গণফোরামের দুই সাংসদের শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্তে সংকটজনক পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা, ৪ মার্চ (হি. স.) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল, গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই প্রার্থী সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফ্রন্ট নেতারা এক সংকটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। প্রচন্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জোটের মধ্যে। আগামী ৭ মার্চ শপথ গ্রহণ করতে চেয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান স্পীকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন, যদিও তাদের দল বা জোট এখনো সংসদে যাওয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্পীকার কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৭ মার্চ সকাল সাড়ে দশটায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত একদিকে গণফোরাম এবং অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিএনপিতে ইতিমধ্যে ফ্রন্টে থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বিএনপি ও গণফোরামের মধ্যে। যার প্রভাব পড়ছে ফ্রন্টে। নজিরবিহীন কারচুপি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করা জোটটির কোনও প্রার্থীই শপথ নেবেন না বলে নির্বাচনের পরপরই সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় জোটের পক্ষ থেকে। কিন্তু জোটের এ সিদ্ধান্ত না মেনেই তারা আগামী ৭ মার্চ শপথ নেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে স্পীকারকে চিঠি পাঠান।


গণফোরামের বিজয়ী দুই প্রার্থী শপথ নিলে জোটের বা দলের অবস্থান কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী বলেন, গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা দু’জন শপথ নিলে সেক্ষেত্রে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হবে। সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথ নেওয়াকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।তিনি বলেন, \”তাঁরা শপথ নেওয়ার জন্য যে চিঠি দিয়েছেন দল বা জোটের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেননি। এখন আমরা দল ও জোটের বৈঠক করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।\” ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচনে বিজয়ী এ দুই প্রার্থীর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, \”তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জনগণ কোনওভাবেই ইতিবাচক হিসেবে নেবে না। বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট, বাম জোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সরকারের কোনও কোনও শরিকও এই নির্বাচনের কড়া সমালোচনা করেছে। এই অবস্থায় তাঁরা যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেন তাহলে এটি তাদের জন্য ভালো কিছু হবে না।\” বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুুল্লাহ আল নোমান বলেন, \”ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা কী করছেন- সেটা বিষয় নয়, ঐক্যফ্রন্ট সম্মিলিতভাবে কী বলছে সেটাই দেখার বিষয়। এখানে এই দু’জন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। এটা নির্ভর করবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ওপর। এখন দেখার বিষয় তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন।\”


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণফোরামের সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ কয়েকটি সমমনা দল নিয়ে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরে এই জোটে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। জোটটি সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নজিরবিহীনভাবে পরাজিত হয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ৮টি আসনে পায় জয়ের দেখা। এই ৮টির মধ্যে ৬টিতে জেতে জোটের প্রধান শরিকদল বিএনপি আর অপর দুটিতে জয়লাভ করে গণফোরাম।