BRAKING NEWS

সর্বদলীয় বৈঠকে এক দেশ এক নির্বাচনের জন্য কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত : রাজনাথ

নয়াদিল্লি, ১৯ জুন (হি.স.) :  এক দেশ এক নির্বাচনের প্রস্তাব খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে এমনই জানালেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে বৈঠকে আসা বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছে। সিপিআই এবং সিআইএ(এম) প্রস্তাবটি নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও, তারা বিরোধিতা করেনি। যে কমিটি গড়া হবে সেটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করবে। এদিনের বৈঠকে বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো দল উপস্থিত থাকলেও। অনুপস্থিত ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, বিএসপি, সপার মতো দলগুলি। বৈঠকের আগে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি জানিয়েছিলেন, এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে সবকটি রাজনৈতিক দলগুলি যদি ঐক্যমত্যে পৌঁছয়, তবে আদতে উপকৃত হবে দেশ। অন্যদিকে এই নীতির বিরোধিতা করেছে বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী, সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অন্যদিকে আই নীতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়ক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় মমতার নিন্দায় মুখর দিলীপ ঘোষ। 

রাজনাথ সিং আরও বলেন, এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে ৪০ রাজনৈতিক দলের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার মধ্যে উপস্থিত ছিল ২১ রাজনৈতিক দলের প্রধান। বাকি তিনটি রাজনৈতিক দল নিজেদের প্রতিনিধিও পাঠিয়েছে। টিআরএস, টিডিপি এবং আপের সভাপতিরা উপস্থিত না থাকতে পারলেও, তারা তাদের প্রতিনিধিদের বৈঠকে পাঠিয়েছিলেন। 

এদিনের বৈঠকে উল্লেখজনক রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তারা ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা, বিজেডি নবীন পট্টনায়ক, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জগনমোহন রেড্ডি। আমন্ত্রণ জানানো হলেও এদিনের বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন না তাঁদের মধ্যে অন্যতম  হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টি অখিলেশ যাদব, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন। 

এদিন মুক্তার আব্বাস নাকভি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ হল ভারত। তাই এই দেশের জন্য প্রয়োজন এক দেশ এক নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচন সদ্য শেষ হয়েছে। এখন চার থেকে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি এই বিষয়ে সবকটি রাজনৈতিক দল ঐক্যমত্যে পৌঁছয়। তবে উপকৃত হবে দেশ।    

গত রবিবার এক দেশ এক নির্বাচন নীতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য দেশের সবকটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে। সেই মতো বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে হবে এই বৈঠক। কিন্তু ইতিমধ্যেই বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী, ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন, তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, টিআরএস সভাপতি তথা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এবং টিডিপির সভাপতি এন চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না।

এই প্রসঙ্গে মুক্তার আব্বাস নাকভি বলেন, বৈঠকে যোগ না দেওয়াটা তাদের সমস্যা। সবকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করাটা একান্ত প্রয়োজন। সবকটি রাজনৈতিক দলের মতামত ব্যক্ত করার সেরা সুযোগ এই বৈঠক। 

এদিন একাধিক ট্যুইটবার্তায় মায়াবতী লেখেন, ব্যালটের বদলে সরকার ঔদ্ধত্যের সঙ্গে ইভিএমে নির্বাচন করিয়ে যাওয়ার ফলে দেশের সংবিধান বিপন্ন। জনগণ ইভিএমের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এদিন বৈঠকে ইভিএম প্রতি অনাস্থা নিয়ে যদি আলোচনা হত, তা হলে অবশ্য এই বৈঠকে আমি উপস্থিত থাকতাম। নির্বাচনের খরচ রাষ্ট্রের উপর চাপ বাড়াচ্ছে, তা যথাযথ নয়। দারিদ্রতা, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, হিংসা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। 

এক দেশ এক নির্বাচন নীতির সমালোচনায় মুখর হন সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুনিয়াদি স্তরে এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্র বিরোধী। সরাসরি সংসদীয় গণতন্ত্রিক ব্যবস্থার উপর আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে বেরিয়ে এসে সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, কেন্দ্র ও রাজগুলির নির্বাচন এক সঙ্গে হলে রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পাবে। এই নীতি যুক্তরাষ্রীরায় কাঠামো এবং গণতন্ত্র বিরোধী এবং সরাসরি সংসদীয় গণতন্ত্রিক ব্যবস্থার উপর আঘাত হানা হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে বিপন্ন হবে সংবিধান। 

একই সুর শোনা গেল আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কন্ঠে। বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভিশন নেই। কোনও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়নি। ফলে এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। 
এক দেশ এক নির্বাচন নীতিকে পূর্ণ সমর্থন জানালেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। 

এদিন প্রধানমন্ত্রী ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে নবীন পট্টনায়ক বলেন, বারবার নির্বাচন হলে উন্নয়নের গতি স্তব্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এই নীতি। এক দেশ এক নির্বাচন নীতিকে পূর্ণ সমর্থন করে বিজেডি। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে দেওয়া-নেওয়ার নীতি নিয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিলকেও পূর্ণ সমর্থন করবে বিজেডি বলে জানিয়েছেন তিনি। ওডিশায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেন নবীন পট্টনায়ক। দেশ এবং জনগণের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাতে তাঁর সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠির প্রেক্ষিতেই সরব হন রাজ্য বিজেপি সভাপতি । এদিন দিলীপ ঘোষ বলেন, এটা নতুন নয় । উনি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেন না । প্রধানমন্ত্রী ডাকলে যেতে পারেন না । এটাই ওনার রাজনীতি । মানুষ সব দেখছে । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *