নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মে৷৷ অবৈধ গর্ভপাতের ঘটনায় হাতেনাতে ধরেছেন ত্রিপুরার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন৷ দক্ষিণ জেলার বীরচন্দ্র মনু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাঃ অজয় বিশ্বাস দুই মহিলাকে গর্ভপাত করানোর সময় তিনি ধরা পড়েছেন৷ শুধু তাই নয়, হাসপাতালের পেছনে একটি পরিত্যক্ত কূয়ো থেকে প্রচুর ভ্রুণ এবং সদ্যজাত শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে৷ এ-বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন জানিয়েছেন, সামান্য কিছু টাকার জন্য অবৈধভাবে গর্ভপাত করছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷ তিনি গত আড়াই বছরে গর্ভপাত করে কয়েক হাজার শিশু হত্যা করেছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷

বীরচন্দ্র মনু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গর্ভপাত করানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ আজ সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন জানিয়েছেন, স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ডাঃ অজয় বিশ্বাসকে গর্ভপাত করাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা হয়েছে৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কথায়, আজ সকালে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাই বীরচন্দ্রমনু প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভপাত হবে৷ সেই খবর পেয়েই স্বাস্থ্য সচিব সমরজিৎ ভৌমিক এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ জে কে দেববর্মাকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দেই৷ যাওয়ার সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ এস কে চাকমাকেও সেখানে যাওয়ার জন্য খবর পাঠানো হয়৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, গোপনীয়তা বজায় রেখে ওই হাসপাতাল অভিযান চালানো হয়েছিল৷ সেখানে গিয়ে দুই জন মহিলাকে গর্ভপাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তা ধরে ফেলি৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিযান আঁচ করতে পেরে দুই মহিলাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷ কিন্তু, আমাদের নজর এড়াতে পারেননি৷ তাঁর দাবি, দুই মহিলাকে আজ গর্ভপাত করা হচ্ছে, রেজিস্ট্রারে এমন কোন রেকর্ড ছিল না৷ শুধু তাই নয়, জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত রেজিস্ট্রারে মাত্র ১৫টি গর্ভপাতের রেকর্ড রয়েছে৷ অথচ, অভিযোগ উঠেছে প্রতিদিন ৩-৪টি গর্ভপাত হচ্ছে এই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মোটা টাকার বিনিময়ে এধরনের অবৈধ কাজ করছিলেন ডাঃ অজয় বিশ্বাস৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রী আজ আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পেছনে একটি পরিত্যক্ত কূয়োতে প্রচুর ভ্রুণ এবং সদ্যজাত শিশুর মৃতদেহ রয়েছে বলে হদিশ মিলেছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বক্তব্য, গর্ভস্থ সন্তান ৭-৮ মাস বয়স, এমন ক্ষেত্রেও গর্ভপাত করানো হচ্ছে৷ কখনো প্রসবের আগেই শিশুটিকে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে, প্রসব হওয়ার পর মেরে ফেলা হচ্ছে৷ তাছাড়া, কন্যা ভ্রুণ গর্ভপাত হচ্ছে৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দাবি, এর পেছনে বিরাট চক্র জড়িত রয়েছে৷ কারণ, জাল সাব্রুম, মনু, বিশালগড়, বিলোনীয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, শান্তিরবাজার থানায় ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ দক্ষিণ জেলার সিএমও ডাঃ শঙ্কর দাস মামলা করেছেন৷ শান্তিরবাজার থানার এসআই শঙ্কর সরকার জানিয়েছেন, ডাঃ অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধি ৩১২/৫১১/৩৫৩ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে৷ তবে, খবর লেখা পর্যন্ত ডাঃ অজয় বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়নি৷

