কলম্বো, ১৫ ডিসেম্বর (হি.স.) : শেষ পর্যন্ত পদত্যাগই করলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র রাজাপক্ষে৷ একসময়ের ঘোর শত্রুকে ক্ষমতায় বসাতে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন৷ নির্বাচনেরও ঘোষণা করেন আগামী জানুয়ারিতে৷ তবুও শেষ রক্ষা করা গেল না৷ শনিবার পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের চাপে পড়ে পদত্যাগ করলেন মহেন্দ্র রাজাপক্ষে৷
মহেন্দ্র ক্ষমতা দখলের পরেই শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রেসিডেন্ট যেভাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন, তা বেআইনি। এর পরেই বোঝা গিয়েছিল, বেশিদিন গদি আঁকড়ে থাকা রাজাপক্ষের কাছে কঠিন কাজ৷ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, গত ২৬ অক্টোবর মহেন্দ্র রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঠিকই কিন্তু তিনি বা তাঁর মন্ত্রিসভার কেউ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। তার আগে তাঁদের প্রমাণ করতে হবে ক্ষমতা দখলের বৈধতা। যা তার কাছে অসম্মানজনক। এর পরে মহেন্দ্র রাজাপক্ষের কাছে পদত্যাগ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। যদিও পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশে স্থায়ী সরকারের জন্যই এই পদত্যাগ৷’’
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশ পরিচালনার নানা নীতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট শ্রীসেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংঘের বিরোধ চলছিল৷ অভিযোগ, শ্রীসেন চিনের কোম্পানিগুলিকে শ্রীলঙ্কায় নানা কাজের বরাত দিতে আগ্রহী ছিলেন। বিক্রমসিংহের তাতে আপত্তি ছিল। এবছরের ২৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট শ্রীসেন আচমকা প্রধানমন্ত্রী বিক্রমসিংহেকে বরখাস্ত করেন। মহেন্দ্র রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। দু’বার চেষ্টা করেও তিনি গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন। তার পরেও ক্ষমতা ধরে রাথার প্রশ্নে অনড় ছিলেন রাজাপক্ষে৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্ষমতার অলিন্দ ছাড়তেই হল তাঁকে৷
মহেন্দ্র রাজাপক্ষের আমলেই শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহ দমন করা হয়। এলটিটিই নেতা প্রভাকরণকে মারা হয়। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই ওঠে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। মহেন্দ্র রাজাপক্ষের সরকারের বিরুদ্ধেও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। গত ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করেছিলেন শ্রীসেন ও রনিল বিক্রমসিংহে। জেতার পরে শ্রীসেন হন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমসিংহে। ক্ষমতা দখলের পর বনিবনা না হওয়ায় পাল্টে যায় সমীকরণ৷