কলকাতা, ২১ আগস্ট৷৷ বাজার থেকে সাড়ে সতের হাজার কোটি টাকা তুলেছিল রোজভ্যালি গোষ্ঠী৷ পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে৷ চিটফান্ড মামলায় প্রথম চার্জশীট আদালতে জমা দিয়ে জানাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ত্রিপুরা সহ পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ওড়িশা থেকে ওই টাকা তুলেছিল গৌতম কুন্ডুর সংস্থা রোজভ্যালি৷
এক সময় ত্রিপুরাতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছিল চিটফান্ড সংস্থা৷ এই চিটফান্ড সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করে রেখেছিল রোজভ্যালি৷ রাজ্যের মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে ওই সংস্থা৷ কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও গড়ে তুলেছিল রোজভ্যালি৷ কিন্তু, যে পরিমাণ আমানত বাজার থেকে তুলেছে ওই সংস্থা সম্পত্তির পরিমাণ তার ধারে কাছেও নেই৷ রোজভ্যালির সাথে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রি এবং সিপিএম নেতাদের নাম জড়িয়েছে৷ রোজভ্যালি ইস্যুতে সিবিআই বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্যা বিজিতা নাথকে জেরাও করেছে৷ দুই দফায় সিবিআই এই রাজ্যে এসেছে৷ কিন্তু, এই মামলায় এই রাজ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা ঘটেনি৷ রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুন্ডু বর্তমানে সিবিআই এর হেফাজতে হয়েছে৷ সূত্রের খবর, আদালতে প্রথম চার্জশিট জমা দেওয়া সাথে সাথেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার অনুমতি চেয়েছে ইডি৷ জানা গেছে, তিন হাজার পাতার চার্জশিট তৈরি করে আদালতে জমা দিয়েছে ইডি৷ তাতে রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুন্ডু ছাড়াও নাম রয়েছে সংস্থার আরোও দুই ডিরেক্টর শিবময় দত্ত ও অমিত বন্দোপাধ্যায়ের৷ চার্জশিটে অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছে রোজভ্যালি হোটেল, রিয়েল এস্টেট এবং এন্টারটেইনমেন্ট সংস্থা৷ এই সংস্থা গুলিকে সামনে রেখেই বাজার থেকে টাকা তুলেছিল রোজভ্যালি, চার্জশিটে তা উল্লেখ করা হয়েছে৷ রোজভ্যালির ব্যবসা সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়েছিল ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে৷ এই দুই রাজ্য থেকেই সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছে রোজভ্যালি৷ অসম এবং ওড়িশা থেকে টাকা তোলার পরিমাণও নেহাৎ কম নয়৷ ইডি চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, সেই টাকার একটা অংশ আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হলেও বেশির ভাগ টাকাই আত্মসাৎ করা হয়েছে৷
এদিকে, চারটি রাজ্যে রোজভ্যালির বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু, ওই সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের পুরো টাকা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানা গেছে৷ ফলে, সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকার প্রতারণা হয়তো আমানতকারীদের সহ্য করতে হবে৷
আদালতে জমা দেওয়া ইডির প্রথম চার্জশিটে রোজভ্যালি বাজার থেকে কি কি ভাবে টাকা তুলেছে এবং কিভাবে টাকা পাঁচার করেছে সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণও দেওয়া হয়েছে৷ সূত্রে খবর, ইডির তদন্তে উঠে এসেছে রোজভ্যালির ওই দুই ডিরেক্টর ছাড়াও চারটি রাজ্যে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন যাদের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে৷ ধারনা করা হচ্ছে, ইডি অতিরিক্ত চার্জশিটে ওই ব্যক্তিদের ভূমিকা উল্লেখ করবে৷ পাশাপাশি রোজভ্যালির ব্যবসার প্রসারে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সহায়তা করেছেন তাদের বিষয়েও উল্লেখ থাকতে পারে অতিরিক্ত চার্জশিটে৷