধ্যে কর্মসূচি রূপায়ণ করাই পারদর্শী নেতৃত্বের কাজ৷ ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এভাবে কাজ করার বিষয়ে পারদর্শী, বলেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহারের সুযোগে ত্রিপুরা-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে৷
এই অনুষ্ঠানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, ভারতের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জেনারেল ভিকে সিং, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী মহম্মদ টিপু মুন্সি, অসমের বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি প্রমুখ বত্তৃণতা পেশ করেছেন ৷ এছাড়া দু’দেশের শীর্ষ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে৷
আলোচনার শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বপ্রথমে আমি দুই দেশের প্রকৃত বীরদের স্মরণ করতে চাই৷ আমাদের দেশে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্ম সার্ধশতবর্ষ আমরা পালন করছি৷ জাতির জনককে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি৷ পাশাপাশি বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি৷ এই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অসমের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা এবং ত্রিপুরার শচীন দেববর্মণ ও বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি৷ এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেক উন্নত করেছেন৷ এজন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে শ্রদ্ধা জানান৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ছাড়া ত্রিপুরার উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ কারণ ত্রিপুরার প্রায় ৮০ শতাংশ সীমান্ত বাংলাদেশ দিয়ে ঘেরা৷ এ বছর ৫ অক্টোবর ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ এর সুফল ত্রিপুরা-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ পাবে৷ এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার জন্যই চট্টগ্রাম বন্দরের এসইপি হয়েছে৷ স্বাধীন বাংলাদেশ না হয়ে এই জায়গাটি পাকিস্তানের অধীনে থাকলে এই সুবিধা কখনও পাওয়া যেত না৷
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এস ই পি-র কারণে শুধুমাত্র ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলেরই লাভ হবে তা নয়৷ সবথেকে বেশি লাভ বাংলাদেশেরই হবে৷ কারণ অসম, মেঘালয় বা ত্রিপুরা এই অঞ্চলের সব রাজ্যে পণ্য পরিবহণ করতে হয় হলদিয়া বন্দর দিয়ে৷ গুয়াহাটি থেকে হলদিয়ার দূরত্ব প্রায় ১২০০ কিলোমিটার৷ কিন্তু ত্রিপুরা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব প্রায় ৬২০ কিলোমিটার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাস্তায় পরিবহণ ব্যয় অর্ধেক হয়ে যাবে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মূল সমস্যা হল জলপথের স্বল্পতার জন্য এই অঞ্চলে পণ্য পরিবহণে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ আমরা যা-ই আনতে চাই তা রেলে বা ট্রাকে আনতে হয়৷ তাতে সব কিছুতেই ব্যয় বেশি হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পণ্য পরিবহণের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷
ভারত-বাংলাদেশের যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়িগুলি যেন ডেস্টিনেশন টু ডেস্টিনেশন আসতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি এ বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, সীমান্তে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে কোনও ব্যবস্থা করতে পারলে দু’দেশের মানুষেরই লাভ হবে৷ বাংলাদেশের মেঘনা হয়ে গোমতি পর্যন্ত প্রোটোকল রোড যেন তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এজন্য উদ্যোগ নিতেও মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন৷ এতে দু’দেশ লাভবান হবে৷ ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ফেণি নদীর সেতুর কাজ শেষ হলে ট্রেনে বা ট্রাকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহণ করা যাবে৷ তখন ত্রিপুরা পুরো উত্তর-পূর্বের করিডোর হবে৷ পাশাপাশি আশিয়ান দেশের জন্যও করিডোর হবে৷ এতে আশপাশের অন্য দেশও লাভবান হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পেট্রোপোল দিয়ে বাংলাদেশ অনেক টাকার পণ্য আমদানি রফতানি করে৷ ত্রিপুরা বা অসমের সীমান্ত দিয়েও আমদানি রফতানি বাণিজ্য করা যেতেই পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তগুলি দিয়েও যেন বাণিজ্য হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে যতগুলি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তা যেন যত দ্রত সম্ভব রূপায়িত হয় তার উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাতে দুই দেশের মানুষেরই লাভ হবে৷ সবার সহযোগিতায় ত্রিপুরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷