নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ১৬ আগস্ট৷৷ দা দিয়ে কুপিয়ে সৎ ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যার চেষ্টায় মূল অভিযুক্ত মকবুল আলী পুলিশের জালে ধরা পড়েছে৷ গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলা থানার পুলিশ ধর্মনগর থেকে বুধবার বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ আজ তাকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত জেল হাজতে পাঠিয়েছে৷
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১৯ জুন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কদমতলা থানাধীন ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্ত ইয়াকুব নগরের ইছাইরপার এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে জহুর উদ্দিন(১৫) ওরফে সাদ্দাম মোবাইলে গেম খেলছিল৷ ঠিক তখনই একটি কালো রংয়ের পালসার বাইকে চেপে দুই যুবক এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় ও মুখে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে৷ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম জহুর তখন প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার দিলে আশপাশের মানুষ ওই চিৎকার শুনে ছুটে আসেন৷ কিন্তু, ঘটনাস্থল থেকে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়৷ গ্রামবাসীরা ওই দুই যুবককে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু, তারা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখালে গ্রামবাসীরা তাদের ধরার সাহস পাননি৷
এদিকে, রক্তাক্ত অবস্থায় জহুরকে উদ্ধার করে ইয়াকুব নগর বিএসএফ ক্যাম্পের গাড়ি দিয়ে ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা৷ এরই মধ্যে এই ঘটনার খবর দেওয়া হয় কদমতলা থানায়৷ ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন কদমতলা থানার এসআই প্রাণজিৎ মালাকার, হাবিলদার পরেশ দাস সহ বিশাল পুলিশবাহিনী৷ পুলিশ ঘটনাস্থল এবং ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে সরজমিন পরিদর্শন করেন৷
এদিকে, জহুরের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন৷ তখন তার আত্মীয় পরিজন তাকে অসমের শিলচর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান৷ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জহুরের মুখের অধিকাংশ জায়গা জখম হয়েছে৷ সাথে মাথাও ফেটে গিয়েছে৷ বর্তমানে জহুরের অবস্থা কিছুট স্থিতিশীল বলে তার পরিবারের কাছ জানা গিয়েছে৷
কদমতলা থানাধীন ইছাই লালছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ইছাইরপার গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জহর৷ মা ছাড়া তার আর কেউ নেই৷ সৎ মায়ের ঘরে এক ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী রয়েছে৷ কিন্তু জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে সৎ ভাই থেকে আলাদা থাকতো জহুর ও তার মা৷ এলাকাবাসীর অভিযোগ, জায়গা সম্পত্তির বিবাদের জেরে তার সৎ ভাই ও ভাতৃবধূ তাকে খুনের চেষ্টা করেছিল৷ ওই ঘটনায় কদমতলা থানার পুলিশ ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি ৩৪১/৩২৬/৪৩ ধারায় মামলা নিয়েছে৷ মামলা নম্বর ৩৪/২০১৯৷ কদমতলা থানার পুলিশ তদন্তে নেমে ২০ জুন ইছাইরপার এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে মূল অভিযুক্ত মকবুল আলীর স্ত্রী নমি বেগম ওরফে রাবিয়াকে আটক করে ধর্মনগর জেলার আদালতে প্রেরণ করেছিল৷ কিন্তু আদালতে জামিন পেয়ে যান নমি বেগম৷
এদিকে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, দীর্ঘদিন যাবৎ পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে জহুর উদ্দিন ও তার সৎ ভাই মকবুল আলীর মধ্যে বিবাদ চলছিল৷ এর জেরেই জহুর উদ্দিনের সৎ ভাইয়ের স্ত্রী কিছু লোক লাগিয়ে জহুরকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ৷ তবে, এই ঘটনার সঙ্গে নমি বেগমের স্বামী মকবুল আলীও জড়িত রয়েছে বলেও সন্দেহ পুলিশের৷ তাই, নমি বেগম ওরফে রাবিয়াকে আটক করেছিল কদমতলা থানার পুলিশ৷ যদিও তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান৷ এদিকে, তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি পুলিশের৷ পুলিশের কথায়, এই ঘটনায় আরো দুই ব্যক্তি জড়িত রয়েছে৷ তারাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জহুরের মুখ ও মাথায় এলোপাথাড়ি আঘাত করেছিল৷
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গোপন সূত্রের খবরে বুধবার বিকেলে ধর্মনগর অফিস টিলা সংলগ্ণ এলাকা থেকে ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মকবুল আলীকে জালে তুলতে সক্ষম হন তদন্তকারী অফিসার প্রাণজিৎ মালাকার৷
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড নমি বেগম ও তার স্বামী মকবুল আলীর সাথে বেঙ্গালুরু থাকতো৷ গত ১৩ জুন স্বামীর সাথে ব্যাঙ্গালোর থেকে ইছাইরপার গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন নমি বেগম৷ সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে তারা এসেছিলেন৷ ঘটনার পরের দিন বিমানে বেঙ্গালুরু ফিরে যান তারা৷ প্রায় দুই মাসের মাথায় মকবুল বেঙ্গালুরু থেকে ত্রিপুরায় ফিরলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়৷