BRAKING NEWS

উত্তরপূর্বকে পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত করবেন, কং কেবল ভোটব্যাংকের রাজনীতি করে, অরুণাচলে মোদী

পাসিঘাট (অরুণাচল প্রদেশ), ৩ এপ্রিল (হি.স.) : ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে যে মাঠে এসে বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন, পাঁচ বছর পর সেই মাঠে নবনির্মিত ক্রীড়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। এটাই বিজেপি এবং কংগ্রেস সরকারের পার্থক্য। পাঁচ বছর আগে এই মাঠ ছিল পরিত্যক্ত কৃষিখেত। আজ সেই পরিত্যক্ত মাঠে গড়ে ওঠেছে অরুণাচল প্রদেশের বৃহৎ ক্রীড়া ময়দান। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাটে আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টেডিয়াম গড়েই তাঁর কাজ শেষ নয়, এবার এই রাজ্য থেকে দক্ষ ফুটবলার তৈরি করার পালা। কংগ্রেসকে ঠুকে মোদী বলেন, যাঁরা বিগত সাত দশকে এই অঞ্চলকে অন্ধকারের গহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল, তাঁর পাঁচ বছরের আমলে তা থেকে তুলে আনার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ‘পাসিঘাট এবং ইটানগরকে স্মাৰ্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি কেবলমাত্র আপনাদের ভালোবাসা এবং আশীর্বাদের দরুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাবেশে গতবারের চেয়ে আজকের রেকর্ড সংখ্যক জনতার আগমনে প্রমাণ হচ্ছে, এখানকার মানুষ আমাকে এবং আমার দলকে কত ভালোবাসেন। আমি আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান পাই-পাই করে চোকানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,’ বলেন মোদী। উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত করেই ছাড়বেন। এ কাজ এত সহজ নয়। এ কাজ কংগ্রেসের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জনতার আশীর্বাদ আছে বলেই, যে কাজ ৭০ বছরে কংগ্রেস করতে পারেনি তা ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত জাতীয় সড়ক, যাতায়াতের ক্ষেত্ৰে বহু কাজ করতে পেরেছেন। তেজু এবং পাসিঘাটে বিমানবন্দর, নাহরলগুন–গুয়াহাটি চলচাল করিয়েছেন অরুণাচল এক্সপ্ৰেস ট্রেন। ‘এসবই হল আপনাদের বিশ্বাসের ফল।’ সমাবেশে বক্তব্য মোদীর।

নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, এবারের নিৰ্বাচন ভরসা এবং ভ্ৰষ্টাচারের নিৰ্বাচন। এবারের নিৰ্বাচন উত্তর–পূর্বাঞ্চলের বিকাশে দিবারাত্রি একাকার করার পক্ষে এবং উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে উপেক্ষা করার বিরুদ্ধে নিৰ্বাচন। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে উদাত্ত কণ্ঠে মোদী বলেন, ‘এবারের নিৰ্বাচন আপনাদের পরম্পরাকে অপমান করার বিরুদ্ধে এবং গৌরবকে স্বীকারকারীদের সপক্ষে নিৰ্বাচন।’

স্থানীয়দের উদ্দেশে মোদীর বক্তব্য, ‘আপনাদের আশা, বিশ্বাস, প্ৰয়োজনের প্ৰতি লক্ষ্য রেখে অহৰ্নিশি কাজ করছি। প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়ে দশকের পর দশক ভুলে যাওয়ার মানুষ আমি বা আমার দল নয়। আমরা গরিব বোনদের রান্নাঘরের ধোঁয়া থেকে মুক্ত করার প্ৰতিশ্ৰুতি দেইনি। তবু আজ ৭ কোটির বেশি গরিব পরিবারকে বিনামূল্যের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি কৃষকদের নাম নিয়ে ভোট ভিক্ষার মতো পাপ করিনি। অথচ কৃষকদের জন্য ‘প্ৰধানমন্ত্ৰী কৃষক সম্মান’ নামের এক প্রকল্পের প্রচলন করেছি। আমি সুস্বাস্থ্যের প্ৰলোভন দিইনি। তার পরও কিন্তু ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্প চালু করেছি। আজ বিশ্বের মধ্যে সৰ্ববৃহৎ প্রকল্প এই ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্প।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোটা দেশে বাদ দিয়ে কেবল অরুণাচল প্রদেশের ৩ লক্ষ দরিদ্ৰ পরিবারকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যের চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছে আমার সরকার। আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোর মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি ‘আয়ুষ্মান’-এর সুবিধাভোগী রয়েছেন।’

কংগ্রেসকে একহাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফের বলেন, ‘ভোটব্যাংকই শতাব্দি প্রাচীন এই দলের সবকিছু। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনতা কংগ্ৰেসকে বিদায় দিয়েছেন, এই অঞ্চলের মানুষ মন থেকে মুছে ফেলেছেন কংগ্রেসকে। দিল্লিতেও এখই অবস্থা। তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘কংগ্ৰেসের কতজন প্ৰধানমন্ত্ৰী হয়েছেন মনে আছে? এঁরা কতবার অরুণাচল প্রদেশে এসেছেন তা আপনাদের ভোলার কথা নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার প্ৰথমবারের মতো উত্তর–পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক মন্ত্ৰালয় তৈরি করেছিলেন। এর পর দশ বছর কংগ্রেস রাজত্ব করেছে দেশে। কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্যে আসেননি। অথচ প্রতি পনেরো দিনে আমার আমলে কোনও না-কোনও কেন্দ্ৰীয় মন্ত্ৰীকে উত্তর–পূর্বাঞ্চলে পাঠিয়েছি। গত পাঁচ বছরে আমি নিজে ৩০ বারের বেশি উত্তর–পূর্বাঞ্চলে এসেছি। এখানকার সুখদুখের খবর নিয়েছি। ভারতবৰ্ষের প্ৰতিটি কোণার প্রতি আমার মমতা আছে। প্রতিটি মানুষ কে কেমন আছেন তার খোঁজখবর নেই। কারোর সমস্যা থাকলে তার সমাধান করার চেষ্টা করি। এর ঠিক উল্টো কংগ্ৰেসের নীতি। এদের চোখ কেবল ভোটব্যাংকের প্রতি। ভোটের জন্য এই দল কাজ করে।’ তাই সবকিছু বিবেচনা করে আগামী ১১ এপ্ৰিল বিকাশের ডাবল ইঞ্জিনকে আরও শক্তিশালী মজবুত করতে বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

প্রসঙ্গত, অরুণাচল প্ৰদেশের পাসিঘাটে আজকের নিৰ্বাচনি প্ৰচারে যোগ দিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে বিশেষ বিমানে উজান অসমের ডিব্ৰুগড়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ডিব্রুগড়ের মোহনবাড়ি বিমানবন্দরে অবতরণ করে তিনি সোজা চলে যান ভারতীয় সেনাবাহিনীর এসিএস ৭৬৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের অতিথিশালায় রাত সেখানে কাটিয়ে আজ সকালে নির্ধারিত সময় হেলিকপ্টারে পাসিঘাট আসেন প্রধানমন্ত্রী। পাসিঘাট থেকে তিনি চলে যান পশ্চিমবঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *