নয়াদিল্লি, ২৮ জুলাই ৷৷ আগামীবছর দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন৷ ২০১৯ এর লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে সব কটি বিজেপি বিরোধী দলগুলো একত্র হয়ে কোমর বেঁধে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছে৷ গত কয়েকমাস ধরে বিজেপি বিরোধী দলগুলো যেভাবে সক্রিয়তা দেখিয়ে ১০ নং জনপথ এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে শীঘ্রই ঘোষণা হবে এই জোটের পোষাকী নাম৷ যদিও এখন ফেডারেল ফ্রন্ট নামে এক অদৃশ্য জোট নিয়ে যেভাবে দলগুলো মেঘ গর্জন করলেও জোটের নেতা বা নেত্রী মনোনীত করতে যে ঘাম ছুটছে ফেডারেল ফ্রন্ট এর অগ্রণী নেতা নেত্রীদের, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ তাদের মতে দেশের বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক নেতা নেত্রীরা খুব ভালভাবে জানেন যে নিজের রাজ্যে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গেল জাতীয় রাজনীতিতে সরকার বিরোধী জোট গড়তে পারলে, নিজেদের রাজ্যে কিছুটা হলেও টিকে থাকতে পারবে৷ পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, তেলেঙ্গনা, পঞ্জাব ও রাজধানী দিল্লির ক্ষমতাসীন দলগুলোর পাশাপাশি ওই রাজ্যের আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস৷ আর কংগ্রেস ও জানে, এই মুহূর্তে দিল্লির মসনদ দখল করতে গেলে দেশের বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোকে এক ছাদের নিচে আনার প্রয়োজনীতা৷ কিন্তু প্রশ্ণ, কে হবেন এই জোটের মুখ৷ এই ফেডারেল ফ্রন্ট এর বড় শরিক কংগ্রেসসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সামনের সারিতে রাখতে চাইলে বাধ সাধতে পাড়েন মায়াবতী অখিলেশ৷ আবার তেলেঙ্গনা ফেডারেল ফ্রন্ট নয়, কংগ্রেসহীন তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন আবেদন জানাতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক সেরেছেন৷ সবার মন জয় করে ফ্রন্টের মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তৃণমূল নেত্রীর বার বার রাজধানীর ১০ নং জনপথ বাড়িতে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা৷
এদিকে আগামীবছরের লোকসভা ভোটের আগে এই ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রীকেই অগ্রণী ভূমিকায় রাখতে বিভিন্ন দলের নেতা নেত্রীরা আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করছে৷ শুক্রবার কলকাতায় এসে জোট প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাবগুলি দিয়েছেন সে বিষয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ওমর আব্দুল্লা বলেন, কতটা ভাল ভাবে আঞ্চলিক বিরোধী দলগুলির বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ নির্র্বচনে লড়াই করতে পারে সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি৷ বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সোনিয়া গান্ধী উদ্যোগ নিয়েছে৷ সামনেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে৷ আশা করব তার আগে বৃহদ ঐক্য গড়ে উঠবে৷ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ওমর আব্দুল্লা বলেন, শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্য শক্তিশালী কেন্দ্রের সরকার৷ কিন্তু তা কোনও ভাবে রাজ্যেকে দুর্বল করে নয়৷ এমন কোথায় বলা রয়েছে শক্তিশালী কেন্দ্রের জন্য দুর্বল রাজ্য দরকার৷ শক্তিশালী কেন্দ্র তখনই গড়ে উঠবে যখন শক্তিশালী রাজ্য গড়বে উঠবে৷
এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি পৌঁছেই ফেডারেল ফ্রন্ট নিয়ে তৎপর ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তিনি ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে৷ অন্ধ্রপ্রদেশ ভবনেই একযোগে বৈঠক করেন চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও দেখা করেন৷ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের স্বার্থে আঞ্চলিক দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আসার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা৷ সেই সময় প্রশ্ণ উঠেছিল বামেদের নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে৷ তবে আগামীতে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী সেই প্রশ্ণ তুলে আমাদের ফ্রন্ট ভাঙন না ধরানোর আর্জি জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচেন বাংলার ৪২টি আসনে ৪২টাই জয় করতে হবে বলে যে বার্তা দলের কর্মীদের দিয়েছেন, তা পূরণ না হলে যে তার স্বপ্ণ ভঙ্গ হবে, তা নেত্রী স্বয়ং জানেন বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের৷ তবে তৃণমূলের অন্দরমহলের ব্যাখ্যা, সামনের নির্বাচনের পর তৃণমূলই যে লোকসভায় তৃতীয় বৃহত্তম দল হতে চলেছে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ আর সেক্ষেত্রে ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হগয়ে উঠতে চান মমতাই৷
তবে প্রধানমন্ত্রীর আসনের দিকে তাকিয়ে আছেন বিজেপি বিরোধী অনেক আঞ্চলিক নেতারাই৷ উত্তরপ্রদেশের মায়াবতী বা অন্ধ্রের চন্দ্রবাবুর মতো তাদের অনেকেই দেশের সর্বোচ্চ পদে বসতে চান৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখা, ভোটের এত আগে থেকে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধর এখন থেকেই ফেডেরাল ফ্রন্টের ভেতরে বিরোধ ঘটাতে চান না মমতা৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওমর নিজেও বলেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয় পেয়ে রয়েছে৷ এখন বিজেপিকে হটানোই পাখির চোখ তাদের৷ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে এক হয়ে লড়তে হবে৷ ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠন নিয়েও মমতার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর৷
তবে বিরোধীদের কোনও জোটকেই পাত্তা দিতে নারাজ বিজেপি৷ শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় প্রধানমন্ত্রী দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে কোনও জোটই দাঁড়াতে পারবে না৷ কিছু লোক যারা জনগনের ভোট পায়নি তাদের বেপরোয়া মনোভাবের প্রতীক হচ্ছে এই মহাজোট৷ ঘৃণার মাধ্যমে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, কংগ্রেসকে নিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির মহাজোট প্রসঙ্গে আলোচনা করতে শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লা৷ অন্যদিকে কংগ্রেস সূত্রের খবর মায়াবতী বা মমতার মধ্যে কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে আপত্তি নেই তাদের৷ তবে কংগ্রেসের শেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নেতা নেত্রীরা দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীকেই ফ্রন্টের মুখ করার পক্ষে জোর সওয়াল তোলেন৷ তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের এই ঐক্যবদ্ধ ভাবকে কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং৷