BRAKING NEWS

কাছাড় ও নগাঁও কাগজকলকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবিতে বরাকে দুই জাতীয় সড়কে অবরোধ

শিলচর (অসম), ২৬ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : রাজ্যের দুই ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কাছাড় এবং নগাঁও কাগজকলকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবিতে ধারা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে বরাক উপত্যকার দু-দুটি জাতীয় সড়কে অবরোধ গড়ে তুলেছেন দুই কাগজকলের যৌথমঞ্চ এইচপিসি রিভাইভ্যাল কো-অৰ্ডিন্যাশন কমিটির কর্মকর্তা এবং সদস্যরা।

এদিন সকাল নয়টা (৯) থেকে বেলা একটা (১) পর্যন্ত উপত্যকার পাঁচগ্রামে ৫৩ এবং ১৫৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বরাক ও রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটির পাশাপাশি মেঘালয়ের মধ্যে যাতায়াত অচল করে দিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা৷ তাঁদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠন।

আজ সকাল থেকে দুই কাগজকলের অসংখ্য কর্মচারী জোয়াই (মেঘালয়)-বদরপুর (অসমের বরাক উপত্যকা) জাতীয় সড়কের কাটিগড়া ও কালাইন এবং পাঁচগ্রামের ধলেশ্বরীতে বদরপুর-শিলচর জাতীয় সড়কে চার ঘণ্টার অবরোধ গড়ে তুলেন।

এদিকে জাতীয় সড়ক অবরোধক কেন্দ্র করে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত না হয় সে জন্য কাছাড় ও হাইলাকান্দির দুই জেলা প্রশাসন দুই জায়গায় মোতায়েন করেছে পর্যাপ্ত সংখ্যার পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী। অন্যদিকে অবরোধের ফলে সংশ্লিষ্ট দুই জায়গায় চার ঘণ্টার বেশি সময় অজস্র যানবাহন আটকে পড়েছে। এর মধ্যে বহু যাত্রীবাহী গাড়িও রয়েছে।

রাজ্যের দুই কাগজকল পুনরুজ্জীবিত করার দাবিতে ধারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এইচপিসি রিভাইভ্যাল কো-অৰ্ডিন্যাশন কমিটির কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, একই দাবির ভিত্তিতে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর দিশপুরে অবস্থান ধরনা কর্মসূচি পালন করবেন। এর পরও কেন্দ্ৰ এবং রাজ্য সরকারের কাছ থেকে যদি আশানুরূপ সাড়া পাওয়া না যায়, তা হলে খুব শীঘ্রই তাঁরা মুখ্যমন্ত্ৰীর আবাস ঘেরাও করার পাশাপাশি দিল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন বলে এইচপিসি রিভাইভ্যাল কো-অৰ্ডিন্যাশন কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাজ্যের দুই কাগজকলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বরাক এবং ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার সর্বস্তরের জনতাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন যৌথমঞ্চের কর্মকর্তারা৷

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৮৫ এবং ১৯৮৮ সাল থেকে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন লিমিটেডের জাগিরোড ও কাছাড় কাগজ কলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে মিজোরামে বাঁশঝাড়ে ফুল আসায় বছর তিনেকের জন্য কাছাড় কাগজকলে বাঁশ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর পর গ্রিন ট্রাইবুনালের নিষেধাজ্ঞার জেরে বন্ধ হয় মেঘালয় থেকে কয়লা আসা। শুরু হয় ট্রেন লাইনে মেগা ব্লক। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নির্দেশে কস্টিক কারখানাও বন্ধ করে দিতে হয়। এরই মধ্যে টিম টিম করে চলতে থাকে কাগজ উৎপাদনের কাজ। কিন্তু লাভের মুখ দেখা দূর ২০১১ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি লোকসানে পড়তে থাকে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন। এ ব্যাপারে অবশ্য দুর্মুখেরা তদানীন্তন কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকে দায়ীও করেন। তাঁদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সিন্ডেকেটের কবলে পড়েই কাগজকলের মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

এদিকে লোকসানের এত বড় ধাক্কা সামলাতে না পেরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কাছাড় কাগজকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ থেকে জাগিরোডেও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কাছাড় ও জাগিরোড কাগজকলে মোট স্থায়ী কর্মী প্রায় ২০০০। অস্থায়ী কর্মী ৫০০০। ঠিকাদার, ঠিকাকর্মী, সকলের পরিবার মিলিয়ে কল বন্ধ থাকায় মোট দুই লক্ষ মানুষ আর দুটো শহরের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *