BRAKING NEWS

দিল্লি বুরারি কাণ্ডে নয়া মোড়, তন্ত্র সাধনার যোগ দেখছে পুলিশ

নয়াদিল্লি, ২ জুলাই (হি.স.) : দিল্লি বুরারি কাণ্ডে নয়া মোড়। বাড়ির ভেতর থেকে পাওয়া হাতে লেখা কয়েকটি কাগজ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। আর তাতে হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদে নেমে নতুন দিশা খুঁজে পায়েছে তদন্তকারী আধিকারিকেরা। উদ্ধার হওয়া কাগজগুলির থেকে তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানতে পেরেছে গোটা পরিবারটি নিয়মিত তন্ত্র সাধনা করতো। এরপরেই প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান তন্ত্র সাধনার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে পরিবারটি।
হাতে লেখা কাগজগুলির মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটি লিপিবন্ধ করা হয়েছে। আত্মহত্যার সময় বাড়িজুড়ে হাল্কা আলো জ্বালাতে হবে। আত্মহননের জন্য দড়ি, শাড়ি, ওড়না ব্যবহার করতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়ে ছিল। আত্মহননের এক সপ্তাহ আগে থেকে কঠোর ব্রত ও নিয়মানুবর্তিতা পালন করতে হবে। কোনও আত্মা যদি ভর করে তবে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
দিল্লির ২৪ সন্ত নগর, বুরারিতে দুইতলা বাড়িটির থেকে যেখানে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে সেই বাড়িটির বাইরের দেওয়ালে ১১টি পাইপ বাইরের দিকে মুখ করে রাখা হয়েছে। এই পাইপের ৪টের মুখ সোজা থাকলেও বাকি ৭টির মুখ নিচে দিকে করে রাখা হয়েছে। যদিও মৃতদের পরিবারের দাবি পরিবারটি ধার্মিক হলেও কুসংস্কারচ্ছন্ন ছিল না।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এস টেন্ডন জানিয়েছেন, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে পরিবারটি তন্ত্র সাধনার যুক্ত ছিল। মুক্তি পেতে তারা এই পথ অবলম্বন করেছে। এর পেছনে নিশ্চই কোনও তান্ত্রিক রয়েছে। পরিবারের বড়দেরকে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রভাবিত করা হয়েছে। এবং পরিবারের বাকিরা তা অনুসরণ করেছে। কাগজে লেখা চিঠিগুলির সঙ্গে আত্মহননের প্রক্রিয়ার অনেক মিল রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত ১১ জনের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্তে শেষ হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর ময়নাতদন্তে গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যু হয়েছে ওই ৬ জনের বলে দাবি করা হয়েছে। ধস্তাধস্তি কোনও চিহ্ন নেই। নিহত ১১ জনের চক্ষুদান করা হবে বলে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
নিহতদের পরিবারবর্গের তরফ থেকে নবনীত বাত্রা জানিয়েছেন তারদের চোখগুলিকে দান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে করে ২২ জন অন্ধ মানুষ আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। গতকালই আমরা সম্মতি পাঠিয়ে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, রবিবার উত্তর দিল্লির বুরারির সন্ত নগরে একটি বাড়ির বন্ধ ঘর থেকে ১১টি মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রবিবার সকাল ৭টা ৩০মিনিট নাগাদ দরজা ভেঙে মৃতদেহগুলিকে উদ্ধার করে দিল্লি পুলিশ। গোটা এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়। মৃতদেহগুলিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি। ২৪ সন্ত নগর, বুরারিতে দুইতলা বাড়িতে থাকত পরিবারটি। ওই এলাকাতেই একটি মুদির দোকান ছিল পরিবারটির। পাশাপাশি কাঠের আসবাব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল পরিবার। ঝুলন্ত অবস্থা মৃতদেহগুলিকে প্রতিবেশীরা দেখতে পায়। তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
তন্ত্র সাধনার যে তত্ব খাড়া করা হচ্ছে তা নস্যাৎ করে দিয়েছে মৃতদের আত্মীয়েরা। আত্মীয়েদের তরফ থেকে সুজাতা জানিয়েছেন, তন্ত্র সাধনার যে তত্ব তুলে ধরা হয়েছে তা একেবারেই বাজে কথা। কেউ তাদের হত্যা করেছে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্য আনন্দে ছিল। তাদের স্বভাব ছিল শান্ত। তারা কোনও বাবাতে বিশ্বাসী ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *