BRAKING NEWS

বেতন কমিশন নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন সরকারি কর্মী সংগঠন

কলকাতা, ৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : বাজেটে কর্মীদের জন্য বেতন কমিশনের সিদ্ধান্ত না দেখে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারের নানা কর্মী সংগঠন। তাদের অভিযোগ, নাম কা ওয়াস্তে তৈরি হয়েছে এই কমিশন। নয়া বেতন হার কার্যকরের কোনও সদিচ্ছা নেই সরকারের।

রাজ্য বিধানসভায় ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য পেশ হওয়া রাজ্য বাজেটে বেতন-পেনশন খাতে ব্যয় বরাদ্দ এক লাফে প্রায় ৪ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার জেরে আগামী অর্থ বর্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্তিযোগ আরও কিছুটা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, বাজেটে সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ এবং বেতন কমিশন কার্যকর করার বিষয়ে কোনও কথাই নেই। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পেশ করার বাজেটকে ধাপ্পাবাজি বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির তরফে এই বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সামলোচনার সুর শোনা গিয়েছে।

রাজ্যে এখন ষষ্ঠ বেতন কমিশন ঝুলে রয়েছে। যা ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে লাগু হওয়ার কথা। চলতি বছর কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত এই কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করতে গেলে প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকার থেকে আরও কয়েকগুণ বেশি অর্থের প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন কর্মীরা।

বাজেট প্রস্তাবে বেতন-পেনশন খাতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে শাসকপক্ষ। গত বাজেট অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন ও পেনশন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪২ হাজার ৭০ কোটি টাকা এবং ১৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। বাজেট প্রস্তাবে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা এবং ১৫ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র বেতন খাতে গত বছরের তুলনায় ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, এই বাজেট থেকে স্পষ্ট, কর্মীদের জন্য বেতন কমিশন কার্যকরের কোনও সদিচ্ছা নেই সরকারের। কারণ, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩০ শতাংশ ডিএ বকেয়া রয়েছে। তা মেটাতেই বাজেট বরাদ্দের টাকা কম পড়ে যাবে। স্বভাবতই ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যত হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মলয়বাবু।

অন্যদিকে, কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিনহার কথায়, এবারের বাজেট থেকে স্পষ্ট, রাজ্য সরকার কর্মীদের সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। গত সাত বছরে আর্থিক বঞ্চনা চরমে পৌঁছেছে। সঙ্গে দাবি-দাওয়া পূরণে কর্মীদের আন্দোলন করার অধিকারও এই জমানায় শেষ হয়ে গিয়েছে। যা কর্মচারী সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক।

বিজেপি প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবশিস শীলের দাবি, এই বাজেট থেকে স্পষ্ট, পরিবর্তনের সরকার স্থায়ী কর্মীদের কিছু দেবে না। সেই কারণেই বেতন-পেনশন খাতে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যার বদলে অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বাজেট সরকারি কর্মীদের হতাশ করল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শাসকদল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য কোর কমিটির সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রয়েছে। চলতি বছরেই ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর করার বিষয়েও আশাবাদী এই নেতা।“ কিন্তু এতদিন ধরে কমিশনের টোপ দিয়েও তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মীরা হতাশ হচ্ছেন। এর পরেও শাসক দলের সংগঠনের নেতা হয়ে এ রকম বিবৃতি দেওয়া কতটা বাস্তসম্মত? জবাবে পার্থাবাবু বলেন, “আমরা আশাবাদী”।

বেতন কমিশন লাগু হওয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় ১৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে পেনশন খাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *