BRAKING NEWS

বাংলাদেশের মানুষের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কিন্তু ব্যবস্থা পুরোনো দিনের মতো : ফেসবুকে তসলিমা

ঢাকা, ৩০ মার্চ (হি. স.) : ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, “আহা! সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধাগুলো যদি মার্সিডিজের মালিকের কাছে না গিয়ে রিকশাওয়ালার কাছে যেত!” শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি এই আকাঙ্খার কথা প্রকাশ করেন। পেশায় চিকিৎসক তসলিমা এখন দিল্লিতে আছেন বলে ঢাকায় পাওয়া খবরে জানা যায়।

তসলিমা নাসরিন নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে লেখেন, “ঢাকার বহুতলে বারবার আগুন লাগছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। আগুন যেন না লাগে সেরকম ব্যবস্থা বা আগুন যদি লেগেই যায়, তা নেভানোর ব্যবস্থা বা আগুনের কবল থেকে মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের বাঁচাবার ব্যবস্থা- কোনওটাতেই যে খুব বেশি কেউ পারদর্শী- তা মনে হয় না। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের লোকদের হাতে এখন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, লোকেরা কোটি টাকার গাড়ি চালায়, লাখ টাকা মাইনে পায়। তা হয়তো, কিন্তু অব্যবস্থাগুলো সেই অনাধুনিক দিনের মতোই রয়ে গেছে। ক’দিন পরপরই শুনি সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। গায়ক খুরশিদ আলম আহত হয়ে এখন হাসপাতালে। সড়কগুলো কি যথেষ্ট প্রশস্ত? গাড়ির চালক কি দক্ষ? ট্রাফিক আইন কি সবাই মানে? মনে তো হয় না।” তসলিমা বলেন, “কিছু পয়সাওয়ালা লোক সরকারের পা চাটে, সুবিধা নেয় আর ফুটানি মারে। এটাই তো বাংলাদেশ নয়। প্রতারণার শিকার অসংখ্য অনাথ শিশু, বাল্যবিবাহের শিকার অসংখ্য বালিকা, পিতৃতন্ত্রের শিকার অসংখ্য নারী, পুঁজিবাদের শিকার অসংখ্য দরিদ্র মানুষেরই আরেক নাম বাংলাদেশ। যতদিন তারা সংখ্যায় বেশি, ততদিনই তারা প্রতিনিধিত্ব করবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশে গরিব লোকের জীবনের কোনও দাম নেই। তারা মরলে কারও কিছু যায় আসে না। কিন্তু বড়লোকের যেহেতু জীবনের দাম আছে, আর বড়লোকেরা যেহেতু বহুতলে বাস করে, সে কারণে ঝকঝকে বহুতলগুলো তো অন্তত এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন আগুন লাগলে বাঁচার ব্যবস্থা করা যায়। অবশ্য নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার থেকে কত লোকই বা বেরোতে পেরেছিল! ধর্মে বিশ্বাস করা মানুষের দুঃখ কম হয় মানুষের মৃত্যুতে, কারণ তারা মনে করে মৃত্যু ওই সময় লেখা ছিল বলে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি না, যারা পরকালে বিশ্বাস করি না, তারা ইহকালেই মানুষকে চমৎকার জীবন দিতে চাই, মানুষকে যতটা দীর্ঘ সময় সম্ভব বাঁচিয়ে রাখতে চাই, চাই সবার জন্য সুশিক্ষা, সুচিকিৎসা, সুস্থ সমাজ, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ দালানকোঠা, সর্বোপরি নিরাপদ রাষ্ট্র, যেখানে ছোট বড় সকলের মূল্য সমান। যে লোকটি রিকশা চালায়, আর যে লোকটি মার্সিডিজ চালায় – রাষ্ট্রের কাছে যেন দুজনের মূল্যই এক হয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *