নয়াদিল্লি, ১৪ জুন (হি.স.) : এনআরএস কাণ্ডের রেশ ছড়িয়েছে গোটা দেশে। এই অবস্থায় আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এনআরএস কাণ্ডে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে কার্যত সমর্থন করে গোটা ঘটনার জন্য ফের পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলে শুক্রবার এমনই পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখতে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠিও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি গোটা দেশে যেভাবে চিকিৎসকেরা এনআরএস-এর চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন হর্ষ বর্ধন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি এবং কঠোর অবস্থানের জন্যই জুনিয়র ডাক্তাররা ক্রুদ্ধ হয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছেন বলে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তাঁর বক্তব্য, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, সেখানে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ‘‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আর্জিও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের কাছে তাঁর আর্জি, পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে প্রতীকী প্রতিবাদ করুন।
এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই আন্দোলন এনআরএস-এর গণ্ডি টপকে শুধু কলকাতা বা এ রাজ্য নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। এনআরএস-এর জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন দিল্লির এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আন্দোলনের আঁচ লেগেছে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ছত্তীসগঢ়-সহ প্রায় গোটা দেশে। ফলে কার্যত সারা দেশেই স্বাস্থ্য পরিষেবা এক বিরাট সঙ্কটের মুখে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার টুইটারে হর্ষ বর্ধন লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি জানাচ্ছি, বিষয়টি ব্যক্তিগত সঙ্ঘাত হিসেবে নেবেন না।’’ একই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘উনি চিকিৎসকদের চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁরা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন এবং কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখব এবং ফোনেও বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব।’’
একই সঙ্গে এনআরএস-এর আন্দোলনের আঁচে গোটা দেশেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় সঙ্কট দেখা দেওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। চিকিৎসকদের মূল দাবি নিরাপত্তা। তাতে সায় দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন শুক্রবার টুইট করেছেন, ‘‘চিকিৎসকদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।’’ পরিস্থিতি যে ক্রমেই ব্যাপক আকার নিচ্ছে এবং ভাইরাসের মতো গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে, সেটা বুঝেই নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন হর্ষ বর্ধন।
অন্য দিকে চিকিৎসকদের আন্দোলনে কার্যত পরোক্ষে সায় দিয়েছেন হর্ষ বর্ধন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকদের কাছে আমার আবেদন, ‘‘আপনারা শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ করুন এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন।’’
অন্য দিকে শুক্রবার এইমস-এর একটি প্রতিনিধি দল এ দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের দাবিদাওয়া জানিয়ে এসেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁদেরও নিরপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।