নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ জুন৷৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য গড়তে সকলকে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি৷ কিন্তু নেশা সন্ত্রাসবাদ থেকেও আরও ভয়ানক৷ এই মারণ ব্যাধি পুরো সমাজের ক্ষতি করে৷ এই ব্যাধিকে নির্মল করতে আমাদের সকলকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে৷ অনুষ্ঠানে মাদক থেকে মুক্তি পেতে ত্রিপুরা সংলগ্ণ রাজ্যগুলিকে অভিযান চালানোর ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শুধু ত্রিপুরায় মাদক বিরোধী অভিযান চালালে চলবে না৷ কারণ এ-সব পাচারচক্রের জাল ত্রিপুরার পার্শবর্তী রাজ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে৷ এর জন্য তিনি বিশেষ করে অসম ও মিজোরামে এই অভিযান চালানোর আহ্বান রাখেন৷
মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব আজ সকালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১ নং সভাগৃহে আন্তর্জাতিক মাদক ও অবৈধ চোরাচালান বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলচনাচক্রে প্রধান অতিথির ভাষণে এই অভিমত ব্যক্ত করেন৷
প্রদীপ জেলে এই আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, ২৫ বছর ধরে ত্রিপুরাকে নেশা সামগ্রীর খোলাবাজার হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ অবাধে গাঁজা চাষ হতো৷ বাদ যেতো না রিজার্ভ ফরেষ্ট৷ অবাধে নেশার ট্যাবলেট, হেরোইন, বাউন সুুগার, ফেন্সিডিল, গাঁজা, মদ পাচার হতো৷ মামলা দায়ের হতো না৷ ভিডিও ক্লিপিং থেকে দেখেছি গ্রামে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীরা দা, লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন৷ ধরলে জামিনের জন্য অনেকে এগিয়ে আসতেন৷ যিনি দিশা দেবেন তিনিই ছিলেন দিশাহীন৷ তাই অপরাধ বেড়েই চলছিল৷ ২০১৮ সালের ৯ মার্চ নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়৷ এর পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে৷ মা-বোনেরা এখন পুলিশকে খবর দেন৷ গত ২৩ জন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার কিলোগ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে৷ কফ সিরাপ ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ১৪৫ বোতল, ইয়াবা ট্যাবলেট ৫ লক্ষ ১৯ হাজার ২৭৪টি, হেরোইন ৫৪১৩ গ্রাম উদ্ধার করা হয়েছে৷ চার শতাধিক মামলা রেজিস্টার করা হয়েছে৷ ৮৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন এরপরও পুলিশ ও জনগণকে আরও তৎপর হতে হবে৷ রাজ্যের মিজোরাম সীমান্ত লাগোয়া দামছড়া ও কা’নপুরে ড্রাগস-এর বাড়বাড়ন্ত রয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মা বোনেরা যখন জেগে উঠেন তখন নেশার মত অনেক ভ্রষ্টাচার দূর হয়ে যায়৷ একজন আদর্শ মা একজন আদর্শ সন্তান তৈরী করতে পারেন৷ এর প্রক’ষ্ট উদাহরণ গোমতী জেলার চন্দ্রপুরের দিব্যাঙ্গ সন্তান প্রলয় দে৷ তার মায়ের অনুপ্রেরণায় সে এবছর মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে৷ তাই গরিবী ও প্রতিবন্ধকতা কোন অভিশাপ নয়৷ অন্যরাও চেষ্টা করলে সফলতা পেতে পারে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ’এক নতুন ভারত’ এর স্বপ দেখছেন৷ দেশের বিকাশে তিনি এক নতুন দিশা দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী ’সবকা সাথ, সবকা বিকাশের সাথে সবকা বিশ্বাস’ জড়ে দিয়েছেন৷ আজ ১৩০ কোটি ভারতবাসীর মনে আশার স’ার হয়েছে৷ আমাদের রাজ্য সরকারও প্রধানমন্ত্রী পথ অনুসরণ করে চলেছে৷ রাজ্যকে স্বয়ম্ভর করতে ক’ষি, উদ্যান, পর্যটন, প্রাণী সম্পদ, মৎস্য, রেশম চাষ এই ক্ষেত্রগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷
এই ক্ষেত্রগুলিতে কম সময়ে রোজগারের সুুযোগ স’ষ্টি হয়৷ গতবছর ভারতীয় খাদ্য নিগমের মাধ্যমে ক’ষকদের কাছ থেকে কিলো প্রতি ১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১০ হাজার মে.টন ধান ক্রয় করা হয়েছে৷ এবছরও ধান কেনা হচ্ছে৷ বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারলে ধীরে ধীরে গাঁজাচাষ সহ মাদক চালান হাস পাবে৷ আমরা সকলকে নিয়েই এক নতুন ত্রিপুরা ও সর্বশ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়তে চাই৷
বিশেষ অতিথির ভাষণে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার অলক বলেন, রাষ্ট্রসংঘ ১৯৮৭ সাল থেকে আজকের দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়৷ এবছর এই দিনটির স্প্লোগান হল ’হেলথ ফর জাস্টিস, জাস্টিস ফর হেলথক্ত্র স্বাগত ভাষণে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহানির্দেশক রাজীব সিং জানান, রাজ্যকে নেশামুক্ত রাজ্য গড়তে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ দেশের সরকার এর প্রতিরোধে ১৯৮৫ সালে এন ডি পি এস অ্যাক্ট চালু করে৷ তিনি জানান, এখন পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার গাঁজা ধংস করা হয়েছে৷
আরক্ষা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে স্টেট ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরীর অধিকর্তা ড. এইচ কে পতিহারী, বি এস এফ’র ডি আই জি এ কে যাদব, রাজ্য পুলিশের ডি আই জি জি কে রাও ছাড়াও সি আর পি এফ, বি এস এফ, আসাম রাইফেলস, আরক্ষা প্রশাসনের আধিকারিকগণ, জওয়ানগণ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন৷ আলোচনাচক্রের পর মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব ফিতা কেটে নেশা বিরোধী অভিযানের সাফল্যের একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন৷ এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী পতাকা নেরে রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালীর সূচনা করেন৷ এই র্যালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিক্রমা শেষে পুনরায় রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে এসে সমাপ্ত হয়৷