BRAKING NEWS

৭০ বছরে যা হয়নি পাঁচ বছরে হয়েছে, খতিয়ান দিতেই অসমে আসা, মরানে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

মরান (অসম), ৩০ মার্চ (হি.স.) : গত পাঁচ বছরে তাঁর সরকার অসমবাসীর জন্য কী করেছে তার খতিয়ান দিতেই আজ নির্বাচনের আগে ফের এসেছেন। মরানে বিজেপির নির্বাচনি বিশাল সমাবেশে এভাবেই তাঁর ভাষণ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্ধারিত বেলা ১২.৩০টার পরিবর্তে শনিবার বেলা প্রায় সোয়া একটায় ভাষণ দিতে উঠেন মোদী।
ডিব্রুগড় জেলার মরানে পোলো ক্লাবের ফিল্ডে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে ডিব্রুগড়ের প্রার্থী রামেশ্বর তেলি এবং পার্শ্ববর্তী যোরহাটের তপন গগৈয়ের পক্ষে নির্বাচনি ঝড় তুলে মোদী বলেন, ‘আপনাদের আশীর্বাদেই ফের এখানে আসতে পেরেছি। আগেরবার এই চৌকিদারকে দিল্লিতে পাঠানোর ফলে স্বাধীনতার ৭০ বছর পর যে কাজ বিগত সরকারগুলো করতে পারেনি, মাত্র পাঁচ বছরে সে সবের অধিকাংশ করতে পেরেছে আপনাদের আশীর্বাদপুষ্ট এই সরকার। বিগত ৭০ বছরে অসমের প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরে আজ পর্যন্ত প্ৰায় প্ৰতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। আমি সত্যি বলছি কি না’, তার জবাবও তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা-ও হয়েছে আপনাদের আশীৰ্বাদের জন্য, ফের বলেছেন তিনি।অসমিয়া ভাষায় ভাষণ শুরু করে স্বৰ্গদেউ চ্যুকাফা, সুধাকণ্ঠ ড. ভূপেন হাজরিকা প্রমুখ মহান ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করে আসন্ন রঙালি বিহুর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদী।

প্রদত্ত ভাষণে ভূপেন হাজরিকার ভূমিকে প্রণাম জানিয়ে ভূপেনদাকে ভারতরত্ন দিতে পেরে তাঁর সরকার সৌভাগ্যবান বলেও মন্তব্য করেন প্ৰধানমন্ত্ৰী।
প্রধানমন্ত্রী খতিয়ান দিয়ে বলেন, সাত দশকে অসমের মাত্ৰ ৪০ শতাংশ পরিবার গ্যাস কানেকশন পেয়েছিল। অথচ এই অসম এবং গুজরাটে সৰ্বাধিক তেল ও গ্যাস পাওয়া যায়। এই চৌকিদারের আমলে অসমের ৮৫ শতাংশ পরিবার গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। এছাড়া অসমের ২৭ লক্ষ পরিবারকে বছরে বিনামূল্যের চিকিৎসা প্ৰদান, প্ৰায় ৫০ লক্ষ মুদ্ৰালোন প্ৰদানের মাধ্যমে লক্ষাধিক যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচ লক্ষের বেশি গরিব পরিবারকে দেওয়া হয়েছে পাকা ঘর।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আশীৰ্বাদের জন্যই অসমের কৃষকদের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। ২৪ লক্ষ কৃষক পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বছরে হাজার কোটি টাকা জমা করা হয়েছে, যাতে কৃষকরা নিজেদের প্ৰয়োজনগুলো পূরণ করতে পারেন।’ তিনি বলেন, প্ৰায় ১০ লক্ষ কৃষক তাঁদের প্ৰথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। বাকিরাও শীঘ্ৰ বকেয়া পেয়ে যাবেন। প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদী বলেন, আয়করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রেহাই দেওয়া হয়েছে। ‘আজ আপনারা সুখি। কিন্তু এজন্য একাংশের রাতের ঘুম উবে গেছে।’ কাদের ঘুম হরণ হয়েছে তারও ব্যাখ্যা করেছেন মোদী।
বলেন, এ-সব কাজে দুই গোষ্ঠীর নিদ্রা হরণ হয়ে গেছে। প্রথমত কংগ্ৰেসের এক পরিবার এবং দ্বিতীয় সন্ত্ৰাসবাদীদের আশ্ৰয়দাতা, তাদের আজ ঘুম হচ্ছে না। ভারত এই প্ৰথম সন্ত্ৰাসবাদীদের ঘরে ঢুকে মেরেছে। এ কাজে ভারতের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা বিশ্ব, অথচ রহস্যজনকভাবে নিদ্ৰাহরণ হয়ে গেছে কংগ্রেসের। মহাকাশেও ভারত তার ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। তিনদিন আগে আমাদের বিজ্ঞানীরা লাইভ উপগ্ৰহ ধ্বংস করেছেন। এই কাজ করে ভারত এখন বিশ্বের চতুৰ্থ দেশে পরিণত হয়েছে। এতেও কংগ্রেসের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ভারতের বিরুদ্ধে নানা অশুভ মন্তব্য করছেন কংগ্রেসিরা। এটা কি দেশের জন্য ভালো লক্ষণ ? উপস্থিত প্রায় পৌনে দু লক্ষ জনতার কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি।প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসম শক্তিশালী হলেই ভারত শক্তিশালী হবে। অসম এবং কেন্দ্ৰীয় সরকার নিরন্তর এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি চা বাগান অধ্যুষিত মরানের জনসভায় স্থানীয় আবেগেও আঘাত করতে ভুলেননি। বলেন, একজন চা-ওয়ালা বোঝে চা শ্রমিকদের যন্ত্রণা। তাই চা জনগোষ্ঠীয়দের জন্য নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পগুলির মধ্যে একটির বলে চা শ্রমিক পরিবারের ২ কিস্তিতে ৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্ৰদান করা হয়েছে। চা বাগানের চার লক্ষ পরিবারকে বিনামূল্যের চাল, চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে। বাগানের প্ৰসূতিদের জন্য ১২ হাজার টাকা করে দিচ্ছে এই সরকার। প্রদত্ত এই সুবিধা কেউ কোনওদিন কেড়ে নিতে পারবে না বলে বজ্রকণ্ঠে চা জনগোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদী বলেন, উত্তর–পূর্বাঞ্চল নতুন ভারতের কেন্দ্ৰ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এ থেকে এতদিন দূরে রাখা হয়েছিল। গ্যাস ক্র্যাকার প্ৰকল্প, ধলা–শদিয়া ভূপেন হাজরিকা সেতু, বগিবিল সেতুর কাজ বিজেপি সরকারই সম্পন্ন করেছে। পুরনো সব প্ৰকল্পের কাজ ক্ষিপ্ৰগতিতে সম্পূৰ্ণ করার কাজ তাঁর সরকারই করছে। তিনসুকিয়ায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডিব্ৰুগড়ে ক্ৰীড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত এই সরকারই নিয়েছে। তেল ও গ্যাস ফিল্ডের ১৪ হাজার কোটি টাকার প্ৰকল্প সম্পূৰ্ণ করা হয়েছে গত ৫ বছরে।তাছাড়া যে কংগ্রেস সরকার অসম চুক্তি রূপায়ণের কাজে হাত দেওয়ার হিম্মত দেখাতে পারেনি, তা করে দেখিয়েছে এই সরকার। অসমের ছয় জনগোষ্ঠী মরান, মটক, তাই আহোম, চুতিয়া, কোচ রাজবংশী এবং চা জনগোষ্ঠীকে আদিবাসীর স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি সম্পন্ন হয়ে যাবে।

তাই অসম তথা দেশের উন্নয়নে ১১ এপ্ৰিল রাজ্যবাসীর আশীৰ্বাদ লাগবে বলে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। ৭০ বছরে যা হয়নি, তা ৫ বছরে সম্পন্ন করতে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে প্ৰয়াস করেছেন, এখনও বহু কাজ বাকি। তবে ২৫ বছরের কাজ আগামী ৫ বছরে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *