যতদিন আমি বেঁচে আছি, এনআরসি করতে দেব না : মমতা

কলকাতা,১২ সেপ্টেম্বর (হি.স):  ‘যতদিন আমি বেঁচে আছি, এনআরসি করতে দেব না ৷’ বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের সভা থেকে এবাবেই  হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এদিন তিনি বলেন, বাংলায় এনআরসি মানব না ৷ ২ কোটি কেন ২ জন লোকের গায়েও আঁচ লাগলে তা মেনে নেওয়া হবে না৷ ’ নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে এই ভাষাতেই বৃহস্পতিবার তোপ দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷

জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না । আরেকটা ভারত ভাগ করতে দেব না । ক্ষমতা থাকলে করে দেখান বাংলায় ৷’ পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও এদিন ফের কেন্দ্রকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘দেশজুড়ে আর্থনৈতিক ধস নেমেছে।’

সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তায় প্রতিবাদী মিছিলের পর জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় শাসকদলের বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো । দুপুর আড়াইটে নাগাদ সিঁথির মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল একটু এগোতেই বোঝা গেল, ব্যারিকেড তৈরির প্রয়োজনীয়তা কতটা ছিল । ব্যারিকেডের দু পাশে সাধারণ মানুষের উপচে পড়ছে ভিড় । রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আসতে দেখা গেল, সেই ব্যারিকেড ভেঙে মানুষজন পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই । সাড়ে তিনটে নাগাদ মিছিল শেষ হয় শ্যামবাজার মোড়ে । সেখানেই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপি বিরোধিতায় সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী ।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতা করে গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মিটিং মিছিল শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস । তবে এই ইস্যুতে প্রথমবার পথে নেমে বিরোধিতা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শ্যামবাজারের সভায় তিনি বলেন, ‘আরেকটা বঙ্গভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন না । বাংলাকে যাঁরা হিংসা করেন, তাঁরা জেনে রাখুন, বাংলা মাথা নত করবে না । আগুন নিয়ে খেলবেন না । আমরা সবাই রয়েছি দেশকে রক্ষা করার জন্য । আরেকবার ভারত ভাগ করতে দেব না।’ এরপরই নাম না করে দিলীপ ঘোষকে নিশানা করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘বাংলায় নাকি ২ কোটি লোক বাদ দেবে । কেন আমরা কি ওদের দয়ায় আছি । আগে ২ জনের গায়ে হাত দিয়ে দেখো । এজেন্সি ? এজেন্সি কোথায় থাকে আর মানুষ কোথায় থাকে দেখে নেবো । আমি যতদিন বেঁচে আছি এনআরসি করতে দেব না, আমি মরে গেলেও দল করতে দেবে না । ৪টি প্রজন্ম তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি।’

আজ প্রতিবাদী মিছিলের পর শ্যামবাজারের জনসভা থেকে ফের একবার হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দিল্লিকে বলে দিতে চাই আরেকবার বঙ্গভঙ্গ বা ভারত ভাগ করার চেষ্টা বরদাস্ত করব না । পুলিশ দিয়ে অসমের মুখ বন্ধ করেছ। তবে বাংলার মুখ বন্ধ করতে পারবে না’।
আজ তিনি বিজেপিকে মনে করিয়ে দেন, ‘১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ দিয়েছে । রয়েছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধদের নাম । স্বাধীনতার ৭৬ বছরে এসেও নাগরিক পরিচয় দিতে হবে । কেন ?  ওরা আমাদের ধর্ম শেখাচ্ছে । যেন বাংলায় ঈদ, দুর্গাপুজো, বড়দিন, মহরম, ছট পুজো হয় না।’  মমতা এদিন বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে অসমবাসীর মুখ বন্ধ করতে পারে, কিন্তু বাংলার নয় । ধর্ম, বর্ণের ভিত্তিতে এনআরসি মানছি না মানব না । বিজেপিকে ধিক্কার জানাই, লজ্জা করে না।’  তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘এটা অস্তিত্বের লড়াই। আসামে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পডড়েছে এর মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু । বৌদ্ধ, শিখ, গোর্খারাও আছে । অনেকে নথি দিয়েছেন, অথচ এনআরসিতে নাম ওঠেনি।’

এদিনের সভা থেকে ধর্ম নিয়েও বিজেপি বিঁধতে ছাড়লেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহর নাম না করেই তাঁর শ্লেষ, ‘আমাদের ধর্ম শিখিও না । তোমাদের থেকে ধর্ম শিখতে হবে না । আমাদের ধর্ম মানবতা । এদিন মমতা বলেন, ‘বাংলায় দুর্গাপুজো, কালীপুজো হয় না ? নতুন করে শেখাচ্ছো ?’ নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারকে আমি সম্মান করি । আমি সংবিধান মেনে চলা মানুষ । কিন্তু আমাদের অসম্মান করলে গায়ে লাগবে । আমি তো সকালে ২০ বার ওম বলি । ‘ওম’ শব্দের অর্থ আমরা অনেক ভাল জানি।’  এনআরসির পাশাপাশি দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে এদিন মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রেল, সেল, বিএসএনএল সব বিক্রি করছে । এখান থেকে ব্যাঙ্কের হেড কোয়ার্টার তুলে নিয়ে যাচ্ছে । গাড়ি কিনছেন না কেউ এখন । ভারতবর্ষে হাহাকার চলছে । দেশে অর্থনৈতিক ধস নেমেছে, তা ধামাচাপা দিতে অন্য ইস্যু নিয়ে চর্চা করছেন । মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলকে ঘিরে আজ যথেষ্ঠ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ । মিছিল নির্বিঘ্নে রাখতে নিরাপত্তার কোনও ফাঁকফোকর ছিল না ।