নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জুন ৷৷ বিদ্যালয়ের ভেতরেই শিক্ষক এবং এলডি ক্লার্কের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে৷ ঝামেলা থামাতে গিয়ে মার খেলেন আরেক শিক্ষক৷ এই ঘটনায় আগরতলায় ধলেশ্বর স্বামী দয়ালানন্দ বিদ্যানিকেতনে তুলকালাম অবস্থা৷ পরিস্থিতি দিতে আসেন পশ্চিম জেলা শিক্ষা দপ্তরের ওএসডি দ্বীজলাল দেবনাথ৷ তাঁর কথায়, শিক্ষক এবং এলডি ক্লার্কের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে৷ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে৷
আজ দুপুরে ধলেশ্বর স্বামী দয়ালানন্দ বিদ্যানিকেতনে শিক্ষক উত্তম মজুমদার এবং এলডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধরের কথা কাটাকাটি হয়৷ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে রণেন্দ্রবাবু শিক্ষক উত্তম মজুমদারকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ৷ তাঁদের ঝামেলা থামাতে গিয়ে আরেক শিক্ষক চিত্তরঞ্জন ভৌমিক মার খেয়েছেন৷ তাঁর অভিযোগ, রণেন্দ্রবাবু তাঁকেও মেরেছেন৷
এ-বিষয়ে বিদ্যানিকেতনের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রীণা দত্ত জানান, সকালে হঠাৎ হইচই শুনতে পেয়ে গিয়ে দেখি, শিক্ষক উত্তম মজুমদার ও এলডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধরের ঝামেলা হয়েছে৷ তিনি জানান, আজ তাঁদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়৷ তখন তারা উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে মারধর করেন৷ তবে, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে৷ বিষয়টি পুলিশ এবং শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে৷
এদিকে, শিক্ষক উত্তম মজুমদার জানান, প্রফিডেন্ট ফান্ডের পাশবুক চেয়েছিলাম এলডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধরের কাছে৷ কিন্তু, টালবাহানা করছিলেন৷ তিনি বলেন, তার কাছ থেকে কসমেটিক্স কিনেছিলাম, সেই হিসাব চাইলে তিনি দিতে পারবেন না বলে সোজা জানিয়ে দেন৷ তখনই, তাঁর সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয়৷ কিন্তু, হঠাৎ তিনি মারতে শুরু করেন৷ উত্তমবাবু বলেন, আমাদের ঝামেলা থামতে শিক্ষক চিত্তরঞ্জন ভৌমিক এগিয়ে আসেন৷ তখন তাঁকেও মারধর করেন রণেন্দ্রবাবু৷ এদিন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত অনেকেই রণেন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন৷
শিক্ষকদের অভিযোগ, রণেন্দ্রবাবু প্রায়ই সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসেন না৷ উপরন্তু, যখন তখন তিনি বিদ্যালয় থেকে বাড়ি চলে যান৷ কোন প্রতিবাদ করা হলে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন৷ তাঁদের আরো অভিযোগ, এমন আচরণ রণেন্দ্রবাবু আগেও কয়েকবার অনেকের সাথে করেছেন৷ প্রতি ক্ষেত্রেই তিনি পার পেয়ে গিয়েছেন৷
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ওই ঘটনায় এল ডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এদিকে, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এল ডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধর৷ তাঁর দাবি, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের লিভিং সার্টিফিকেট প্রদানকে ঘিরে সাংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে৷ কিন্তু, এর জন্য তাঁকে দায়ী করা হচ্ছে বলে দাবি করেন রণেন্দ্রবাবু৷ তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে হেনস্তা করা হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি কাউকে মারধর করেননি৷
এদিকে, খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ঘটনার খোঁজখবর নিতে আসেন পশ্চিম জেলা শিক্ষা দপ্তরের ওএসডি দ্বীজলাল দেবনাথ৷ তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং ক্লার্কের মধ্যে মারধরের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ আগামীদিনে এধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে-বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ছাত্রছাত্রীদের সুকল লিভিং সার্টিফিকেট প্রদানকে ঘিরে ঝামেলার সূত্রপাত৷ কিন্তু, বিদ্যালয়ে এধরনের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ তিনি বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আজকের ঘটনার রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি৷ তাছাড়া, শিক্ষক উত্তম মজুমদার এবং এল ডি ক্লার্ক রণেন্দ্র কুমার ধরের আজকের ঘটনা সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য চেয়েছি৷ তিনি জানান, সমস্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সেই রিপোর্টগুলি শিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ এরপর উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা এই ঘটনা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷