১ জুলাই ৪ দিনের চিন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, হাসিনার এই সফরে দুই বিদ্যুৎ চুক্তি সই হবে

ঢাকা, ২২ জুন (হি.স.) : জুলাইয়ের শুরুতে চিন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত  হাসিনার এই চিন সফরকালে বিদ্যুতের দুই সঞ্চালন প্রকল্পে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দুই প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ বিতরণে গ্রিডলাইন বা সঞ্চালন লাইন শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। ডিপিডিসির প্রকল্পে ১৪০ কোটি ২৯ লাখ ও দ্বিতীয় প্রকল্পে ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে চিন। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চিন সফরের প্রস্তুতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই দুটি প্রকল্পে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হলে দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা বর্তমানের চেয়ে আরও উন্নত হবে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় চিনের সঙ্গে ২৭ প্রকল্পে সাড়ে ২২ বিলিয়ন ডলার ঋণের সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় ঋণ প্রক্রিয়া দেরি হয়। এই প্রেক্ষিতে  বিদ্যুৎ খাতের এই দুই প্রকল্পে ঋণ চুক্তির বিষয়ে এরই মধ্যে চিনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ২৭ প্রকল্পের মধ্যে ২০১৬ সালে একটি এবং ২০১৭ সালের চারটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি ইনফো-নেটওয়ার্ক, কর্ণফুলী নদী টানেল, চট্টগ্রামে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণ এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে চিনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে ঋণের শর্তাবলির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে যে, পাঁচ প্রকল্পে ঋণের সুদহার ২ শতাংশ। কিন্তু এ বছর নির্ধারিত বিদ্যুতের এই দুই প্রকল্পে সুদ হার বেড়ে হচ্ছে ৩ শতাংশ। এর সঙ্গে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা ফি এবং শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। চিন সাধারণত দুই প্রকার ঋণ দেয়। এর একটি হলো- গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল), অন্যটি প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি)। উভয় ঋণের সুদহার ধরা ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু এ বছর ঋণ চুক্তির জন্য নির্ধারিত দুই প্রকল্পে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দাবি করে চিন। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ( ইআরডি) সঙ্গে আলোচনা করে অবশেষে জিসিএল ঋণে সুদহার ২ শতাংশ এবং পিবিসি ঋণের সুদহার বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

ইআরডি সূত্র জানান, চিনের সঙ্গে এমওইউ অনুযায়ী ঋণ চুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো হলো- চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৮৩ একর জমিতে চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, সরকারি পাটকলগুলো আধুনিকায়ন, মংলা বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, ঢাকা-সিলেট মহসড়ক চার লেন করা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, সীতাকুন্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডবল লাইন ও ডবল গেজ রেললাইন নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসার জন্য পানি শোধনাগার নির্মাণ, পৌরসভার জন্য পানি সরবরাহ, পয়ঃনিস্কাশন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, ছয়টি টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন, গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *