BRAKING NEWS

জয়ের হাসি কার, ভোটের হারে গোলকধাঁধা, গতবারের হারকে ছুঁইছুঁই, এবার ৫৯ আসনে ভোট পড়ল ৮৯.৯৬ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ ফেব্রুয়ারি৷৷ রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভোট পড়েছে৷ অবশ্য এই ঐতিহ্য এরাজ্যের বরাবরের৷ কিন্তু, সবচেয়ে মজার

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিইও শ্রীরাম তরনীকান্তি বক্তব্য রাখেন৷

বিষয় হল, শেষ হাসি কোন রাজনৈতিক দল হাঁসবে তা অনুমান করা যাচ্ছে না৷ পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন, বিগত নির্বাচনের রেকর্ড ঘাটলে এবারের ভোটের হারে গোলকধাঁধায় পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এবার ৫৯ আসনে ভোটের হার ৮৯.৯৬ শতাংশ৷ পোস্টাল ব্যালট ছাড়াই এই হিসেব৷ চড়িলাম এবং পোস্টাল ব্যালট যোগ হলে স্বাভাবিকভাবেই ভোটের হার কিছু বাড়বে৷ ফলে, এবারও যখন ভোটের হারে নববই ছুইছুই অবস্থা, ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণ হওয়াই স্বাভাবিক৷ কারণ, গত দুটি নির্বাচনে ভোটের হার  ছিল ৯১.২২ এবং ৯১.৮২ শতাংশ৷ ক্ষমতায় ফিরেছে শাসক দল৷ কিন্তু, এবার কে ক্ষমতা দখল নেবে, প্রশ্ণ যখন উঠেছে, তখন জয়ের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী সিপিএম ও বিজেপি উভয় দল৷

সোমবার রাতে পশ্চিম জেলার জেলা শাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরনীকান্তি জানান, রবিবার ভোটের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর  ১ লক্ষ ৭১ হাজার ২৫৯টি টোকেন বিলি করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, অনেক রাত পর্যন্ত ভোট হয়েছে৷ সোনামুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বুথে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলেছে৷ তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ৫৯টি বিধানসভা আসনে মোট ভোট পড়েছে ৮৯.৯৬ শতাংশ৷  ভোট দিয়েছেন ২২ লক্ষ ৭৪ হাজার ১৪৩ জন৷ তাঁর কথায়, এবারও পুরুষদের তুলনায় বেশি ভোট দিয়েছেন মহিলারা৷ এবার মহিলা ভোটার হলেন ১১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৬১, শতাংশের হিসেবে ৯১.৪১৷ এবার পুরুষ ভোটার হলেন ১১ লক্ষ ৩০ হাজার ৫৮২, শতাংশের হিসেবে ৮৮.৪৬৷ জেলাস্তরে খোয়াই জেলায় সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এবং সবচেয়ে কম পড়েছে উত্তর জেলায়৷ রবিবার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক ভোটের প্রাথমিক হার ৭৮৫৬ শতাংশ বলেছিলেন বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংগৃহিত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে, আজ তিনি সেকথা স্বীকার করেছেন৷

এদিন তিনি জানান, পশ্চিম জেলায় ৮৮.৪৬ শতাংশ, সিপাহীজলা জেলায় ৯০.৪১ শতাংশ, দক্ষিণ জেলায় ৯১.৭২ শতাংশ, ধলাই জেলায় ৮৯.৪৯ শতাংশ, ঊনকোটি জেলায় ৮৮.৪৯ শতাংশ, উত্তর জেলায় ৮৭.২৫ শতাংশ, খোয়াই জেলায় ৯২.১৯ শতাংশ এবং গোমতি জেলায় ৯০.৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে৷

ভোটের হারে সারা দেশেই রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এই রাজ্য৷ এবারের ভোটেও সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে৷ কিন্তু, বিগত নির্বাচনগুলির প্রায় কাছাকাছি এবারের নির্বাচনের হার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ণ উঠেছে শেষ হাসি কে হাসবে৷ ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ভোটের হার ক্রমশ কমেছে ঠিকই৷ কিন্তু, ২০০৮ এবং ২০১৩ বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রায় কাছাকাছি রয়েছে৷ ১৯৯৩ সালে ভোটের হার ছিল ৮১.১৮ শতাংশ৷ কিন্ত, ১৯৯৮ সালে তা কমে ভোটের হার হয়েছিল ৮০.৮৪ শতাংশ, যা ২০০৩ সালে আরো কমে ভোটের হার হয়েছিল ৭৮.৭১ শতাংশ৷ ১৯৯৩ থেকে ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনগুলির মধ্যে ২০০৩ সালেই ভোটের হার সবচেয়ে কম ছিল৷ কিন্তু, ২০০৮ সাল থেকে ভোটের হার একলাফে অনেকটা বেড়ে গেছে৷ ২০০৮ সালে ভোটের হার ছিল ৯১.২২ শতাংশ যা ২০০৩ সালের তুলনায় ১২.৫১ শতাংশ বেশি৷ একইভাবে ২০১৩ বিধানসভা নির্বাচনেও ভোটের ছিল ৯১.৮২ শতাংশ৷ এই ধারাবাহিকতা এবারেও বজায় রয়েছে৷ ফলে, এরাজ্যে মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দিয়ে থাকেন তা প্রচলিত হয়ে গিয়েছে৷

১৯৯৩ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় বামফ্রন্ট৷ সেবার রাষ্ট্রপতি শাসন বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল তা ফ্রন্টের নেতারাও স্বীকার করেন৷ ফলে, যদি ১৯৯৮ সাল থেকে নির্বাচনের বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, যে ভোটের হার যত কমেছে বামেদের ততই কঠিন মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ ১৯৯৮ সালে মাত্র ৬৭০৬ ভোটের ব্যবধানে বামফ্রন্ট ১৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷ ২০০৩ সালে ভোটের হার আরও কমেছে৷ সেবারও প্রতিযোগিতা কঠিন ছিল৷ কিন্তু, ২০০৮ সাল থেকে ভোটের হার যত বেড়েছে, বামেরা ততই অনায়াসে ক্ষমতায় ফিরেছে৷ শুধু তাই নয়, আসনও তাদের বেড়েছে৷

এবারও ভোটের হার নববই ছুইছুই৷ তাহলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, বামেরাই আবার ক্ষমতায় ফিরছে৷ কিন্তু, এবারের নির্বাচন অন্য সব নির্বাচন থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রমী৷ কারণ, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল সংশয় প্রকাশ করেনি৷ এমনকি ইভিএম বিভ্রাট নিয়েও শাসক দল সিপিএম এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি খুব একটা অসন্তুষ্ট হয়নি৷ তাদের নরম অবস্থানে নির্বাচন কমিশন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে, কারণ ৩০৬টি ভোট যন্ত্রাংশ ত্রুটির জন্য বদল সত্বেও নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ণ তুলে কমিশনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি৷ আজ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক জানিয়েছেন, ২০৩টি ভিভিপ্যাট এবং ৭৮টি ব্যালট ইউনিট ও ৭৯টি কন্ট্রোল ইউনিট বদল করা হয়েছে৷ এবিষয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি আজ বলেছেন, ইভিএম কিংবা ভিভিপ্যাটে গোলযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের গাফিলতি বলা যেতে পারে না৷ প্রযুক্তিগত কারণেই ত্রুটি হয়েছে এবং তা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ বরং তিনি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷

প্রতিবার ভোটের পর ভূয়ো ভোটারের রব উঠত বিরোধীদের পক্ষ থেকে৷ শাসক দল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, এমনও অভিযোগ বিরোধীরা তুলতেন৷ ভোটে কারচুপি সহ নির্বাচনে বামেদের জয়ের ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ আনতেন বিরোধীরা৷ কিন্তু, এবারই প্রথম প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমন কোন অভিযোগ আনা হয়নি৷ বরং সুষ্ঠভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব সিপিএমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, সমস্ত ভোট কর্মী, পুলিশ কর্মী, আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে ভোট পরিচালনা করেছে৷ তাই তিনি সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ সাথে তিনি সরকারের গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷ তাঁর দাবি, জয় সম্পর্কে আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত৷ আগামী সরকার বিজেপি গড়বেই৷

এদিকে, শাসক দল সিপিএমও জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত বলে দাবি করছে৷ অবশ্য তাদের এই দাবির পেছনে যুক্তিও রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছে৷ তাঁদের যুক্তি, প্রতিবার ভোট বেড়েছে বামেরা ক্ষমতায় ফিরেছে৷ এবারও গত নির্বাচনের কাছাকাছি ভোট পড়েছে৷ তাই বামফ্রন্টের জয় নিশ্চিত বলে তাঁরা মনে করছে৷

কিন্তু, জয় পরাজয়ের সমস্ত হিসাব বদলে দেওয়ার অনেক কারণও রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ প্রতিবার ভূয়ো ভোটার নিয়ে কথা হলেও, এবার তার সম্ভাবনা যৎসামান্য বলে দাবি নির্বাচন কমিশনের৷ কারণ, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার খসরা ভোটার তালিকা থেকে ৩৮ হাজারের অধিক ভোটারের নাম বাদ দিয়েছিলেন৷ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বিজেপি’র পক্ষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ভোটারের আরো প্রায় ২-৩ শতাংশ ভোটারের নাম এএসডি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে, এবার ভূয়ো ভোটার নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই বিরোধীদের, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ কিন্তু, ভোট বিভাজনের বিষয়টি কোনভাবেই খাঁটো করে দেখছে না সিপিএম এবং বিজেপিও৷ সিপিএমের ধারণা, ভোট বিভাজনে তারাই লাভবান হবে এবং বিজেপি ভাবছে ভোট বিভাজন কোন প্রভাবই ফেলতে পারবে না৷ বিজেপি সূত্রের দাবি, ভোটের হার কম হলে ভোট বিভাজন প্রভাব ফেলতে পারত৷ কিন্তু, এবার ভোটের হার গত নির্বাচনের কাছাকাছি হওয়ায় সেই সম্ভাবনা এখন আর রইল না৷

ফলে, জয়-পরাজয় নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের গোলকধাধায় পড়ার মতোই অবস্থা হয়েছে৷ এর থেকে বেরনো সম্ভব হবে ৩ মার্চ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *