BRAKING NEWS

রাফাল নিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাহুল গান্ধীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত : অমিত শাহ

নয়াদিল্লি, ১৪ ডিসেম্বর (হি.স.) : ‘বাচ্চাদের মত আচরণ বন্ধ করার বয়স হয়েছে তাঁর | রাফাল নিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাহুল গান্ধীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত’ | রাফাল নিয়ে সুপ্রিম রায়ের পর শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতিকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
রাফাল নিয়ে দায়ের হওয়া সমস্ত পিটিশন খারিজ করে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়েছেন, ‘১২৬টির জায়গায় ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অনুচিত| আমরা সরকারকে ১২৬টি বিমান কিনতে জোর করতে পারি না| যুদ্ধবিমানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়| গোটা প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনও খামতি ছিল না| তাই এই বিষয়ে আর কোনও তদন্তের প্রয়োজন নেই|’ রাফাল চুক্তির তদন্তের বিরোধীদের দাবি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিতেই বিষয়টি নিয়ে সরব হন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশের সব থেকে বড় মিথ্যা ধরা পড়ে গিয়েছে। কোনও নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই বারবার ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। যার জন্য আদালত তাদের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছে ।’ সরাসরি কংগ্রেসকে সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, ক্ষমতা থাকলে কংগ্রেস সভাপতি বলুন কোথা থেকে এসব তথ্য পেয়েছিলেন । পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের মত আচরণ বন্ধ করার বয়স হয়েছে তাঁর | রাফাল নিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাহুল গান্ধীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত’ |
অমিত শাহ এদিন পাল্টা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে জানতে চান, ‘২০০৭ সালে রাফাল চুক্তির শর্তাবলী নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন চুক্তি চূড়ান্ত করেনি কংগ্রেস সরকার? কেন দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছে তারা?’ অমিত শাহের দাবি, ‘চুক্তিতে কমিশনের পরিমান নিয়ে কংগ্রেস চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বলেই চুক্তি চূড়ান্ত করেনি কংগ্রেস।’ অমিত শাহ বলেন, ‘আমরা ফরাসি সরকারের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করেছি। কেন কংগ্রেস সব সময় দালালের মাধ্যমে চুক্তি করত? কেন দেশের টাকা দালালদের হাতে তুলে দিল কংগ্রেস।’
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একাধিকবার সরব হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী | সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউপিএ শাসনকালে রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে প্রতিটির দাম পড়বে ৫৪০ কোটি টাকা। যেখানে এনডিএ সরকার এক একটি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে ১৬০০ কোটি টাকায়।
এরই মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতে দায়ের হয়েছিল একাধিক জনস্বার্থ মামলা| দাবি উঠেছিল, আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তেরও| এরপরই গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রের কাছে রাফালের দাম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট| শুক্রবার সেই মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ে স্বস্তি পেল কেন্দ্রীয় সরকার | এদিন রাফাল নিয়ে দায়ের হওয়া সমস্ত পিটিশন খারিজ করে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ‘১২৬টির জায়গায় ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অনুচিত| আমরা সরকারকে ১২৬টি বিমান কিনতে জোর করতে পারি না| যুদ্ধবিমানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়| গোটা প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনও খামতি ছিল না| তাই এই বিষয়ে আর কোনও তদন্তের প্রয়োজন নেই|’
এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং| সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘শুরু থেকেই এই বিষয়টি কাঁচের মতো পরিষ্কার ছিল| আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে কংগ্রেস|’
তবে, সর্বোচ্চ আদালতে পর্যবেক্ষণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ| প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছেন, ‘আমাদের মতে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় একেবারে ভুল| পর্যালোচনার পর রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা হতে পারে|’
রাফাল মামলা নিয়ে সুপ্রিম পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ একেবারেই সঠিক, তবে রাজনৈতিক দলগুলি জেপিসি তদন্তের দাবি জানাচ্ছে|’
রাফাল মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার স্বস্তি পেলেও, কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সরকারের আনন্দিত হওয়ার কোনও কারণ নেই| অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে মন্তব্য করেনি সুপ্রিম কোর্ট| রাফাল চুক্তি নিয়ে আমরা যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র দাবি জানাচ্ছি|’ এদিকে, রাফাল নিয়ে তুমুল হইহট্টগোলের আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে গেল লোকসভার অধিবেশন|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *