BRAKING NEWS

স্বাধীনতার সাত দশক পর বিজেপি আমলে এবার উন্নয়নের মুখ দেখছে ডিমা হাসাও : দেবোলাল

হাফলং (অসম), ১৫ আগস্ট, (হি.স.) : স্বাধীনতা লাভের ৭২ বছর পূর্ণ করেছে ভারতবর্ষ।তবু অসমের অন্যতম  পাহাড়ি  জেলা  উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ৭২-তম স্বাধীনতা দিবসউপলক্ষে বুধবার ৪৩ আসাম রাইফেলস  খেলার  মাঠে সরকারিভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সিইএম দেবোলাল গারলোসা।

সিইএম দেবোলাল গারলোসা বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে পাহাড়ি জেলার মানুষের উন্নয়ন তথা বিভিন্ন জাতি-জনগোষ্ঠীর ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষিত করে রাখারজন্য পরিষদ গঠন হয়। কিন্তু ১৯৫২ সালে পরিষদ গঠন হওয়ার পর পাহাড়ি জেলার যতটুকু উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তবে কেন্দ্র, রাজ্য  এবং পার্বত্য পরিষদে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরইপাহাড়ি জেলায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে ভাষণে বলেন সিইএম। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যটন  থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই  ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে পাহাড়ি জেলা। ভাষণে সিইএম বলেন, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় বিদ্যুতায়ন  প্রকল্পে ডিমা হাসাও জেলার ৮৫  শতাংশ  গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় পার্বত্যপরিষদের  বেতন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে  চলছে।

তিনি বলেন, ডিমা হাসাও থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা শুরু করতে হাফলঙের পার্শ্ববর্তী দিবারাই গ্রামে হেলিপেড নির্মাণকাজ শুরু হতে চলছে। পাহাড়ি জেলার মানুষের অধিকার আদায়ে এক সময়সশস্ত্র আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালে সশস্ত্র আন্দোলন ছেড়ে অস্ত্র সংবরণ করে সংবিধানের নিয়ম মেনে তিনি সিইএম নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলি এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্নঅভিযোগ উত্থাপন করছে বলে মন্তব্যকরে বিরোধীদের সমালোচনা করেন দেবোলাল।

প্রদত্ত ভাষণে গারলোসা বলেন, ২০০৯ সালের ২ অক্টোবর সশস্ত্র আন্দোলন ছেড়ে ডিএইচডি-র উভয় গোষ্ঠী অস্ত্র সংবরণ করে জাতীয় জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসে। তখন অসমের মুখ্যমন্ত্রী(তৎকালীন) বলেছিলেন, একশোদিনের মধ্যে ডিএইচডি-র দাবি পূরণ ছাড়াও নানা সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু সে সময় সরকার কথা রাখতে পারেনি। এমন-কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গেমেমোরান্ডেম অব সেটেলমেন্ট (মস) চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরও তৎকালীন ইউপিএ সরকার মস-চুক্তির সফল রূপায়ণে গুরুত্ব দেয়নি। তবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায়আসার পর মস-চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার ১২২ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ প্রদান করে। এই অর্থ জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে বলে জানান সিইএম দেবোলালগারলোসা।

এদিন সরকারিভাবে আয়োজিত ৭২-তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সিইএম দেবোলাল গারলোসা স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী বীর শহিদদের স্মরণ করেশ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তার পর স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণকারী পুলিশ ব্যাটালিয়ন, এনসিসি, স্কাউট অ্যান্ড গাইডদের অভিবাদন গ্রহণ করেন সিইএম। বুধবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষেঅনান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সকাল ছয়টায় জনসংযোগ বিভাগের স্থায়ী মাইক যোগে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন। পুলিশ, এনসিসি, স্কাউট অ্যান্ড গাইডদের মার্চপাস্ট। পাহাড়ি জেলায়বসবাসরত বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতি-জনগোষ্ঠীর পরম্পরাগত লোকনৃত্য।

২০১৮ বর্ষের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ডিমা হাসাও জেলার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান-সহ মাধ্যমিকে জেলায় ১০০ শতাংশ ফলাফলকারী ছয়টি স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাছাড়া মার্চপাস্টে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করে যথাক্রমে হাফলং ডন বসকো হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, সেইন্ট অ্যাগনেস কনভেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল এবংহাফলং সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিইএম দেবোলাল গারলোসা। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা প্রশাসন একাদশ ও পার্বত্য পরিষদ একাদশের মধ্যেপ্রীতি ফুটবল ম্যাচ। বুধবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী সমগ্র উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের ট্র্যাক্টর বিতরণ করেন পার্বত্য পরিষদের সিইএম দেবোলাল গারলোসা। তাছাড়া স্বাধীনতাদিবসের অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বীরভদ্র হাগজার, পার্বত্য পরিষদের চেয়ারপার্সন রানু লাংথাসা, জেলাশাসক অমিতাভ রাজখোয়া, পুলিশ সুপার প্রশান্ত শইকিয়া, ৪৩ আসামরাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার, বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার-সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের আধিকারিক-কর্মচারী।

এদিকে মহকুমা সদর মাইবাঙে দিসরু কালচারাল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহকুমাশাসক এনকে দেবনাথ এবং হারাঙ্গাজাও খেলার মাঠে পতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য পরিষদেরঅধীনস্থ পশু চিকিৎসা ও পশুপালন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইএম আমেন্দু হোজাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *