নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ মে৷৷ কাল বৈশাখীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড রাজধানী আগরতলা শহর, শহরতলী সহ গোটা রাজ্য৷ বুধবার প্রাক্ সন্ধ্যায় আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়৷ কিছুক্ষণ হালকা মাঝারি বৃষ্টির পর কাল বৈশাখীর ঝড় আছড়ে পড়ে রাজ্যের উপর৷ গাছপালা ভেঙে পড়ে৷ বিদ্যুতের খুটি ভেঙে যায়৷ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বিদ্যুৎ পরিষেবা৷ গাছ ভেঙে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট আকটে পড়ে৷ ফলে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে৷ আটকে পড়েন মানুষজন৷ অফিস ফেরত মানুষজন পড়েন জটিল সমস্যায়৷ বৃষ্টির পরে রাজধানী আগরতলা শহরের সবকটি সড়ক পথে হাটু থেকে কোমড় জল৷ বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল৷ কেউ অফিসের ভিতরে আটকে পড়েন৷ আবার অনেককে অফিস থেকে বের হয়ে কোনো দোকান বা বারান্দায় আশ্রয় নেয়৷ সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে মেঘ কেটে যায়৷ কিন্তু রাস্তা ঘাটে জল জমে থাকায় অফিস যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনের বাড়ি ঘরে ফেরা কষ্টকর হয়ে উঠে৷ ক্ষনিকের বৃষ্টিতে রাজধানী আগরতলা শহরের এহেন বানভাসী অবস্থায় ক্ষুভে ফুঁসছেন সব অংশের মানুষজন৷
ঘণ্টা দেড়েকের ভারী বর্ষণে ফের জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে রাজধানী আগরতলা৷ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় নিত্যযাত্রীরা ভীষণ অসুবিধায় পড়েছেন৷ এদিকে, আগরতলার কলেজটিলা এলাকায় দু-দিকে দুটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করেছে৷ বুধবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঝড় আছড়ে পড়ে আগরতলায়৷ আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্য অনুসারে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার৷ ঝড়ের সাথে প্রবল বর্ষণে মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আগরতলা৷ বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে৷ তবে মারাত্মক ক্ষতি হয়নি বলে দাবি বিদ্যুৎ দফতরের৷ এদিকে, কলেজ টিলায় দু-ধারে দুটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করেছে৷ তাতে কয়েকশো গাড়ি আটকে পড়েছে৷ এদিন ঘণ্টা দেড়েকের প্রবল বর্ষণে আগরতলায় বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে গিয়েছে৷ বনমালিপুর, আরএমএস চৌমুহনি, বিদুরকর্তা চৌমুহনি, ওরিয়েন্ট চৌমুহনি, বোধজং চৌমুহনি, জেকশন গেইট, থানা রোড, মন্ত্রীবাড়ি রোড এলাকায় রাস্তায় জল জমে গিয়েছে৷ তাতে, নিত্যযাত্রীরা ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন৷আগরতলায় জল নিষ্কাশনি ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে প্রতি বছর বৃষ্টিতে শহর জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ আজ বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় ট্রাফিক ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছিল৷ যাতায়াতের অসুবিধার কারণে যানজট দেখা দিয়েছিল৷ বিশেষ করে, লক্ষ্মীনারায়ণ চৌমুহনি থেকে গণরাজ চৌমুহনি, উত্তর গেইট থেকে কর্ণেল চৌমুহনি রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, শহরের বিভিন্ন ফাঁড়ি রাস্তায়ও প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে৷
অনেকেই প্রশ্ণ তুলেছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়ে৷ গত বছর বানভাসী রাজধানী সফর করে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ পরবর্তী বর্ষার আগেই রাজধানীবাসীকে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রতিশ্রুতি বানের জলের মতোই ভেসে গেছে৷ স্বভাবতই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন পথ চলতি মানুষজন৷
বুধবার প্রাক্ সন্ধ্যার ঝড় বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে৷ বহু বাড়িঘর ভূপাতিত হয়েছে৷ অনেকেই নিরাপথ আশ্রয়ের জন্য প্রতিবেশীর বাড়িঘরে রাত কাটাতে ঠাই নিয়েছেন৷ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা খোদ রাজধানী আগরতলা শহরে স্তব্দ হয়ে পড়েছে৷ রাজ্যের অন্যান্য স্থানের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর৷ বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ নিগমকে পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে কয়েকদিন সময় কাটাতে হবে৷ বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীরা দুর্যোগের পর পরই পরিষেবা স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ কিন্তু যেভাবে প্রকৃতির রোষানল আঘাত এনেছে তা মোকাবেলা করতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে৷ এদিকে প্রশাসন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতি নিরোপনের জন্য রাতেই নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ রাত পোহালেই প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা ক্ষয়ক্ষতি নিরোপনের হাত লাগাবেন৷ রাজ্য প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের আপদকালীন সাহায্য প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে৷