বিধানসভায় স্মৃতিচারণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মার্চ৷৷ দ্বাদশ ত্রিপুরা বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আজ ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল দীনেশ নন্দন সহায়ের প্রয়াণে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে৷ তাছাড়াও বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য নরেশ চন্দ্র রায়, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সাংসদ খগেন দাশ, বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য কালীকুমার দেববর্মা, বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য রমেন্দ্র নারায়ণ দেববর্মা, প্রাক্তন মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া ও বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য তথা মন্ত্রী রতনলাল ঘোষের প্রয়াণে স্মৃতিচারণ করা হয়৷ ত্রিপুরা বিধানসভা তাঁদের প্রয়াণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং তাঁদের শোক সন্তপ্ত পরিবার- পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে৷ বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতে এদিন অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাস এক এক করে স্মৃতিচারণগুলি সভায় পাঠ করেন৷ স্মৃতিচারণগুলি পাঠের শেষে বিধানসভার সদস্য-সদস্যাগণ প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের স্মৃতির প্রতি দু’মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷

সভায় স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য নরেশ চন্দ্র রায়ের প্রয়াণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য, বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা নরেশ চন্দ্র রায় দীর্ঘ রোগভোগের পর নতুননগর ছিনাইহানিস্থিত তাঁর নিজ বাসভবনে গত ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সহ দুই পুত্র ও দুই কন্যা রেখে গেছেন৷ প্রয়াত প্রাক্তন সদস্য মাননীয় নরেশ চন্দ্র রায় মহোদয় ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত কমলাসাগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন৷ সৎ এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে তিনি সকল অংশের জনগণের নিকট প্রিয় ছিলেন৷

প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সাংসদ খগেন দাসের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সাংসদ খদেন দাশ গত ২১ শে জানুয়ারী, ২০১৮ রবিবার ভোর ৩টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের ত্রিপুরা ভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর৷ তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যা রেখে গেছেন৷

প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সাংসদ খদেন দাশ ১৯৩৭ সালের ৪ঠা সেপ্ঢেম্বর বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন৷ তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর কিছুদিন রাণীরবাজার বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ তারপর ১৯৬৮ সালে সি পি আই (এম)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে যান ও ধীরে ধীরে তিনি যুক্ত হন গণতান্ত্রিক ও কৃষক আন্দোলনে৷ ১৯৭৮ এবং ১৯৮৩ সালে দুবার তিনি ১০(দশ) মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ত্রিপুরা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন৷ ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য এবং ২০০২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি লোকসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷

ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল দীনেশ নন্দন সহায়ের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল দীনেশ নন্দন সহায় গত ২৯ শে জানুয়ারী, ২০১৮ গভীর রাতে বিহারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর৷ তিনি স্ত্রী সহ এক পুত্র এবং দুই কন্যা রেখে গেছেন৷ প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্যপাল মহোদয় ২রা ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৬ সালে বিহারের মাধেপুরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা ছিলেন প্রয়াত দেবানন্দন সহায় এবং মাতা ছিলেন প্রয়াত কিশোরী দেবী৷ তিনি ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রি নিয়েH. D. College of Arrah- এ লেকচারার হিসেবে যোগ দেন৷ পরে ১৯৬০ সালে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে কর্মজীবন শুরু করেন৷ তিনি ছত্তিশগড় রাজ্যের প্রথম রাজ্যপাল হিসেবে মনোনীত হন৷ তিনি ২রা জুন ২০০৩ সালে ত্রিপুরার দশম রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন৷ ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রয়াত সহায় ত্রিপুরার রাজ্যপাল ছিলেন৷

বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য কালীকুমার দেববর্মার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য তথা প্রবীণ সি পি আই(এম) এবং ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের নেতা কালীকুমার দেববর্মা দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগ ভোগের পর গত ৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ সন্ধ্যায় জি বি পন্ত হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়েছিলো ৮০বছর৷ প্রয়াত বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য কালীকুমার দেববর্মা তেলিয়ামুড়ার দুস্কি এলাকায় উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৬২ সালে পার্টি সভ্যপদ পান৷ তিনি ছিলেন পার্টির অবিভক্ত খোয়াই মহকুমা কমিটির সদস্য এবং গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য৷

১৯৮৩ সালে তিনি খোয়াই মহকুমার তপঃ উপজাতি সংরক্ষিত কৃষ্ণপুর কেন্দ্র থেকে সি পি আই (এম) প্রার্থী হিসেবে ত্রিপুরা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন৷ তিনি বামপন্থী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শক্তিশালী করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং উপজাতি ও অনুপজাতির সম্প্রীতি রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷

বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য রমেন্দ্র নারায়ণ দেববর্মার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য রমেন্দ্র নারায়ণ দেববর্মা মারণব্যাধি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ ইং ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিট নাগাদ আগরতলা সরকারী মেডিকেল কলেজ এবং জি বি পন্থ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর৷ তিনি স্ত্রী সহ দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন৷ প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক রমেন্দ্র নারায়ণ দেববর্মা ১৯৫০ সালের ২৮ শে নভেম্বর রংমালা এডিসি ভিলেজের হেরমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি সুকল কলেজে পড়ার সময় ছাত্র যুব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন৷ পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে উন্নীত হয়ে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে এসেছেন৷ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি যোগ দেন সি পি আই (এম)-এ৷ ২০১৩ সালে ১৯ চড়িলাম উপজাতি সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সি পি আই (এম) প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে বিধানসভার বাইরে ভেতরে জাতি-উপজাতির মৈত্রী রক্ষায় আপোষহীন লড়াই করে গেছেন৷ ২০১৮ সালেও বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সি পি আই (এম) প্রার্থী ছিলেন৷ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই তাঁর  জীবনাবসান ঘটে৷

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মৎস্য, সমবায় ও অগ্ণিনির্বাপক দপ্তরের মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া গত ২রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ নয়া দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন৷

প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া ১৯৫৬ সালের ১লা জানুয়ারী ডেলিয়ামুড়ার কৃষ্ণপুর বিধানসভা এলাকার বাইশ ঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ ছাত্র জীবনে টি ইউ জে এস এর ছাত্র সংগঠন টি এস এফ -এর প্রথম সারির কর্মী ছিলেন৷ নীতিগত কারণে ১৯৮৩ সালে গণমুক্তি পরিষদে যোগ দেন৷ ওই বছরই গণমুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন এবং জাতি-উপজাতি মেত্রী ও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি সি পি আই (এম) এর সভ্যপদ গ্রহণ করেন৷ ১৯৮৫ সালে তিনি ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন৷  ১৯৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৮, ২০০৩, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পর পর ছয়বার কৃষ্ণপুর তপশীলি উপজাতি সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বামফ্রন্ট মনোনীত সি পি আই (এম)-এর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন৷ ২০৩ সালে তিনি প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হন এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন৷

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রতনলাল ঘোষের প্রয়াণে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে স্মৃতিচারণায় অধ্যক্ষ বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী রতনলাল ঘোষ গত ২০ শে মার্চ, ২০১৮ জি বি পন্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর৷ দীর্ঘদিন ধরেই তিনি লিভার সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত ছিলেন৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা এক অগণিত গুণমুদ্ধদের রেখে গেছেন৷ প্রয়াত মন্ত্রী রতনলাল ঘোষ ১৯৭২ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি অবিভক্ত খয়েরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৮ সালে খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হন৷ তিনি কংগ্রেস-টি ইউ জে এস জোট সরকারের শেষ দিকে ১৯৯২ সালের মে মাসে মন্ত্রী হন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *