নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ মে৷৷ অবৈধ গর্ভপাতের ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷ এই গুরুতর অপরাধের জন্য ত্রিপুরার স্বাস্থ্য দপ্তর তাঁকে বরখাস্ত করেছে৷ বুধবার বীরচন্দ্র মনু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হঠাৎ অভিযানে নেমে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ দুই মহিলাকে গর্ভপাত করানোর সময় ডাঃ অজয় বিশ্বাসকে হাতেনাতে ধরেছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে শান্তিবাজার থানায় মামলা হয়েছে৷

প্রসঙ্গত, বীরচন্দ্র মনু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গর্ভপাত করানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ এ-বিষয়ে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন জানিয়েছেন, স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ডাঃ অজয় বিশ্বাসকে গর্ভপাত করাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কথায়, বুধবার সকালে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাই বীরচন্দ্রমনু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভপাত হবে৷ সেই খবর পেয়েই স্বাস্থ্য সচিব সমরজিৎ ভৌমিক এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ জে কে দেববর্মাকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দেই৷ যাওয়ার সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ এস কে চাকমাকেও সেখানে যাওয়ার জন্য খবর পাঠানো হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, গোপনীয়তা বজায় রেখে ওই হাসপাতাল অভিযান চালানো হয়েছিল৷ সেখানে গিয়ে দুই জন মহিলাকে গর্ভপাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তা ধরে ফেলি৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিযান আঁচ করতে পেরে দুই মহিলাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷ কিন্তু, আমাদের নজর এড়াতে পারেননি৷ তাঁর দাবি, দুই মহিলাকে সেদিন গর্ভপাত করা হচ্ছে, রেজিস্ট্রারে এমন কোন রেকর্ড ছিল না৷ শুধু তাই নয়, জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত রেজিস্ট্রারে মাত্র ১৫টি গর্ভপাতের রেকর্ড রয়েছে৷ অথচ, অভিযোগ উঠেছে প্রতিদিন ৩-৪টি গর্ভপাত হচ্ছে এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মোটা টাকার বিনিময়ে এধরনের অবৈধ কাজ করছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রী দাবি করেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনে একটি পরিত্যক্ত কূয়োতে প্রচুর ভ্রুণ এবং সদ্যজাত শিশুর মৃতদেহ রয়েছে বলে হদিশ মিলেছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বক্তব্য, গর্ভস্থ সন্তান ৭-৮ মাস বয়স, এমন ক্ষেত্রেও গর্ভপাত করানো হচ্ছে৷ কখনো প্রসবের আগেই শিশুটিকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে, প্রসব হওয়ার পর মেরে ফেলা হচ্ছে৷ তাছাড়া, কন্যা ভ্রুণগর্ভপাত হচ্ছে৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দাবি, এর পেছনে বিরাট চক্র জড়িত রয়েছে৷ কারণ, জাল সাব্রুম, মনু, বিশালগড়, বিলোনীয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া দিয়েছিলেন৷
সে মোতাবেক শান্তিরবাজার থানায় ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দক্ষিণ জেলার সিএমও ডাঃ শঙ্কর দাস৷ শান্তিরবাজার থানার এসআই শঙ্কর সরকার জানিয়েছেন, ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩১২/৫১১/৩৫৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে৷
স্বাস্থ্য দপ্তর অবৈধ গর্ভপাতের ঘটনায় ভিষণ নড়েচড়ে বসেছে৷ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব তথা অধিকর্তা ডাঃ জে কে দেববর্মা ডাঃ অজয় বিশ্বাসকে বরখাস্তের আদেশ জারি করেছেন৷ বরখাস্ত থাকাকালীন ডাঃ বিশ্বাসকে বীরচন্দ্র মনুতে অবস্থান করতে হবে৷ তাঁর ছুটি বাতিল করে দিয়েছে দপ্তর৷ শুধু তাই নয়, বরখাস্ত থাকাকালীন বীরচন্দ্র মনুর বাইরে যেতে পারবেন না তিনি, এমন আদেশ দেওয়া হয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সমস্ত আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে৷ তাঁর মাধ্যমেই ত্রিপুরায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে৷ যাতে কেউ এধরনের জঘন্য কাজ না করেন৷