নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মে৷৷ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আজ বিনম্রতা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ হয়েছে ত্রিপুরায়৷ তাঁর ১২০তম জন্মজয়ন্তী ত্রিপুরায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়েছে৷
প্রভাতী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ সকালে নজরুল কলাক্ষেত্র প্রাঙ্গণে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তীতে কবি প্রণাম অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়৷ তথ্য ও সংসৃকতি দফতর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে কবির মূর্তিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের সচিব মানিক লাল দে, অধিকর্তা আশুদেব দাস, রাজ্য সাংসৃকতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান সুুভাষ দেব, সংগীত শিল্পী উৎপল বিশ্বাস, বিশিষ্ট বেহালা বাদক সুুবল বিশ্বাস, দপ্তরের বরিষ্ঠ আধিকারিকগণ ও শিল্পীগণ৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের সচিব মানিক লাল দে বলেন, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তর কাজী নজরুল ইসলামের আদর্শ ও চিন্তাধারা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে৷ আগে এ অনুষ্ঠান একদিন করা হত ৷ এখন দু’দিন করা হচ্ছে ৷ আজ ব্লক থেকে রাজ্যস্তরে সর্বত্র বিদ্রোহী কবির জন্মদিন উদযাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ তিনি বলেন, কবি নজরুল বিভেদহীন ও সমৃদ্ধশালী ভারতের স্বপ্ণ দেখেছিলেন ৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর লেখনী স্মরণীয় হয়ে থাকবে ৷
বিশেষ অতিথির ভাষণে রাজ্য সাংসৃকতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান সুুভাষ দেব বলেন, নজরুল ছিলেন দেশপ্রেমিক ও বিদ্রোহী কবি ৷ সমস্ত জাতপাতের ঊধর্ে উঠে কবি সাম্যের কথা লিখে গেছেন ৷ তাই আমাদের উচিত তাঁর পথ অনুসরণ করে নতুন রূপে দেশকে গড়ে তোলা ৷
অনুষ্ঠানে আসা সংগীত কলাকেন্দ্রের শিল্পীরা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ৷ এছাড়া বিভিন্ন সাংসৃকতিক সংস্থার শিল্পীরা নজরুল সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন ৷ অনুষ্ঠানে বহু শিল্পী, সাহিত্যিক ও গুণীজন উপস্থিত ছিলেন৷
এদিকে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের উদ্যোগে আজ থেকে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নং প্রেক্ষাগৃহে দু’দিনব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছে ৷ চলবে ২৭ মে পর্যন্ত ৷ প্রদীপ জ্বালিয়ে দু’দিনব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে নেতাজী সুুভাষ চন্দ্র বসুু মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড় ধনঞ্জয় গণচৌধুরী ৷ তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, বাংলা সাহিত্যে নজরুলের আবির্ভাব ছিল ধূমকেতুর মত ৷ তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি ভাস্বর হয়ে থাকবে ৷
ড় গণচৌধুরী বলেন, নজরুল ছিলেন মানবতাবাদী ও বিদ্রোহী কবি৷ ১৯২১ সালে তাঁর বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হয়৷ তাঁর স্থান রবীন্দ্রনাথের পরই আমাদের মনে গেঁথে থাকবে৷ ভাষণে ড় গণচৌধুরী নজরুলের শৈশব কাল, শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং নতুন প্রজন্মকে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক মাইকেল মধুসূদন দত্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড় কমল আচার্য বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন জনজাগরণের কবি ৷ তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক ও মানবতাবাদী কবি ৷ তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নানা কবিতা, গান ও প্রবন্ধ লেখেন ৷ তিনি সারাজীবন সাম্যের গান গেয়ে গেছেন ৷ তাঁর চিন্তা, চেতনা ও আদর্শ বর্তমান প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে ৷ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের অধিকর্তা আশুদেব দাস বলেন, কাজী নজরুলের সৃষ্টি ও চেতনাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই দফতর ব্লক, মহকুমা ও জেলাস্তরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ৷ এ বছর থেকে এই অনুষ্ঠান দু’দিন করা হয়েছে ৷ স্বাগত ভাষণ দেন তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের উপ-অধিকর্তা ভাস্কর দাসগুপ্ত ৷
অনুষ্ঠান শুরুর আগে অধ্যাপক ড় ধনঞ্জয় গণচৌধুরী, অধ্যাপক ড় কমল আচার্য, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের অধিকর্তা আশুদেব দাস, উপ-অধিকর্তা ভাস্কর দাসগুপ্ত, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুভাষ দেব সহ বিভিন্ন শিল্পী ও গুণীজন কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শচীন দেববর্মণ স্মৃতি সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয়ের শিল্পীগণ ৷ এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার শিল্পীদের নজরুল সংগীত, নৃত্য ও বেহালা বাদন দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয় ৷ এছাড়া রংপীঠ নাটকটিও মঞ্চস্থ হয়েছে ৷
অন্যদিকে, তথ্য ও সংসৃকতি দফতরের উদ্যোগে আজ সাব্রুমে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী পালন করা হয় ৷ আজ সকালে সাব্রুমের আনন্দপাড়াস্থিত নজরুল পার্কে প্রভাতী কবি প্রণাম অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ৷ এই অনুষ্ঠানে কবি মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্ট লোকসংসৃকতি গবেষক ড় রঞ্জিত দে, শিক্ষক দীপক দাস ও কান্তি লাল বসাক, বিশিষ্ট কবি অশোকানন্দ রায়বর্ধন সহ বহু শিল্পী ও সাংসৃকতিক কর্মীগণ ৷ অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীগণ নজরুল গীতি ও নজরুল কবিতা আবৃত্তি করেন৷ কবির জীবনী ও সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আলোকপাত করেন৷ এর আগে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে প্রভাতফেরি সাব্রুম শহর পরিক্রমা করেছে৷ এছাড়াও দুপুরে সাব্রুম টাউন হলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সাংসৃকতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ৷

