নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ ফেব্রুয়ারী৷৷ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দিকে এগিয়ে চলেছে ত্রিপুরা৷ মাত্র এগার মাসে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৩৬৮ কোটি টাকা৷ ফলে, আগামী দিনে ত্রিপুরাকে যাতে সব কিছুর জন্য কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয় সেই দিশায় এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার৷ শনিবার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সাথে যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দিল্লির সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভৌগলিকভাবে দূরত্ব একই রয়েছে ঠিকই, কিন্তু হৃদয়ের দূরত্ব অনেক কমে গেছে৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বর্তমান কেন্দ্র সরকার এবার যে বাজেট পেশ করেছে তা ঐতিহাসিক৷ এবারের বাজেটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের জন্য ২১ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে প্রচুর সংখ্যক তপশিলী জাতি ও তপশিলী জনজাতি রয়েছেন৷ এবারের বাজেটে তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে তপশিলী জাতির জন্য ৩৬৬ শতাংশ এবং তপশিলী জনজাতিদের জন্য ২৭ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে৷ পাশাপাশি এবারের বাজেটে এই প্রথম যে সমস্ত কৃষকদের ২ হেক্টর পর্যন্ত কৃষিজমি রয়েছে তাদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি বছরে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার সংস্থান রাখা হয়েছে৷ এতে আমাদের রাজ্যের প্রায় ৪ লক্ষ কৃষক পরিবার উপকৃত হবেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংসৃকতির বিকাশেও কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ আমাদের রাজ্যের কৈলাসহর মহকুমার ছোট গ্রাম থেকে রসেম শিল্পী থাঙ্গা ডার্লং-এর প্রতিভাকে খুঁজে এ বছর পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে৷ এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকেই বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ড ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে৷ আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলবাসীর কাছে দিল্লি অনেক দূর মনে হতো৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে দেশের শাসনভার গ্রহণ করে লাগাতার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে সহযোগিতা করে আসছেন৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষী আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দিল্লির ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও, রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের হৃদয়ের দূরত্ব অনেক কমে গেছে৷ ত্রিপুরাকে একটি নতুন দিশা দেওয়ার জন্য সমগ্র ত্রিপুরাবাসী আজীবন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে মনে রাখবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বর্তমান রাজ্য সরকার এবার ঘাটতিহীন বাজেট তৈরি করেছে৷ ২০১৭-১৮ সালে যে বাজেট তৈরি করা হয়েছিলো তাতে ১৪২২ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছিলো৷ বর্তমান সরকার মাত্র ১১ মাসেই রাজস্ব আয় করেছে ১৭৯০ কোটি টাকা৷ মোট রাজস্ব আয় বেড়েছে ৩৬৮ কোটি টাকা৷ কেন্দ্র সরকার যে দিশায় ত্রিপুরাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করছে তাতে ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর যে স্বপ্ণ আমরা দেখেছি তা নিশ্চয়ই পূরণ হবে৷ এছাড়াও কেন্দ্র সরকার ত্রিপুরার ষষ্ঠ তপশিলের অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে শক্তিশালী করতে সংশোধনীর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে দেশের জনজাতিদের পাশাপাশি আমাদের রাজ্যের জনজাতিদেরও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দৃঢ সংকল্প নিয়ে কাজ করছেন৷ স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষকে শ্রেষ্ঠ বানানোর যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন তা যথার্থ বাস্তবায়নেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজাতি সম্পদায়ের কৃষ্টি, সংসৃকতির অস্তিত্ব রক্ষার উপরও জোর দিয়েছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার৷ মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ পূরণ করেছেন৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল কাপ্তান সিং সোলাঙ্কি এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যগণ৷