
হঠাৎই এই মামলার দু’ই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী রাগা এবং মোনিকা বিদেশে চলে যাওয়ায় বিপদে পরেছেন সিবিআই অফিসাররা । তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ম্যাথু দাবি করেছিলে, তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংএই স্টিং অপারেশনের টাকা জুগিয়েছিলেন । আর গোটা বিষয়টির সাক্ষী কেডি সিং-এর সেক্রেটারি মোনিকা এবং বিশ্বস্ত কর্মী রাগা । সিবিআইয়ের কাছে কেডি অবধি পৌঁছনোর এই দুই সূত্র হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় আরও সমস্যায় তদন্তকারীরা ।
আবার নারদ কাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ নিয়েও সমস্যায় সিবিআই । তদন্তকারীরা নিশ্চিত, চণ্ডীগড়ের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরটারিতে পরীক্ষা হওয়া স্টিং অপারেশনের ফুটেজের একটা বড় অংশই সম্পাদিত । ফলে এর ম্যাথু স্যামুয়েলের জমা দেওয়া ফুটেজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । আর এই ফুটেজের উপর ভিত্তি করেই এখন পর্যন্ত গোটা তদন্ত করেছে সিবিআই। নারদ তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে এই মুহূর্তে ম্যাথুকে জেরা করে এখন পর্যন্ত আসল ফুটেজের কোনও হদিশ করতে পারেননি সিবিআিইয়ের তদন্তকারীরা । ম্যাথুর দাবি, প্রয়োজনীয় অংশ ছাড়া বাকি ফুটেজ তিনি ডিলিট করে দিয়েছেন । কিন্তু তদন্তকারীদের সন্দেহ, আসল ফুটেজ রয়েছে অন্য কোথাও। আর এই ভাবেই কার্যত থমকে গেছে তদন্ত । গত ১৭ মে এমনই রিপোর্ট দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরে পাঠান তদন্তকারীরা ।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে নারদ নিউজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ম্যাথু স্যামুয়েলের আই ফোন, পেন ড্রাইভ এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে চণ্ডীগড়ের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরটারিতে ফুটেজের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয় । ২০১৬ সালের ৫ অগাস্ট সেই রিপোর্ট জমা পড়ে আদালতে । সেখানে বলা হয়, ম্যাথুর কাছ থেকে পাওয়া ৪২৮ মিনিটের ফুটেজে কোনও বিকৃতি নেই । তার উপর ভিত্তি করেই হাইকোর্টের নির্দেশে ১৬ এপ্রিল ২০১৭ এফআইআর নথিভুক্ত করে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখা । কিন্তু, ২০১৭-র সেপ্টেম্বর মাসে ম্যাথুকে সিবিআই তদন্তকারীরা তলব করেন স্টিং অপারেশন ঠিক কীভাবে করা হয়েছিল পুনর্গঠন করে দেখাতে । সেই সময় দেখা যায়, নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথোপথনের অংশের আগের এবং পরের বেশ কিছুটা সময়ের যে ভিডিয়ো থাকে, ম্যাথুর জমা দেওয়া ভিডিয়োতে অনেক ক্ষেত্রেই তা নেই । অর্থাৎ ম্যাথু যে ক্লিপ জমা দিয়েছেন তা অনেক ক্ষেত্রে সম্পাদিত । তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই তদন্তে বাকি ভিডিয়ো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ ফুটেজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেই মামলা গোড়াতেই দুর্বল হয়ে যাবে । জেরার মুখে ম্যাথু ৭২ টি ভিডিয়ো ক্লিপে থাকা ৪২৮ মিনিটের ফুটেজের বাইরে আরও ৮ টি ক্লিপে ২৮ মিনিটের ফুটেজ জমা দেন তদন্তকারীদের । সেই ফুটেজে কারওর ছবি নেই, কিন্ত কথাবার্তার আওয়াজ রয়েছে । সেই গলার আওয়াজ কার ? তা জানতে হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে অভিযুক্তদের ভয়েস স্যাম্পল সংগ্রহ করা শুরু করেন তদন্তকারীরা । কিন্তু মুকুল রায়, সুলতান আহমেদ, ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ এখনও ভয়েস স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য রাজি হননি । ওই ফুটেজে কার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে তা নিয়ে ম্যাথুর বয়ানেও আদৌ সন্তুষ্ট নন তদন্তকারীরা ।
ম্যাথুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার দাবি, তিনি আই ফোন থেকে সমস্ত ফুটেজ ল্যাপটপে ট্রান্সফার করতেন । প্রয়োজনীয় অংশ বাদে বাকিটা তিনি মুছে দিতেন । তাঁর এই বয়ান আদৌ বিশ্বাস যোগ্য মনে হচ্ছে না তদন্তকারীদের । তদন্তকারীদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশে সিবিআই যখন ম্যাথুর কাছ থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল সেই সময়তেই আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল । সেই অসতর্কতা বা গোড়ায় গলদের জন্য পুরো তদন্তই ব্যাহত হচ্ছে । কারণ ইতিমধ্যেই এই মামলার দুই অভিযুক্ত ইকবাল আহমেদ এবং অপরূপা পোদ্দার ফুটেজের সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ।
এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে অ্যাপল কর্তৃপক্ষর সাহায্য চেয়েছেন তদন্তকারীরা । বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে অ্যাপল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যাতে আই ফোন থেকে মূল ফুটেজ সংগ্রহ করা যায় । অ্যাপলের কাছ থেকে এখনও কোনও উত্তর পায় নি সিবিআই । অ্যাপল ওই ফুটেজ না দিলে, এটাও প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে ম্যাথুর জমা দেওয়া আই ফোনেই গোটা স্টিং অপারেশন শুট করা হয়েছিল। সিবিআই-এর কাছে এমন কোনও তথ্য নেই যাতে প্রমাণ করা যায় যে ল্যাপটপ এবং পেন ড্রাইভের ফুটেজ কখনও পরিবর্তন করা হয়নি ।