BRAKING NEWS

মানকাচরে বিএসএফের বন্দুক কেড়ে পুকুরে, গ্ৰেফতার এক, জওয়ানের বিরুদ্ধে নাবালিকা নিগ্রহের অভিযোগ

মানকাচর (অসম), ৮ জুন (হি.স.) : ঈদের দিন নিম্ন অসমের মানকাচরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কাকড়িপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে ধুন্দুমার কাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিলেন একাংশ জনতা। সাত বছরের এক নাবালিকার সঙ্গে যৌন নিৰ্যাতন চালানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল সংঘর্ষ। তখন বিএসএফ-এর ওপর হামলাকারী এক সদস্য কর্তব্যরত জওয়ানের সার্ভিস অত্যাধুনিক রাইফেল কেড়ে তা সংলগ্ন একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। তবে রাইফেলটি পুকুরে ফেলার আগে তা থেকে ম্যাগাজিন বের করে নিয়েছিল অভিযুক্ত এক যুবক। 

পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট যুবকের বিরুদ্ধে মানকাচর থানায় এফআইআর দায়ের করে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাতে কাকড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জনৈক মাইদুল হুসেনের ছেলে আনোয়ার হুসেনকে (২৭) গ্ৰেফতার করেছে পুলিশ। আজ তাকে হাটশিঙিমারির বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত তাকে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত পাঁচ জুন, ঈদের দিন মানকাচরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কাকড়িপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন সীমান্তে সাত বছরের এক নাবালিকার ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন বলে জনৈক অমর নায়ক নামের জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, স্থানীয় মানুষ ঈদের নামাজে যখন এলাকার মসজিদে ব্যস্ত ছিলেন তখন ওই নাবালিকা তার মায়ের সঙ্গে সীমান্তের কাছে ধান শুকোতে গিয়েছিল। ঘরে ফিরে আসার সময় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে কৰ্তব্যরত জওয়ান অমর নায়ক দোকান খেকে গুটখাজাতীয় কিছু কিনে আনতে টাকা নিয়ে যেতে নাবালিকাটিকে তাঁর কাছে ডাকেন। নাবালিকাটি তার কাছে যায়। তখন জওয়ান অমর নাকি কাপড় খুলে তার গোপনাঙ্গ নাবালিকাকে দেখিয়ে মেয়েটির কাপড় খোলার চেষ্টা করেন। বেগতিক দেখে জওয়ানের হাতে কামড় দিয়ে নাবালিকাটি দৌড়ে পালিয়ে যায়।

অভিযোগ, এখানেই থেমে থাকেননি জওয়ান অমর নায়ক। লাঠি নিয়ে তিনি মেয়েটির পিছনে তেড়ে যান। ঘটনাটি মায়ের চোখে পড়ে। মা এগিয়ে গিয়ে ঘটনাকে কেন্দ্র করে জওয়ানের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধান। ঠিক সে-সময় গ্রামের পুরুষরা ঈদের নামাজ সম্পন্ন করে যার যার ঘরে ফিরছিলেন। ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাঁরাও বিএসএফ জওয়ানের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন। জনতার ভিড় দেখে রাইফল তুলে গুলি করবেন বলে নাকি হুমকি দেন তিনি। এতে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা কৰ্তব্যরত জওয়ানকে গণপ্ৰহার শুরু করেন। এমতাবস্থায় সুযোগ বোঝে এক দুর্বৃত্ত জওয়ানের হাত থেকে তাঁর রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি ভরতি ম্যাগাজিন খুলে রাইফলটি পুকুরে ফেলে দেয়। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এদিকে গণপিটুনিতে জওয়ান আমর নায়ক আহত হয়েছেন। ধারালো অস্ত্রে ঘায়ে তাঁর মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। 

আন্তর্জীতিক সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়ন্ত্ৰণের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন বিএসএফ-এর শীৰ্ষ আধিকারিক এবং জেলার পুলিশ সুপার। পুলিশ ও বিএসএফ-এর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়্ন্ত্ৰিত হলেও রাইফেল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়। ৩৭৮/১৯ নম্বরে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৭/১৪৭/১৪৯/৩৫৩/৩২৬/৩০৭ এবং ৩৮২ ধারায় মামলা রুজু করে মানকাচর পুলিশ তদন্তে নামে। এই মামলায় রাইফেল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে অন্যতম অভিযুক্ত আনোয়ার হুসেনকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে নাবালিকাকে যৌন নিৰ্যাতনের অভিযোগে ঘটনার দুদিন পর গতকাল ভুক্তভোগীর মা মানকাচর থানায় বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৮২/১৯ নম্বরে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৪২/৫০৬ ধারায় এক মামলা বিএসএফ জওয়ান অমর নায়কের বিরুদ্ধে রুজু করেছে মানকাচর পুলিশ।

সীমান্তে সংঘটিত এই ঘটনার পর গ্রামের মানুষ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। যে-কোনও কাউকে রাতে বিএসএফ তুলে নিয়ে যেতে পারে বলে আতঙ্কিত মানুষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে গ্রামে যান প্ৰাক্তন বিধায়ক জাবেদ ইসলাম, পুলিশ সুপার কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া, বিএসএফ-এর শীৰ্ষ আধিকারিকরা। তাঁরা গ্রামের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের সঙ্গে এক যৌথ সমন্বয় সভা করেন। যারা অপরাধ করেছে পুলিশকে তাদের গ্ৰেফতার করতে হবে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন সভায়। বিশেষ করে বিএসএফ-এর রাইফেল কেড়ে নেওয়ার অপরাধে সংশ্লিষ্ট দুৰ্বৃত্তদের শীঘ্র গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। পাশাপাশি নাবালিকার সঙ্গে যৌন নিৰ্যাতন সংক্রান্ত ঘটনারও তদন্ত করা দরকার বলে উপস্থিত উভয় পক্ষ স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

পুলিশ সুপার কঙ্কনজ্যোতি শইকিয়া আজ এই খবর দিয়ে দাবি করেছেন, কাকড়িপাড়া গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্ৰীতি ফিরিয়ে আনতে তাঁরা প্ৰচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে কোনও দোষীকে পুলিশ ছাড়বে না বলেও জোরের সঙ্গে বলেছেন পুলিশ সুপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *