দুল্লভছড়া (অসম), ১৬ অক্টোবর (হি.স.) : সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে বদরউদ্দিন আজমলকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে কংগ্রেস। শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও কংগ্রেসের এই অভিসন্ধি সফল হতে দেব না। সমগ্র দেশে অস্তিত্বহীন কংগ্রেস পায়ের নীচের জমি খুঁজতে বিভাজনের রাজনীতিতে মেতে উঠেছে। কংগ্রেসি অপশাসনে অতিষ্ঠ দেশের জনগণ এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বুধবার রাতাবাড়ি বিধানসভা এলাকার ভুতুছড়া, কালিনগর এবং দুল্লভছড়ায় তিনটি নির্বাচনী জনসভায় কংগ্রেসকে এভাবেই আক্রমণ করেছেন রাজ্যের অর্থ-স্বাস্থ্য ও পূর্তমন্ত্রী তথা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এর আহ্বায়ক ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
তিন নির্বাচনী সমাবেশ বিজেপি নেতা ড. শর্মা বলেন, গত অর্থ বছরে রাতাবাড়ি বিধানসভা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। প্রয়োজনে আরও ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা আজ করেছেন তিনি। জানুয়ারি থেকে বাগান এলাকায় বিনামূল্যে চিনি দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। চা বাগিচার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীয় মানুষজনরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
নেডা-র আহ্বায়ক তথা রাজ্যের অর্থ, পূর্ত ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রতিটি জনসভায় কংগ্রেসকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, যদি সাহস থাকে তা-হলে উন্নয়নের নিরিখে মোকাবিলা হয়ে যাক। কংগ্রেসের ৫৫ বছরের শাসনামলের উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৫ বছরের শাসনামলের উন্নয়ন নিয়ে সরাসরি বিতর্কের আহ্বান জানান মন্ত্রী হিমন্ত। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে হিমন্ত বলেন, এই দলের নেতাদের কী হয়েছে কে জানে, দেশের মানুষ যখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খুশি হয়, তখনই কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে। প্রতিটি বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা কংগ্রেসিদের মানসিক রোগে পরিণত হয়ে পড়েছে।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী হিমন্ত বলেন, এই ধারার আড়ালে কংগ্রেস কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করেছিল। বিজেপি ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটিয়ে কাশ্মীরের জনগণকে নুতনভাবে স্বাধীনতা দিয়েছে। কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীদের পরিবার তাদের সন্তানদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসতে বলছে। আর এতেই কংগ্রেসিদের আঁতে ঘাঁ লেগেছে। দেশে শান্তি থাকুক, স্থিরতা থাকুক এটা কংগ্রেসিরা চায় না। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বিভাজন তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করাই হল কংগ্রেসিদের মূল উদ্দেশ্য।
বক্তা হিমন্তবিশ্ব বলেন, বিজেপি জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করে না। একই মুদ্রার এপিট আর ওপিঠ কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ ভোট রাজনীতির স্বার্থে হিন্দু মুসলিম বিভাজন ধরিয়ে সম্প্রদায়গত বিভেদ সৃষ্টি করে থাকে। মন্ত্রী হিমন্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল জাতপাত, ধর্মীয় মেরুকরণের ঊর্ধ্বে ওঠে সকল সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে সমবিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সংখ্যালঘুদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার। এখানে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হলে তিনি কি উন্নয়নের রথ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? প্রশ্ন তুলে সমাবেশে উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান তিনি।
আজকের তিনটি জনসভায় উপস্থিত বিশাল সংখ্যক জনতার সামনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে হিমন্ত বলেন, কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হলে আগামী দেড় বছর রাতাবাড়ির উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে পড়বে। রাতাবাড়ি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিজয় মালাকারের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে হিমন্তবিশ্ব বলেন, বিজয় মালাকার জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিকাশের ট্রেন ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। আর রাতাবাড়ির উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে না। হিন্দিভাষী হিন্দু কৃপানাথ মালাহ, অসমিয়াভাষী হিন্দু হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং বঙ্গভাষী হিন্দু বিজয় মালাকার, এই তিন ভাই মিলে রাতাবাড়িকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রথম দশ বিধানসভা এলাকার মধ্যে অন্যতম হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমাদের প্রাথমিক কাজ। অর্থ, পূর্ত ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বিজেপি জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের নামে বিশ্বাসী নয়। সমগ্র দেশের সঙ্গে এই বিধানসভা এলাকারও উন্নয়নের প্রয়োজন। বিজেপি সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। বিজয় বিজয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে গতি আসবে।
দুল্লভছড়ায় দিনের শেষ জনসভা করে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সাংসদ কৃপানাথ মালাহের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে বিকেল তিনটেয় হেলিকপ্টার যোগে গুয়াহাটির উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যান। আজকের প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে ছিলেন দলীয় প্রার্থী বিজয় মালাকার, সাংসদ কৃপানাথ মালাহ, এআইডিসি-র চেয়ারম্যান মিশন রঞ্জন দাস, বরাক বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক তথা এপিডিসিএল-এর চেয়ারম্যান নিত্যভূষণ দে, বিধায়ক পাথারকান্দির কৃষ্ণেন্দু পাল, বড়খলার বিধায়ক কিশোর নাথ, জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, বিজেপির কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ দাস, ডা, মানস দাস, দলের রামকৃষ্ণনগর মণ্ডল কমিটির সভাপতি হিমাংশু দে, নেত্রী শিপ্রা গুন, মুন স্বর্ণকার প্রমুখ।