জনজাতি কল্যাণে ৮৩৮৯ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ কেন্দ্রের কাছে চাইবে রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জানুয়ারী৷৷ জনজাতিদের মূলস্রাতে ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য৷ তাই, জনজাতি কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্যাকেজ চাইবে রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রের ৮৩৮৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার বিশেষ প্যাকেজ চাওয়ার বিষয়টি রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে৷ মূলত, জনজাতিদের আর্থ, সামাজিক, সাংসৃকতিক এবং ভাষার উন্নয়নেই এই বিশেষ প্যাকেজ জরুরি বলে দাবি শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথের৷ তাঁর কথায়, জনজাতিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতেই কেন্দ্রের কাছে এই বিশেষ প্যাকেজ দেওয়ার দাবি জানানো হবে৷

প্রাক্ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কেন্দ্র-রাজ্য মিলেই জনজাতিদের উন্নয়ন করতে হবে৷ কারণ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং আইপিএফটি প্রতিনিধি দল দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রের কাছে

জনজাতিদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ওই প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছিলেন জনজাতিদের উন্নয়নের প্রশ্ণে একটি কমিটি

গঠন করার হবে৷ ওই কমিটি জনজাতিদের উন্নয়নের সমস্ত বিষয় সুনিশ্চিত করবে৷

শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে৷ মন্ত্রকের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সচিব রীনা মিত্র ওই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন৷ তাছাড়া, ওই কমিটিসত রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পূর্বোত্তর শাখার যুগ্ম সচিব সত্যেন গর্গ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, উপজাতি কল্যান এবং ডোনার সচিব রয়েছেন৷ এছাড়াও রয়েছেন, নীতি আয়োগ এবং দক্ষতা বিকাশের সদস্য৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই কমিটিতে রয়েছেন আইন সচিব, উপজাতি কল্যান দপ্তরের সচিব, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এবং এডিসি’র মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য৷

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে ওই কমিটির সদস্যরা চেয়ারম্যান রীনা মিত্রের নেতৃত্বে রাজ্যে এসেছিলেন৷ তাঁরা সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে জনজাতি কল্যাণে প্রয়োজনীয় মতামত সংগ্রহ করেছেন৷ তাছাড়াও, বিভিন্ন এনজিও সহ মোট ৩৫টি সংস্থার কাছ থেকে তাঁরা মতামত সংগ্রহ করেছেন৷

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যে জনজাতি কল্যাণে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চেয়েছে ওই কমিটি৷ সেই মোতাবেক, সমস্ত দপ্তরের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছিল৷ সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সমস্ত তাদের মতামত পাঠিয়েছেন৷ এর ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিশেষ প্যাকেজের প্রস্তাব তৈরি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করেছে৷

শিক্ষামন্ত্রী এদিন বিভিন্ন দপ্তরের জনজাতি কল্যাণে প্রয়োজনীয় অর্থের প্রস্তাবিত তালিকা তুলে ধরেন৷ তাঁর কথায়, মৎস্য দপ্তর ২৮ কোটি টাকা, উচ্চ বুনিয়াদী শিক্ষা দপ্তর ৮৭ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, স্বাস্থ্য দপ্তর ১১৮ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, পূর্ত দপ্তরের পানীয় জল সম্পদ বিভাগ ৭৫ কোটি টাকা, পূর্ত দপ্তরের পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান বিভাগ ৬৩৫ কোটি টাকা, কৃষি দপ্তর ১০৪৬ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা, হস্তকারু ও হস্ততাঁত শিল্প দপ্তর ১০৭ কোটি ৫ লক্ষ টাকা, উপজাতি কল্যাণ দপ্তর ৪৮০৮ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা, পূর্ত দপ্তরের প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বিভাগ ৩ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা, পঞ্চায়েত দপ্তর ১০ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা, পূর্ত দপ্তরের প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বিভাগ ছাড়া ৮০০ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, যুব ও ক্রীড়া দপ্তর ৬০ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা এবং পর্যটন দপ্তর ১৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা জনজাতি কল্যাণে অতিরিক্ত প্রয়োজন বলে প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷

শিক্ষামন্ত্রী কথায়, এই সমস্ত প্রস্তাব একত্রিত করে বিশেষ প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে৷ রাজ্য মন্ত্রিসভা এর অনুমোদন দিয়েছে৷ এখন কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিশেষ প্যাকেজ মঞ্জুরের জন্য পাঠানো হবে৷ তাছাড়া, আগামী কিছুদিনের রীনা মিত্রের নেতৃত্বে ওই কমিটি পুণরায় রাজ্যে আসবে৷ তাঁদের কাছে এই বিশেষ প্যাকেজের বিষয়টি তুলে ধররা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *