নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যের সুকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে বড় ধরণের ঘোটালার অভিযোগ তুলেছে অফসেট প্রেস ওনার্স এসোসিয়েশন৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসোসিয়েশনের সম্পাদক শশাঙ্ক রায় বলেন, গত বছর যে কাজ ৬৮ পয়সায় করা হয়েছিল, এবছর সেই একই কাজের জন্য দেওয়া হচ্ছে ১ টাকা ৯২ পয়সা৷ বহিরাজ্যের দুটি ছাপাখানা এই কাজের বরাত পেয়েছে৷ কিন্তু, পাঠ্যবই ছাপানো বর্তমানে বন্ধ রয়েছে৷ কারণ, নিয়ম বহির্ভুতভাবে বহিরাজ্যের একটি ছাপাখানে টেন্ডারে সর্বনিম্ন দর দিলেও তাকে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি৷ ফলে, ওই ছাপাখানা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করায় পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ স্থগিত রয়েছে৷ এদিন এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে, এক পক্ষকালের মধ্যে তাদের দাবি মেনে স্থানীয় ছাপাখানাগুলিকে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ না দেওয়া হলে সারা রাজ্যে সমস্ত ছাপাখানা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করবে৷ তাতে, সুকলগুলিতে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ণপত্র ছাপাতে সমস্যা হতে পারে৷
সংগঠনের সম্পাদক এদিন বলেন, গত বছর পর্যন্ত পাঠ্যবই ছাপানোর সর্বমোট কাজের ১৫ শতাংশ রাজ্যের ছাপাখানাগুলিতে বরাত দেওয়া হতো৷ অথচ, এবছর তা বাতিল করে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ শুধু তাই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য আর্নেস্ট মানি ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ লক্ষ টাকা করেছে সরকার৷ ফলে, আর্থিকভাবে দূর্বল স্থানীয় ছাপাখানার মালিকরা এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি৷ এদিন তিনি রাজ্য সরকারকে নিশানা করে আরো বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া বহিরাজ্যের এক প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ কারণ, ওই প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দর দিলেও তার টেন্ডার খোলেনি এসসিআরটি, এমন অভিযোগ উচ্চ আদালতে মামলা করেছে কলকাতাস্থিত স্বপ্ণা প্রিন্টার্স৷ ফলে, উচ্চ আদালতে পাঠ্যবই ছাপানো স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে৷
এদিন এসোসিয়েশনের সম্পাদক বলেন, মথুরাস্থিত কে সি প্রিন্টার্স এবং কলকাতাস্থিত সরস্বতি প্রিন্টার্সকে পাঠ্যবই ছাপানোর বরাত দেওয়া হয়েছে৷ চলতি বছরে জানুয়ারী মাসে মথুরাস্থিত কে সি প্রিন্টার্স দ্বারা সরবরাহকৃত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পাঠ্যবইতে ত্রুটি ধরা পড়েছিল৷ কিন্তু, ওই সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে উল্টে তাদের আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যবই ছাপানোর বরাত দেওয়া হয়েছে৷ শশাঙ্ক রায়ের দাবি, যে দরে বহিরাজ্যের প্রতিষ্ঠানকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় ছাপাখানা তার থেকে অনেক কম দরে কাজ করতে চেয়েছিল৷ তাতে, রাজ্য সরকারের প্রচুর টাকা সাশ্রয় হতো৷ বহিরাজ্যের প্রতিষ্ঠানকে কাজের বরাত নিয়ম বহির্ভুতভাবে দেওয়ায় এর পেছনে আর্থিক ঘোটালা হয়েছে বলে মনে করছে এসোসিয়েশন৷ তাঁদের বক্তব্য, গত বছর যে কাজ ৬৮ পয়সায় করা হয়েছে, সেই একই কাজের জন্য এবছর দাম দেওয়া হবে ১ টাকা ৯২ পয়সা৷
দূর্ণীতির প্রসঙ্গে এসোসিয়েশন এনআরএইচএম এবং ধলাই জেলা শাসকের অফিসকেও নিশানা করেছে৷ এসোসিয়েশনের দাবি, কৃমি নাশক অভিযানের প্রচারে বহিরাজ্যের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে৷ তাতে বিরাট আর্থিক ঘোটালা হয়েছে বলে দাবি এসোসিয়েশনের৷ একই অবস্থা ধলাই জেলা শাসক অফিসেও৷ এসোসিয়েশনের দাবি, রাজ্যের ৭টি জেলায় রেজার জবকার্ড সরবরাহ করা হয়েছে ৭ থেকে ১০ টাকায়৷ অথচ ধলাই জেলায় একই ধরনের জব কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ টাকায়৷ কারণ, সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘুমে রেখে পছন্দের দরদাতাকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে৷
এদিন এসোসিয়েশন দাবি জানিয়েছে, এক পক্ষকালের মধ্যে স্থানীয় ছাপাখানাগুলির জন্য মুদ্রণের কাজের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে৷ নতুবা, এসোসিয়েশন বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করবে৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যের সমস্ত ছাপাখানা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবে৷ তাতে, সুকলের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্ণপত্র ছাপার কাজে সমস্যা হবে৷