আগরতলা, ২৫ ফেব্রুয়ারী।। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ১৭ হাজার ৫৩০ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মা। এই বাজেটও ঘাটতিহীন রেখেছে রাজ্য সরকার। তাছাড়া বাজেটে নতুন কোন কর প্রস্তাব করা হয়নি।বাজেটে বড় চমক দিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা রয়েছে বাজেটে।এদিন বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বাজেটের মতই ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটও ঘাটতিহীন পেশ করছি। সেই সাথে ২ o ১ ৯ -২ ০ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৩০ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, ভারত সরকারের অনূরুপে , আয় ও ব্যয়ের শ্রেণিবিন্যাস প্ল্যান ও ননপ্ল্যানের পরিবর্তে রাজস্ব ও মূলধনী হিসাবে তৈরি করা হয়েছে ৷ বাজেটে নতুন কোন কর প্রস্তাব করা হয় নি I সাথে যোগ করেন, সামাজিক ভাতা বৃদ্ধি করে প্ৰতি মাসে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে বছরে ১২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে Iতিনি আরও বলেন, পাকা রাস্তার ধারে ফুল ও ফল গাছ রােপণ করা হবে এবং এর রক্ষপাবেক্ষণের দায়িত্ব ঐ রাস্তার নিকটবর্তী পরিবারদের হাতে ন্যস্ত থাকবে৷ বিনিময়ে প্ৰতি পরিবারকে প্ৰতিমাসে ২০০ টাকা আর্থিক সহায়তা ডিবিটি’র মাধ্যমে প্রদান করা হবে I এই উদ্যোগ ত্রিপুরাকে সুন্দর এবং পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিনত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ১০টি অনুন্নত আরডি ব্লককে মডেল ব্লক হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ওই ব্লকগুলিতে বিনামূল্যে অতিরিক্ত চাল বিতরণ করা হয়েছিল। ওই ব্লকগুলিকে উন্নয়নের মাধ্যমে মডেল ব্লকে পরিণত করার জন্য বাজেটে প্রস্তাব রাখেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ওই ব্লকণ্ডলি হল ছামনু, ডম্বুরনগর, রইস্যাবাড়ি, দামছড়া, দশদা, করবুক, শিলাছড়ি, মুঙ্গিয়াকামি, রূপাইছড়ি এবং তুলাশিখর I এই ব্লকগুলি ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের অধীনে অবস্থিত এবং তার অধিকাংশই জনজাতি অধ্যূষিত। তিনি বলেন, ওই ব্লকগুলিকে সম্ভাবনাময় জেলা ধলাই’র অনুকরণে উন্নীতকরন করা হবে৷
এদিন বাজেট ভাষণে তিনি আরও জানিয়েছেন, যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী তাদের স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেছে তাদেরকে বিনামূল্যে স্মার্টফোন দেওয়ার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলছে। সাথে যোগ করেন, আগামী বছর থেকে সমাজের সকল অংশের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে গনবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে চিনি প্রদান করা হবে Iএদিকে কৃষক কল্যানে প্রস্তাবিত পদক্ষেপ সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কৃষকদের দরজায় প্রযুক্তিগত জ্ঞান পৌঁছে দিতে বর্তমানে ১৩টি কিষাণ বিকাশ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ধাপে ধাপে আরো কিষাণ বিকাশ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকদের উন্নয়নের প্রশ্নেই এফসিআই’র মাধ্যমে ধান ক্রয় আরো কার্যকরের জন্য রাজা সরকার ভবিষ্যতেও অতিরিক্ত খরচ বহন করবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষান পরিকল্পনায় কমপক্ষে ৫ লাখ কৃষক পরিবার উপকৃত হবে এবং বার্ষিক প্রায় ৩০০ কোটি টাকা তাদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে স্থানান্তরিত করা হবে Iঅর্থমন্ত্রী বলেন, নাবার্ডের মিনি ডেইরি স্কিমের ঋণের মাধ্যমে রাজ্যে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫ হাজার পরিবারের মহিলা সদস্যদের মধ্যে দুটি করে মোট ১০ হাজার গাভী দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে I যার ১০০ শতাংশ সুদ সরকার বহন করবে।
এদিকে, জাইকা ও আইজিডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮৬৭টি চেক ডেম তৈরি করা হবে বলে তিনি বাজেট ভাষণে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, চেক ডেম এর মাধ্যমে বহুল পরিমাণে মৎস্য চাষ, পানীয় জলের সরবরাহ, জলসেচ ইত্যাদির সুযোগ সৃষ্টি হবে I তাছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮২০০ হেক্টরে বাঁশ রােপণ করা হবে I পাশাপাশি ২১১০টি স্বসহায়ক দল গঠন করা হবে এবং ৫২০৩০টি পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি করা হবে I
এদিন তিনি আরো বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নার্সিং, প্যারা মেডিকেল, বিএড এবং অন্যান্য কোর্সের ৩৪০ জন ছাত্রছাত্রীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যম্যত্রা নেওয়া হয়েছে I সাথে যোগ করেন, ৪৮০ আসন বিশিষ্ট আরো ১৮টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১ ৯ সালের মার্চ মাসের প্রথম সাপ্তাহের মধ্যে আগরতলার সরকারি মেডিকেল কলেজের ট্রমা সেন্টার, এজিএমসি এন্ড জিবিপি হাসপাতালে নিউরো সার্জিকেল ইউনিট স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে l এখানে দুই জন নিউরো সার্জন নিয়োগ করা হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে এদিন তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিদ্যালয় গুলিতে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে I পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী বি এড অনুপ্রেরণা যােজনায় ৫ হাজার যোগ্য যুবক-যুবতীদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাথে যোগ করেন, নবম শ্রেণীর ৩০ হাজার ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাইসাইকেল প্রদান করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, অটল জলধারা প্রকল্পের অধীন রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে আগামী তিন বছরে পর্যায়ক্রমে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে।
বাজেট পেশ করার পর সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার আগেও ছিল। কিন্তু, ইতিবাচক চিন্তাধারার ভীষণ অভাব ছিল। কিন্তু, এখন সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অভূত প্রবৃদ্ধির দীশায় আমরা এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজ্যের আর্থিক স্থিতি ভাল নয়। তবুও জনমুখি বাজেট পেশ করার চেষ্টা করেছি। তিনি, সঠিকভাবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি হতে দেওয়া হবে না।